তুরস্কের নির্বাচনের ফলাফলে সাদাত পার্টির আসন না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশি গবেষকদের কাছ থেকে। এ নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে নিরপেক্ষ একটি বিশ্লেষণের অনুরোধ করেছেন অনেকেই। সে কারণেই এ লেখা।
সাদাত পার্টির ভোট বেড়েছে দ্বিগুণ
২০১৫ সালের ১ নভেম্বরের নির্বাচনের তুলনায় ২৪ জুনের নির্বাচনে সাদাত পার্টির ভোট সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ২০১৫ সালের ১ নভেম্বরে সংসদ নির্বাচনে সাদাত পার্টি ০.৭% ভোট পেয়েছিল। ভোট সংখ্যা ছিল : ৩ লাখ ২৬ হাজার ৫০টি। গত ২৪ জুনের নির্বাচনে সাদাত পার্টি পেয়েছে ১.৩ শতাংশ ভোট। প্রাপ্তভোট ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩১টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাদাত পার্টি ভোট বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। (দেখুন : ইয়েনি শাফাক পত্রিকার নির্বাচনী তথ্যসমগ্র)।
সাদাত পার্টি কেন আসন পেল না?
তুরস্কের সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু সমীকরণ রয়েছে। এ সমীকরণ না জানলে সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর অর্জনের মূল্যায়ন করা কঠিন।
১. তুরস্কের সংসদ নির্বাচনে কোনো দল মোট ভোটের সর্বনিম্ন ১০% না পেলে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। এ কারণে ২০০২ সাল থেকে সংসদে সাদাত পার্টির অংশগ্রহণ নেই।
২. ২৪ জুন জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করা দলগুলোর জন্য সর্বনিম্ন ১০% ভোটের শর্ত ছিল না। ফলে সাদাত পার্টি থেকে কয়েকজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু জোটবদ্ধ হলেও রাজনৈতিক দলগুলো পৃথক পৃথক প্রার্থী দেয়ায় সমীকরণ বদলে যায়।
৩. ২৪ জুনের নির্বাচনে ৫টি দল সর্বনিম্ন ১০% ভোটের কোটা পূরণ করায় সব প্রদেশেই এ ৫টি দলের প্রার্থীরা ভোট বণ্টনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছেন। সংসদ সদস্যদের জয়ের ক্ষেত্রে দেশব্যাপী মোট ভোটে এগিয়ে থাকা দলের প্রার্থী, এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দলের প্রার্থী……. এভাবে নিচের দিকে নামা হয়। তা ছাড়া জোটের হিসেবের ক্ষেত্রে প্রথমে জোটের প্রাপ্তভোট অনুযায়ী প্রদেশগুলোতে বিজয়ীদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এরপর প্রদেশগুলোতে জোটবদ্ধ দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট অনুয়ায়ী বিজয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়।
ফলে দেখা গেছে, সাদাত পার্টি কোনো প্রদেশেই সংসদ সদস্যদের জয়ী করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় সংসদ সদস্য পায়নি।
সাদাত পার্টির কেউ কি সংসদে যেতে পারছে না?
দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থীকে জয়ী করাতে না পারলেও সাদাত পার্টির পক্ষ থেকে সিএইচপির ব্যানারে ৩ জন সদস্য জয় পেয়েছেন। এ তিন সংসদ সদস্য দলীয় ব্যানার ব্যবহার করতে পারবেন কি-না তা বলা মুশকিল।
সাদাত পার্টি কেন এ কে পার্টির সঙ্গে জোট করলো না সে সম্পর্কে বিশ্লেষকদের বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে। তবে তুরস্কে ইসলামী রাজনীতির প্রবর্তক নাজিমুদ্দিন এরবাকানের দল ভেঙে বেরিয়ে আসা রজব তাইয়্যেব এরদোগান ও আবদুল্লাহ গুলের নেতৃত্বে গঠিত এ কে পার্টির সঙ্গে প্রথম থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে আসছে সাদাত পার্টি।
লেখক : তুরস্ক প্রবাসী পিএইচডি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
No comments:
Post a Comment