এরদোয়ান : দ্যা চেঞ্জ মেকার লিখতে গিয়ে বেশ কয়েকবারই একে পার্টির হেড কোযার্টারে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে কিংবা প্রয়োজন হয়েছে। নয় তলা বিশিষ্ট এই কার্যালয়ের নবম তলায় দলীয় চেয়ারম্যানের অফিস। নিচ থেকে উপরে উঠতে চারটি লিফট রয়েছে, যেগুলো আটতলা পর্যন্ত যায়। স্বভাবতই নয় তলায় উঠতে আলাদা সিড়ি/লিফট ব্যবহার করতে হয় এবং দরকার হয় স্পেশাল এপয়েন্টমেন্টের। বই লিখতে গিয়ে আটতলা পর্যন্তই উঠেছি। আটতলায় দলের সাংগঠনিক সভাপতি এবং সেক্রেটারী জেনারেলের অফিস। সাংগঠনিক সভাপতির সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম গত বইতে। সবমিলে নয়তলা নিয়ে রহস্যের কোন শেষ ছিলনা!!
সেদিন ছিল প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রধান উপদেষ্টার সাথে এপয়েন্টমেন্ট, উনাকে বই উপহার দেওয়ার জন্য। প্রধান উপদেষ্টার অফিসটি দলীয় চেয়ারম্যানের রুমের পাশেই। উনি আবার একজন একাডেমিশিয়ান এবং ইসলামী আন্দোলনগুলো উনার গবেষণার অন্যতম বিষয়। তাই উনার সাথে একাডেমিক কিছু আলোচনাও জমে ছিল। আমরা উনার সাথে দেখা করে বই তুলে দেওয়ার পর গল্প করছি এবং তুর্কি চায়ে চুমুক দিচ্ছি।
হঠাৎ প্রেসিডেন্ট উনাকে ডাকলেন। উনি দেখা করে ফিরে আসার পর আবারো আড্ডা শুরু হলো। বিদায় নিতে যাবো এমন সময় আবারো প্রেসিডেন্ট উনাকে ডাকলেন। এবার আমরা একটু সুযোগ নিতে চাইলাম। যদিও প্রথমে বলতে কিছুটা ইত:স্তত বোধ করছিলাম তারপরও বলেই ফেললাম, আমরা কি একটু সালাম দেওয়ার সুযোগ পাবো?
বলার পর নিজের কাছে আরো লজ্জিত হলাম। কারণ কোন প্রস্তুতি এমনকি চিন্তাও ছিলনা। ড্রেসআপও অফিসিয়াল না। উনি বললেন: "দেখি, উনাকে বলবো তোমাদের কথা। যদিও সিডিউল খুব ব্যস্ত।"
উনি গিয়ে আর ফিরছেন না। আমাদের আরেকটি এপয়েন্টমেন্ট ছিল, তাই উনার পিএসকে (প্রধান উপদেষ্টার) বলে বের হয়ে গেলাম। ষষ্ট তলায় আসার পর পিএস ফোন দিলো, আপনাদের ডাকছে। দৌড়িয়ে গেলাম, প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্টের দরজায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
উনি আমাদের নিয়ে উনার রুমে নিয়ে গেলেন। প্রেসিডেন্ট দরজার কাছে এসে আমাদের স্বাগতম জানালেন। তুরস্কের সংস্কৃতিতে স্বাগতম জানানো ও বিদায় দিতে দরজা পর্যন্ত আসার এই বিষয়টি আমাকে খুব অবাক করে। আপনি যেই হোন না কেন, আপনার পজিশন যাই হোক না কেন... তাদের মেহমান হিসেবে গেলে তারা আপনাকে দরজায় এসে স্বাগতম জানাবে এবং বিদায় দিবে।
আমরা সালাম দিলাম, প্রেসিডেন্টের হাতে চুমু খেতে গেলাম। উল্লেখ্য, তুরস্কে বয়োজেষ্ট ও সম্মানিত ব্যক্তিদের হাতে চুমু খাওয়া হয়। উনি হাত সরিয়ে নিলেন এবং আমাদেরকে বুকে জড়িয়ে কপালে চুমু খেলেন।
আমি পরিচয় দিলাম; হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশী, গাজী ইউনির্ভিসিটিতে পিএইচডি করছি আর আপনার জীবনী গ্রন্থের লেখক।
উনি হেসে বললেন: Yes, I Know (আমার মনে পড়েছে/ আমি জানি)।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সাধারণত ইংরেজী খুবই কমই বলেন। উনার মুখ থেকে ইংরেজী শুনে বেশ অবাকই হলাম।
এরপর আমাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলেন। পরিবারে কে কে আছে, কোথায় থাকি, ওয়াইফ কি করে, বাচ্চা কয়জন, কতবড় হইছে, একাডেমিক কি অবস্থা ইত্যাদি ইত্যাদি। বাচ্চা একটা শুনেই বললেন; "নো নো, হবে না। কমপক্ষে পাঁচটা নিতে হতে হবে।" আমি হেসে ইনশাআল্লাহ বললাম। উনি খুব সিরিয়াসভাবে বললেন: "শুধু ইনশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ বললেই হবে না। পদক্ষেপ নিতে হবে"। এভাবে সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন। উল্লেখ্য, আমাদের সাথে আরো কয়েকটি দেশের আন্তর্জাতিক ছাত্ররা ছিল। অবশেষে কিছুক্ষণ খোসগল্প করে বিদায় নেওয়ার পালা। উনি সবাইকে আবারো বুকে জড়িয়ে আদর করে বিদায় দিলেন।
সত্যিই স্বরণীয় মুহুর্তু। অনেকটা মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!! মাশাআল্লাহ। উনার মুখ থেকে বইয়ের ব্যাপারে "Yes I know" বাক্যটি আমার চিরকাল মনে থাকবে এবং আজীবন লেখালেখীর উৎসাহ হবে।
শেষ করছি লেখালেখি নিয়ে দুটি ঘোষণার মাধ্যমে;
১. আলহামদুলিল্লাহ, আমার দ্বিতীয় বই "আমার দেখা তুরস্ক (বিশ্ব ব্যবস্থার নতুন শক্তি তুর্কি জাতির ভেতর-বাহির)" বইমেলাতে আসছে ইনশাআল্লাহ। (পরবর্তী পোস্টে বইয়ের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখবো)।
২. এরদোয়ান : দ্যা চেঞ্জ মেকার বইয়ের পঞ্চম সংস্করণ বই মেলায় আসবে। লেখার পর প্রথমবারের মতো বর্ধিতরুপে আসছে এই সংস্করণটি। যাতে ২০১৮ সালের নির্বাচনসহ সমসাময়িক তুরস্কের আলোচিত কয়েকটি ঘটনা যোগ হবে।
No comments:
Post a Comment