জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিসংখ্যা (১৯৯১সাল) সোনার বাংলা পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে আমীর জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আজমকে প্রশ্ন করা হয়:
জামায়াত তার আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করেছে। পথহারা মুসলিম জাতিকে ইসলামের সুমহান লক্ষ্যপানে ধাবিত করাই জামায়াতে ইসলামীর বুনিয়াদি লক্ষ্য। খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শের আলোকে খেলাফত আলা মিনহাজিন্নাবুয়াত এই (নবীর তরীকা মোতাবেক খেলাফত) জামায়াত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জামায়াত সেই লক্ষ্যপানে কতদূর অগ্রসর হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
এর উত্তরে তিনি বলেন: আসল কথা হলো ইসলাম যে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এর দ্বারা রাজনীতি, অর্থনীতি তথা জীবনের সব সমস্যার সমাধান হতে পারে এ কনসেপ্ট মুসলিম সমাজ থেকে উবে গিয়েছিল।
বালাকোটের ময়দানে ইসলামী আন্দোলন ১৮৩১ সালে পরাজিত হবার পর সে আন্দোলন আর দানা বাধতে পারেনি। সাইয়েদ আহমদ শহীদের নেতৃত্বে সে আন্দোলন উপমহাদেশের উত্তর সীমান্ত প্রদেশ ও পাঞ্জাবের কিছু এলাকা নিয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করে। কিন্তু শিখ ও ইংরেজদের মিলিত ষড়যন্তের ফলে বালাকোটের ময়দানে পরাজয় ঘটে ইসলামের। এর ১০০ বছর পর প্রতিষ্ঠা লাভ করে জামায়াতে ইসলামী। এই পঞ্চাশ বছরে জামায়াতে ইসলামীর সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে যে দলটির আন্দোলন ও সংগ্রামের ফলে ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান এই কনসেপ্টটি মুসলিম সামজে আবার প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কয়েকশ বছর পর্যন্ত মুসলমানদের দিল-দেমাগ থেকে ইসলামের ধারণাই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু আলেম সমাজ ও মাদ্রাসাসমূহের ইহা এক বিরাট আবদান তারা কুরআন হাদীসকে সমাজের মাঝে জাগরূক রেখেছে। তাদের এ অবদান স্বীকার করতেই হবে।
কিন্তু কোরআন-হাদীরের জ্ঞান থাকার পরও আলেম সমাজ ইসলামকে একটি দ্বীন তথা জীবনাদর্শ হিসাবে তুলে ধরতে পারেনি। আমি বলব তাদের সামর্থ ছিল না। তাই তারা মুসলিমলীগ ও কংগ্রেস এ দুই ভাগে বিভক্ত ছিলেন। দেওবন্দী হবার পরও মাওলানা শাব্বির আহমদ ওসমানীর নেতৃত্বে ১০৪৩ সালে আলেমগন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম গঠন করেন যা পরবর্তীতে পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন দান করে।
মাওলানা মওদূদী এটা এক বিশেষ অবদান এমতো পরিস্থিতিতেও তিনি এমন এক আন্দোলন গড়ে তুলেন যা আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। ইউরোপ, আমেরিকা থেকে জাপান যেখানেই উপমহাদেশের মুসলমান রয়েছে সেখানেই এ আন্দোলন বিস্তার রয়েছে।
আজ আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে একটি বড় দল তৈরী হয়ে গেছে যারা নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে। অথচ আজ থেকে ৫০ বছর আগে এ অবস্থা ছিল না। এ আন্দোলন ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে লাখ লাখ নওজোয়ান নারী-পুরুষ-বৃদ্ধকে। মাদ্রাসার পাঠ চুকিয়ে যারা মনে করতেন দ্বীনের দায়িত্ব আঞ্জাম হয়ে গেছে বা যাবে এ আন্দোলন তাদের ধারনা পাল্টে দিয়েছে। ইকামাতের দ্বীনের কুরআনী জযবায় আলোড়িত করে তুলেছে ওলামা সমাজকে।
যে সমস্ত দলের তত্ত্বে ইসলাম নেই, তারাও আজ ইসলামের ঝান্ডা আর আল্লাহু আকবার শ্লোগান দিয়ে নেমে এসেছে। নেজাম মানে বিধান নিয়ম নীতি রীতি। ১৯৫৩ সালে গঠিত হয় নেজামে ইসলাম। তাদের লক্ষ্য ইসলাম প্রতিষ্ঠা। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে খেলাফত আন্দোলন। ৪০ বছর পর্যন্ত রাজনীতিকে দ্বীনের অংশ মনে করতেন না হাফেজী হুজুর। তিনি ইসলাম কায়েমের জন্য ময়দানে নেমে আসেন জীবনের শেষ প্রান্তে। রাজনীতিকে বেছে নেনে পথ হিসাবে, যারা নাকি রাজনীতিকে দ্বীনের কাজই মনে করতেন না তাদেরকে এ আন্দোলনই শিখিয়েছে যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও দ্বীনের কাজ। আশির দশকে এ অঞ্চলে আরও একটি দল কায়েম হয়েছে ইসলাম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে।
এভাবে আমি বলতে চাই-জামায়াতে ইসলামী এর লক্ষ্যে অনেক অগ্রসর হয়েছে এবং জামায়াতে এখন আল্লাহর রহমতে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে যে কেউ জামায়াতে করুক না নাই করুক এমনকি জামায়াতের বিরোধিতা করলেও কুরআনের আইনের কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে।
Please browse these label links: জামায়াতের সাফল্য এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জামায়াত