Thursday, September 7, 2017

বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম আল্লামা মওদুদী (রাহঃ)


লিখেছেনঃ তানজিল ইসলাম


হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,

"‏إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا"‏.‏
"নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা শতবর্ষের মাথায় এ উম্মতের জন্য এমন লোক প্রেরণ করবেন যিনি/যারা এ উম্মতের জন্য তাদের দ্বীন (তাজদীদ) সংস্কার করবে।" (আবূ দাউদ হাঃ ৪২৯১; মুস্তাদরাকে হাকীম ৪/৫৬৭; মিশকাত হাঃ ২৪৭)
তাজদীদ অর্থ Renew, সংস্কার, নবায়ন। মুসলিম সমাজের সকল শিরক, বিদয়াত, কুসংস্কার, ইসলাম বিরোধী ধ্যান-ধারণা, কুফুরী মতবাদ, জাহেলিয়্যাত ইত্যাদি অপসরণ করে রাসূলুল্লাহ (সা) এর যুগের, তাঁর প্রদর্শিত বিশুদ্ধ ইসলামী ঈমান-আকিদ, আমল, শরীয়ত ভিত্তিক সমাজ সংস্করণ এবং পূর্ণাঙ্গ দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার যাবতীয় কার্যক্রমকে তাজদীদ বলে।
.
আরবী ভাষায় অজ্ঞতার কারণে অনেকে মনে করেন যে, আল্লাহ এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যিনি দ্বীনের তাজদীদ করবেন। আরবী ভাষায় যাদের সামান্য জ্ঞান আছে তারাও জানেন যে, من শব্দের অর্থ কে বা কাহারা, যিনি বা যাহারা, ইংরেজি Who এর মত। এজন্য কুরআনে অগণিত স্থানে من এর সর্বনাম বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ.
আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়। (সূরা বাকারাঃ২/৮)
এখানে এ উদ্দেশ্য নয় যে, মানুষের মধ্যে মাত্র একজনই মুনাফিক রয়েছে। বরং এর উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে অনেক মানুষ আছে মুনাফিক। যারা ঈমানের দাবী করে কিন্তু ঈমান বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।
.
ইমাম যাহাবী বলেন, "একই শতাব্দীতে মুজাদ্দিদ একজন হবেন মনে না করে একাধিক হবেন বলে মনে করাই বেশি জোরালো মত।" (সিয়ারু আ'লামীন নবালা ১৪/২০৩)
আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, "শতাব্দীর মাথায়, শুরুতে বা শেষে যত মানুষকে মুসলিম সমাজের কুসংস্কার, বিদয়াত, অনাচার জাহেলিয়্যাত ইত্যাদি অপসরণ করে রাসূলুল্লাহ (সা) ও সাহাবাগণ (রা) এর যুগের পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ঈমান-আকিদা, ইবাদত, ইলম, রাষ্ট্র, বিচার, শাসনব্যবস্থা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সংস্কার ও নবায়নের চেষ্টায় রত পাওয়া যাবে সকলকেই মুজাদ্দিদ বলে গণ্য করতে হবে।" (ফাতহুল বারী ১৩/২৯৫)
.
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী বলেন, "সঠিক কথা হলো من যেহেতু একবচন ও বহুবচনের সমষ্টি, কাজেই এ হাদীসের অর্থ করা উচিত বহুবচনের। সকল আলেম, মুহাদ্দিস, মুফাচ্ছির, ফকীহ, ধর্মীয়নেতা, রাষ্ট্রীয় নেতা যে ব্যক্তিই দ্বীনের (তাজদীদ) সংরক্ষণ ও সংস্কারে অবদান রাখবেন তাদের সকলেই সেই যামানার মুজাদ্দিদ বলে গণ্য করতে হবে।" (আল-মিরকাত ১/৫০৭)
.
উপরোক্ত আলোচনায় এ কথা প্রমাণিত যে, একই শতাব্দীতে একাধিক মুজাদ্দিদ হতে পারেন। আর বিংশশতাব্দীতে যারা দ্বীনের তাজদীদ করেছেন তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হচ্ছেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী রাহঃ।
বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অগ্রপথিক, বিশ্ব বিশ্রুত প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্ব, শায়খুল ইসলাম, আল্লামা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ সমাজ সংস্করণ ও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিংশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হিসেব গণ্য করা হয় এবং তিনি বাদশাহ ফায়সাল কর্তৃক পুরস্কার প্রাপ্তদের প্রথম ব্যক্তি।
.
শাইখ আলবানী আল্লামা মওদূদী রহঃ কে ইমাম হিসেবে শ্রদ্ধা করতেন। তিনি অসংখ্য জায়গায় আল্লামা মওদূদী রাহঃ এর কিতাব
থেকে রেফারেন্স নিয়েছেন। বিশেষ করে তাঁর লিখা "কুরআন সুন্নার আলোকে মহিলাদের পর্দার বিধান" গ্রন্থে আল্লামা মওদূদী রহঃ এর লিখা "পর্দা" গ্রন্থ থেকে অসংখ্য উদ্ধৃত গ্রহণ করেছেন। (দেখুন, পৃঃ ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৮, ৮১, ৮৮, ১১৩, ১২৬, ২২৩, ২২৪, ২১৮, ২৩২)
শাইখ আলবানী অধিকাংশ জায়গায় আল্লামা মওদূদী রহঃ কে "আল উস্তাদ" বলে সম্ভোধন করেছেন। কোনো জায়গায়, "শাইখ" কোনো জায়গায় "আল্লামা" শব্দ ব্যবহার করেছেন।
শাইখ বিন বাজও এরূপ শব্দ প্রয়োগ করেছেন। (দেখুন, মাজমুউ ফতওয়া ইবনে
বাজ , পৃঃ ৩/১৯৯, ৬/১৭, ১৮/১৪০, ২৩/২২১) এক জায়গায় তিনি বলেন, "আমাদের ভাই আল্লামা আবুল আলা মওদূদী রহঃও "আল জিহাদ" গ্রন্থে লিখেছেন …। (পৃঃ ১৮/১৪০)
.
অাল্লামা ইউসুফ আল কারদাভী বলেন,
كان امام المودودي رحمه الله مرشد العالم الاسلامي- ما كان امام المودودي مفكرا مجردا- بل كان مفكرا ومصلحا ومجددا كاملا- كان مفكرا حركيا المفكرون الفو الكتب فقط- ولكن الامام مودودي رحمه الله الف الكتب والرجال-
"ইমাম মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন বিশ্বের পথপ্রদর্শক। ইমাম মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ শুধুমাত্র একজন চিন্তাবিদই ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন চিন্তাবিদ, সংস্কারক ও মুজাদ্দিদ। তিনি ছিলেন ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। সাধারাণত চিন্তাবিদগণ গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তাদের চিন্তাধারা প্রকাশ করে গেছেন। কিন্তু ইমাম মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ গ্রন্থাবলী রচনা করে চিন্তারাজ্যে বিপ্লব সৃষ্টির সাথে সাথে লোকও তৈরি করে গেছেন।" (ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলন ও মওলানা মওদুদী, পৃঃ ২৩-২৪)
.
হোসাইন আহমদ মাদানীর সুযোগ্য ছাত্র উপমহাদেশের অন্যতম বিচক্ষণ আলিম, শায়খুল হাদীস আল্লামা ইদ্রীস আহমদ (প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, গাছবাড়ী জামিউল উলুম কামিল মাদ্রাসা, সিলেট) বলেন,
"হাদীসে বর্ণিত আছে প্রতি শত বৎসর পরপর এক একজন মুজাদ্দিদের আবির্ভাব হবে, তিনি সত্যিকারের ইসলামী বিপ্লবকে পুনর্জীবিত করবেন। ইতিহাস প্রমাণ করে যে, বিগত তেরশত বৎসর হতে বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন যুগে, বিভিন্ন আকারে অনেক মুজাদ্দিদের আবির্ভাব হয়েছে। তাঁদের বিপ্লবের ফলে ইসলামের মূলনীতিসমূহ তার মূল আকুতিতে আজও বিদ্যমান রয়েছে। প্রথম মুজাদ্দিদ হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ এর তাজদীদ ছিল রাজ্য শাসনের মাধ্যমে। এ জন্য তাঁর ঐ তাজদীদ ছিল সর্বাঙ্গীণ তাজদীদ।
বিংশ শতাব্দীতে বাতিল মতবাদ সমূহের মোকাবিলাককারী মনীষীদের মধ্যে মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রাহঃ এর নাম অগ্রগণ্য। তিনি তাঁর ক্ষুরধার লিখনীর মাধ্যমে বাতিল মতবাদ সমূহের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন। বিশেষ করে কাদিয়ানীদেরকে কাফির সাব্যস্ত করতে গিয়ে তিনি যে ফাঁসিকাষ্ঠের সম্মুখীন হয়েছিলেন তা ইতিহাসে স্বর্ণক্ষরে লেখা থাকবে। আমি তাঁর লেখনীসমূহ যথাসম্ভব অধ্যয়ন করেছি।
মাওলানা মওদুদী রাহঃ এর চিন্তাধারা অনুযায়ী বাতিল মতবাদ সমূহের মোকাবিলা শুধুমাত্র লেখনীর দ্বারা যথেষ্ট নহে। তাই তিনি প্রথম মুজাদ্দিদ হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রাহঃ এর পন্থানুসারে রাজ্য শাসনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন কায়েম করার লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন। এ জামায়াতের মূলনীতিসমূহ পরিপূর্ণভাবে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।" (সত্যের আলো, পৃঃ x)
.
আল্লামা আব্দুর রব কাসেমী ফােযলে দেওবন্দ (প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, কানাইঘাট মনসুরিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, সিলেট) বলেন,
"হযরত মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রাহঃ নিঃসন্দেহে একজন মুজাদ্দিদ ছিলেন। কারণ ইকামতে দ্বীন হলো ইসলামের মূল। রাসূলুল্লাহ (সা) এর দশ বৎসরের মাদানী জীবনে বিরামহীন জিহাদের ফলশ্রুতিতে ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। কিন্তু এর সাথে ইকামতে দ্বীনের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাইনি বরং কিয়ামত পর্যন্তু রাসূল (সা) এর যত উম্মত দুনিয়াতে আসবেন প্রত্যেকের উপরই দ্বীন কায়েম আন্দোলনে শরীক হওয়া ফরয (সূরাশুরাঃ৪২/১৩)। কিন্তু খিলাফতে রাশেদার পর দুর্ভাগ্যক্রমে মুসলিম সমাজে রাজতন্ত্র কায়েম হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন ভাটা পড়তে শুরু করে। এমনি আমাদের এ উপমহাদেশের উপর ইংরেজদের প্রাধান্য বিস্তারের পরক্ষণেই এ এলাকার মুসলমানদের অন্তর থেকে ইকামতে দ্বীনের অনুভূতি দ্রুত সরতে আরম্ভ করে। বিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে তারা ইসলাম কে কয়েকটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত- যেমন, নামায, রোযা, হজ্জ, ইত্যাদিতে সীমিত করে ফেলে। ইসলামী অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি তথা কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক রাষ্ট্রকে তারা অকেজো মনে করতে আরম্ভ করে (নাউযুবিল্লাহ)।
এহেন অন্ধকার পরিবেশে আল্লাহ তা'আলা হযরত আবুল আ'লা মওদুদী রাহঃ কে ইকামতে দ্বীনের জীহাদের জন্য কবুল করেন। তিনি তাঁর বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে প্রমাণ করেন এবং 'জামায়াতে ইসলামী' নামে একটি দল গঠন করে বাস্তব ক্ষেত্রে ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন শুরু করেন- যে আন্দোলন বর্তমান বিশ্বে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্ট করেছে। সুতরাং আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই যে, তিনি হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ছিলেন।" (সত্যের আলো, পৃঃ xi)

Monday, September 4, 2017

ইসলামী ছাত্রশিবির’র প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি মীর কাসেম আলী‘র প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকীর দোয়া মাহফিল



ইসলামী ছাত্রশিবির’র প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী‘র প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকীর আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করছেন প্রধান অতিথি জামায়াত দলীয় সাবেক সাংসদ জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী: 
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)



Wednesday, August 23, 2017

মরক্কোর আধুনিক ইসলামী আন্দােলনের ইতিহাস, ইসলামপন্থীদের বিজয় এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

১৯১২ সালে ফ্রান্সে সম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মাধ্যমে মরক্কো দখল করে নেয়। তখন ফ্রান্সের উপনিবেশিক শাসন বিরোধী সশস্ত্র লড়াই পরিচালনা করেন শামসির আব্দুল করিম খাত্তাবী, যিনি আব্দুল করিম রফী নামে সমধিক পরিচিত। নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে ১৯৫৬ সালে মরক্কোবাসী স্বাধীনতা লাভ করে। মরক্কোর স্বাধীনতা সংগ্রামে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখেন আলাল আল ফাসী। তিনি জ্ঞান গরিমা, শক্তি-সাহস ও যুদ্ধবিদ্যায়  স্বীয় নেতা আন্দুল করিম রেফীর সুযোগ্য উত্তরসুরী ছিলেন। স্বাধীনতা লাভের পর সুলতান মুহাম্মদ খামীস জনসমর্থন নিয়ে মরক্কোর শাসন-ক্ষমতা লাভ করেন। জনাব আলাল আল ফাসী ইসলামী জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠার দাবীতে জিহাদ জারী রেখেছিলেন বিধায় শেষ পর্যন্ত তাকে নির্বাসিত জীবন গ্রহন করতে হয়। তিনি তার এক বন্ধু মক্কী আনসারীর মাধ্যমে পাকিস্তানে মাওলানা মওদূদী রহ: এর সংগে যোগাযোগ স্থাপন করে ইসলামী শাসনতন্ত্র জারী করার বিষয়ে পরামর্শ চান। তিনি মাওলানা মওদূদী (রহ:) লিখিত ইসলামী শাসনতন্ত্র বইটি পড়ে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এই বইটির ভিত্তিতে তিনি মরক্কোর জাতীয় সংবিধান রচনা করবেন। ১৯৬২ সালে একটি অপারেশন করার সময় তিনি এন্তেকাল করেন, কথিত আছে তাঁর মৃত্্যু আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফল।
দাওয়াতে আল হক নামক একটি সাময়িকী মরক্কোতে ইসলামী পূণর্জাগরণে অতুলনীয় অবদান রাখে। এপত্রিকাটি মরক্কো সরকারের আওকাফ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হত। তথাপি এর সম্পাদনার ভার ইসলামী আন্দোলনের উপর ছিল। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এসাময়িকীর মাধ্যমে মাওলানা মওদূদী রহ: এর বিপ্লবী ইসলামী সাহিত্য প্রচারিত হয়।
মরক্কোতে যুবকদের মাঝে ইসলামী আন্দোলন সংগঠিত রূপ লাভ করে ১৯৬৯ সালে আব্দুল করিম মুতির নেতৃত্বে ইয়ং মুসলিম মুভমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই যুব ইসলামী আন্দোলন জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলেমীনের অনুসৃত পন্থায় আন্দোলন করছে। ইয়ং মুসলিম মুভমেন্ট ওয়াইএমএম) বা হারকাতুল শাইবাতুল ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষা সমাপণকারী যুবকদের দ্বারা গঠিত হলেও ছাত্রদের মাঝে এর তৎপরতা ব্যাপক হয়ে উঠে। ফাস এর কারওইন বিশ্ববিদ্যালয়, বারাতের মুহাম্মদ খামস বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমগ্র মরক্কোব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে ওয়াইএমএম ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং প্রতিষ্ঠা লাভের ছয় মাসের মধ্যে দেশ-জাতির কাছে উল্লেখযোগ্য মর্যাদা লাভ করে। ওয়াইএমএম এর জনপ্রিয়তা ভীতি হয়ে মরক্কোর কায়েমী শাসকগোষ্ঠী ও সেদেশে অবস্থানরত শক্তিশালী ইহুদী গোষ্ঠীর চক্রান্তের মাধ্যমে এক কমিউনিষ্ট নেতা হত্যার মধ্য দিয়ে ওয়াইএমএম কে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার ফাসির আদেশদেয়। ফলে আব্দুল করিম মূতীসহ কয়েকজন নেতা নির্বাসিত জীবন গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জমিয়াতুল আল ওয়াল ইহসান নামে অপর একটি ইসলামী আন্দোলন আব্দুস সালাম ইয়াসীনের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই আন্দোলনের চিন্তাধারা ও লক্ষ্য তাবৎ বিশ্বের ইসলামী আন্দোলন সমূহের মতই, তবে তারা সনাতন তাসাউফপন্থার উপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। সরকারী নির্যাতনের অব্যাহত মোকাবেলা করে তারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জারী রেখেছেন।
এভাবে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বেসক্যাম্প মরক্কোতে ইসলামী আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। নিঃসন্দেহে মরক্কো ইসলামী বিপ্লব সাধনের ক্ষেত্রে একটি উর্বর ক্ষেত্র।

দীর্ঘ  ইসলামী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আরব বসন্তের পর মরক্কোতে ইসলামী দল ২০১১ সালে প্রথমবার এবং ২০১৬ সালে ২য়বার বিজয় অর্জন করে। এসম্পর্কে জানার জন্য নীচের পোষ্টগুলো পড়ুন:


1) মরক্কোয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের বিপুল বিজয়




Popular Posts