সোস্যাল মিডিয়া বলতে আমরা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে বুঝি। আমরা যাকে ফেসবুক নামে চিনি এটি একটি সোস্যাল মিডিয়া। এ রকম আরো অনেক রয়েছে যেমনÑ টুইটার, মাইস্পেস, ইমু, হোয়াইটস আপ, ভাইবার, গুগল প্লাস, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি। সোস্যাল মিডিয়াকে সংজ্ঞায় রূপান্তরিত করলে যা দাঁড়ায় তা হলো, আমরা যার মাধ্যমে আমাদের নিত্যদিনের খবর সামান্য সময়ের মাধ্যমে এক স্থান থেকে হাজারো মানুষের কাছে লিখিত বা ভিডিওর মাধ্যমে একই সময়ে পাঠাতে পারি তার নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যম আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমেই আমাদের অনেক চাহিদাই খুব সহজে পূর্ণতার মুখ দেখে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের যদিও আমরা লাভবান হচ্ছি কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব বহুমাত্রিকতায় বিস্তৃত। আমাদের যুবসমাজের মাঝে এর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে নানানভাবে। পৃথিবীতে ফেসবুক ব্যবহারকারী ১ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে অধিকাংশই যুবক এতে কোন সন্দেহ নেই। যদিও আগামী প্রজন্মের জন্য এটি একটি ভালো দিক। কিন্তু যখন এই ফেসবুক নামক বস্তুটি কিংবা অন্য যাই হোক না কেন আমাদের যুবকরা তাদের পড়ার টেবিলে নিয়ে এসে ব্যবহার করে তখন সেটিকে কিভাবে সম্ভাবনার দোহাই দেবো। আমরা দেখি তরুণরা সোস্যাল মিডিয়ার সামনে যে সময় ব্যয় করে অপর দিকে পড়ার টেবিলে এর তুলনায় খুবই কম সময় দিচ্ছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, ১০০ জন তরুণদের মধ্যে ১ ঘণ্টা থেকে একটু বেশি সময় ধরে ৩২ জন, ২-৩ ঘণ্টায় ৪৩ জন, ৪-৫ ঘণ্টায় ১৮ জন, ৬-৭ ঘণ্টায় ৪ জন এবং ৮ ঘণ্টা থেকে তার বেশি সময় ধরে সোস্যাল মিডিয়ায় নিমজ্জিত থাকে ৩ জন।
সরকারি হিসাবে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাত কোটি। গত মার্চ মাসে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত মার্চ মাস শেষে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৬৭ লাখ। অর্থাৎ দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর হাতে এখন ইন্টারনেট। আর এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসার কতটা দ্রুতগতিতে হচ্ছে তা অন্য একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, প্রতি ১২ সেকেন্ডে একটি করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে বাংলাদেশে, যা দেশের জন্মহারের চেয়েও বেশি। আর এদের অধিকাংশই তরুণ।
ডিচ দ্য লেবেল নামে অ্যান্টি-বুলিং বা উৎপীড়নবিরোধী একটি দাতব্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তরুণদের ভীত ও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এই সংস্থাটি ১০ হাজার তরুণ-তরুণীর ওপর জরিপ চালিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের সবার বয়সই ১২-২০ বছরের মধ্যে। এই জরিপে অংশ নেয়াদের প্রতি তিনজনের একজন জানিয়েছে, সাইবার-বুলিং বা অনলাইন উৎপীড়ন বিষয়ে তারা সব সময় আতঙ্কে থাকে। জরিপে অংশ নেয়া প্রায় অর্ধেকই জানিয়েছে, সোস্যাল মিডিয়ার কারণে তাদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনলাইনে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে তারা আলোচনা করতে চায় না। অনলাইনে বিরূপ আচরণের শিকার হওয়া অনেকেই তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কিছু খন্ডিত অংশ প্রকাশ করেছেন। জরিপে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ইনস্টাগ্রামকে অত্যন্ত নেতিবাচক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বৈশ্বিকভাবে অনলাইন নিপীড়ন ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ৭০ শতাংশ স্বীকার করেছে, তারা অনলাইনে অন্যের সাথে নিপীড়নমূলক আচরণ করে এবং ১৭ শতাংশ দাবি করে, তারা অনলাইনে অন্যের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট (ওআইআই) একই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৫ বছরের তরুণদের ওপর জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে ৩০ শতাংশ নিয়মিত অনলাইন উৎপীড়নের শিকার।
উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশগুলোর বেশির ভাগ বাসিন্দা বলছেন, শিক্ষার প্রসারে ইন্টারনেটের ভূমিকা ব্যাপক। ৩২টি দেশে জরিপ চালিয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ‘পিউ গ্লোবাল অ্যাটিটিউড সার্ভে’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির জরিপে দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রাখে। অন্যদিকে অর্থনীতিতেও ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশগুলোর মানুষের দৈনন্দিন কাজে কিভাবে ইন্টারনেট সহায়ক হয়েছে। এসব দেশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগের প্রসারে এখন তারা তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান কাজে লাগাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কিভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এটি ব্যবহার করে সামাজিক কাজে যুক্ত হচ্ছেন। এসব ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতকরা ৩৬ ভাগ বলেছেন ইন্টারনেট ভালো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে শতকরা ৩০ ভাগ ব্যবহারকারী বলেছেন ইন্টারনেট খারাপ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেখানে শতকরা ৪২ ভাগ ব্যবহারকারী বলেছেন, ইন্টারনেট মানুষের নৈতিকতার বিকাশে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। জরিপ চালানো ৩২টি দেশের শতকরা ৪৪ ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। উন্নত দেশগুলোর তালিকায় আছে চিলি, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে চিলি ও রাশিয়ায় ১০ জনের ৭ জন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা শতকরা ৮৭ ভাগ। জরিপ চালানো উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় পাকিস্তান এবং বাংলাদেশও রয়েছে।
সোস্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক যে দিক তা হলো ভিডিও সাইটগুলো। এটাকে যদিও আমরা পুরোপুরি সোস্যাল যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নাও বলি তবু সামাজিক মাধ্যমই হয়ে উঠেছে আমাদের জন্য আজকাল। এই ভিডিও সাইটগুলোতে আমাদের জন্য খারাপ সে খবর অপেক্ষা করছে তা হলো এই সাইটে নৈতিক অবক্ষয়জনিত ভিডিওগুলোর প্রবেশকারী অন্যগুলোর থেকে প্রায় ৪০ ভাগ বেশি। আর তার ৮০ ভাগ এর বয়সই ১৬-২৩।
সোস্যাল মিডিয়ায় কতিপয় ক্ষতিকর দিকসমূহ
১. সোস্যাল সাইট মানেই হলো অসংখ্য অ্যাপসের ছড়াছড়ি। আর এই অ্যাপসগুলোর বেশির ভাগই অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সোস্যাল সাইট ব্যবহারকারীদের বিশাল একটা সংখ্যা তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করেন, শুধুমাত্র অ্যাপস চেক করতে গিয়ে এদের মধ্যে অধিকাংশ তার পিসির কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলেন অ্যাপস এর দ্বারা এবং আরেক অংশের আইডি হ্যাক হয়ে যায় শুধুমাত্র অতিরিক্ত নানান রকমের অ্যাপস ব্যবহারে।
২. যারা অনেক বেশি সোস্যাল সাইটগুলোতে সময় দেন, ব্যক্তিগত জীবনে তাদের সাথে পরিবারের বেশ দূরত্ব সৃষ্টি হয়! দেখা যায়, তারা দিন শেষে বাড়ি ফিরে অথবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও পরিবারকে সময় না দিয়ে সময় দেয় সোস্যাল মিডিয়াগুলোতে যার ফলে মানুষিক থেকে শুরু করে বাহ্যিক পর্যন্ত সব দিক থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয় পরিবার এর সাথে।
৩. বিখ্যাত নিউজ চ্যানেল সিএনএনের সোস্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ভিত্তিহীন খবর প্রচার করা হয় সোস্যাল সাইটগুলোতে, যা মিডিয়া সম্পর্কে সমাজে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করছে। এতে জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তিরও সৃষ্টি হচ্ছে।
৩. দেখা গেছে, টুইটার, ফেসবুক, লিঙ্কডইন, মাইস্পেস, হাইফাইভ, বাদু, নিং ইত্যাদিসহ, বাংলাদেশীদের উপস্থিতি রয়েছে এমন সাইটগুলোও অনর্থক আর আজেবাজে প্রচুর মন্তব্যে ভরা। এসব সাইট প্রচুর পরিমাণে অপব্যবহার হচ্ছে। অনেক ব্লগের লেখা খুব বেশি সম্পাদনা করা হয় না। সেসব ব্লগে যার যা খুশি তা-ই লিখে দিচ্ছেন।
৪. সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মীয় বিষয়ে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালানো হয়। অনেক সময় সফলতাও হচ্ছে তারা। গুজব তৈরির জন্য তারা এসকল সাইট সর্বোচ্চ ব্যবহার করছেন।
৫. সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সোস্যাল সাইটগুলোতে প্রশ্নফাঁসের উৎসব চলছে! সব ধরনের পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়ে যাচ্ছে এই মাধ্যমগুলোতে, ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রসহ সব রকমের প্রশাসনিক কার্যক্রম।
৬. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল ও পরবর্তীতেও নিজেদের ক্যারিয়ারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৭. অতিরিক্ত সোস্যাল সাইটের প্রতি আসক্তি এবং এর অপব্যবহার শুধুমাত্র পরিবার ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের জন্যই যে ক্ষতিকর তা না, এটা সমস্যা তৈরি করতে পারে আপনার কর্মক্ষেত্রেও!
এসব নৈতিক অধঃপতনের কারণে দেখা যাচ্ছে- আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাস এখন আর আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ফলে এমন সব ঘটনা ঘটছে, যা শুনে বা খবরের কাগজে পড়ে শিউরে উঠতে হচ্ছে। সন্তানের হাতে মা-বাবা খুন, মা-বাবার হাতে সন্তান খুন, তিন-চার সন্তান রেখে মায়ের পরকীয়া, প্রেমিকের হাত ধরে পলায়ন, ধনাঢ্য ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সন্তান কর্তৃক ব্যস্ততার কথা বলে বাবার লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে হস্তান্তর, বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ছুড়ে ফেলে আসার মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তিকে অবলম্বন করে অনৈতিক ও অবৈধ প্রেমে আবদ্ধ হয়ে তরুণরা নিষ্ঠুর, নির্মম হয়ে উঠছে। এসব বিষয়গুলো কখনো কখনো তাদেরকে আত্মধ্বংসী করে তুলছে।
অবক্ষয়ের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রকে। ইন্টারনেট প্রযুক্তিনির্ভর মাধ্যমের ব্যবহার যেমন মানুষের কাছে পৃথিবীটাকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে, ঠিক তেমনি মানুষের মধ্যে অবাধ যৌনাচারকেও উসকে দিচ্ছে। আজকে পর্নোগ্রাফি যেভাবে বানের পানির মতো গ্রাস করছে, তাতে শিশু-কিশোররা ব্যাপক হারে যৌন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। স্কুলগামী টিনঅ্যাজারদের মোবাইলে পর্নোগ্রাফি ছবি অভিভাবকদের অসহায় ও শঙ্কিত করে তুলেছে। যার ফলশ্রুতিতে ধর্ষণের সংস্কৃতিতে নাকাল হচ্ছে দেশ-সমাজ-পরিবার।
আমাদের করণীয়
১. আমাদের যুবকদের মাঝে ধর্মীয় চেতনা জাগিয়ে তোলা আবশ্যক। সেটা যে ধর্মেরই হোক না কেন। কারণ কোন ধর্মই আমাদের নৈতিক অবক্ষয় শিখায় না।
২. আমাদের যুবকদের জন্য সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হতে হবে তাদের পরিবার। যাতে সে কোনো ভালোবাসার অভাবে নতুন ভালোবাসা না খুঁজে।
৩. বাবা-মাকে আমাদের ছেলেমেয়েদের জানাতে হবে তার দৌরাত্ম্য কত। মানে তার সামাজিক অবস্থান থেকে সে কী করতে পারে আর কী পারে না।
৪. শুধু ভালোবাসা নয় প্রয়োজনে শাসন ও তাদের থেকে কাম্য। কারণ যিনি ভালোবাসেন শাসন সেই করতে পারেন।
৫. বাবা-মাকে খোঁজ রাখতে হবে কে বা কারা আমার ছেলে বা মেয়ের বন্ধু হচ্ছে।
৬. ইন্টারনেট ব্যবহারে আমরা কী করতে পারি না সে শিক্ষা আমাদের পরিবার থেকেই পাওয়া উচিত।
৭. ফেসবুক থেকে সকল মাধ্যমগুলোতে বাবা এবং মায়েদের ফ্রেন্ড রাখা উচিত, এবং সকলের প্রোফাইল পাবলিক থাকা উচিত।
৮. ছেলেমেয়েদের মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
৯. ছেলে বা মেয়ে কোন ভুল করে ফেললেও তাকে কাছে নিয়ে আপন করে আবার নিজেকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করতে হবে।
উপরোক্ত দিকগুলো থেকে আরো ভালো অনেক দিক আমাদের জানার বাইরে আছে যা আমাদেরকে খুঁজে নিয়ে আমাদের সন্তানদের মানুষ করে সকল নৈতিক অবক্ষয় থেকে বাঁচাতে হবে। আমাদের খারাপ দিকগুলোকে আমরা চিহ্নিত করে যদি আমাদের তরুণদের সামনে তুলে ধরতে পারি তাহলে এটা আমাদের জন্য অভিশাপ নয় আশীর্বাদও হবে।
সরকারের পক্ষ থেকেও মিডিয়াকে কল্যাণমুখী করতে ভূমিকা রাখতে হবে। ড্রাগ, ফ্রি-সেক্স প্রতিরোধেও সরকারকে ভূমিকা পালন করতে হবে। অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে । সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিতে হবে। দল-মতের ঊর্ধ্বে ওঠে দেশপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাসের সাজে সজ্জিত হয়ে পথ চলতে হবে। সব ধর্মের লোকদেরকে যার যার ধর্মীয় বিশ্বাসের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করতে হবে। কারণ প্রত্যেক ধর্মই নৈতিকতা, সহিষ্ণুতা, ধৈর্য, মানবতাবোধ, ন্যায়বিচার, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, পরের সম্পদে লোভ না করা, অন্যায়কে ঘৃণা করার শিক্ষা দেয়।
আমাদের সমাজের এই নৈতিক অবক্ষয়ও কিন্তু আমাদের এই হাতে পাওয়া মাধ্যমগুলো থেকেই হয়েছে। যা আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। এই অবক্ষয় এখনই ঠেকাতে না পারলে আমরা আর আমাদের যুবসমাজ পুরোটাই অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া থেকে কেহ ঠেকাতে পারবে না!
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক