Wednesday, June 13, 2018

আওয়ামীলীগ নয় বরং জামায়াতে ইসলামীরাই প্রকৃত দেশ প্রেমিক – রাকেশ রহমান



আমি একজন সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। শুধু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারই নয় বরং রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। যে পরিবারের সৎ, আদর্শ ও প্রতিবাদের জন্য শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতেও পরিচিতি রয়েছে। যাক আমি আমার ব্যাপক পরিচিতি উল্লেখ করতে আগ্রহী নই।

উপরের এই উক্তি গুলো আমার জীবনে বাস্তব পরীক্ষিত। যেহেতু আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান তাই ছেলে বেলা থেকেই বেরে উঠার পাশাপাশি বাবা চাচাদের যুদ্ধের সময়কার গল্প বেশি বেশি শুনতাম। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা, ছবি সংগ্রহ করা ও দেশাত্ববধক গান প্রচুর পরিমাণে শুনতাম। ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা, বিভিন্ন লেখকের বই পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে পড়তাম। মনে প্রানে হ্বদয়ে জায়গা দিয়েছিলাম একটি নাম ‘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান’ । ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণটা মুখস্থ ছিল। যেহেতু আমার পরিবারের সাথে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার সাথে একটা সুমুধুর সম্পর্ক ছিল সেই সুবাদে সুযোগ পেলেই যেতাম তাঁর বাসায়।
একবার তো এক মজার ঘটনা ঘটলো, তখন আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে স্কুলের হাফ টাইম-এ পেট খারাপের কথা বলে হেড মাষ্টারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় গিয়ে ছোট ফুফির সাথে ধানমন্ডী ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধু যাদুঘরে গেলাম, গিয়েই তো খেলাম ধরা দেখি আমার হেড মাষ্টার ( অধ্যক্ষ মৃত কামরুজ্জামান, সাবেক আওয়ামীলীগ এম পি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ) ঐখানে বসা। স্যার আমাকে দেখা মাত্র মৃদু হাসলেন এবং বুঝে গেলেন আমার ছোট হ্বদয়ে শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা।
আমাদের বাসায় শেখ মুজিবর রহমানের যে বিশাল বিশাল ছবি ছিল তা আমার মনে হয় সারা বাংলাদেশে এত বড় এবং এতো ছবি কারো বাসায় ছিল না। যার কারণে শুধু মাত্র শেখ হাসিনার মিশিলে এই ছবিগুলো নিয়ে যাওয়া হতো, আমরাও শেখ হাসিনার পাশেই থাকতাম। মুক্তিযুদ্ধের একটি সর্ট ফিল্ম আছে নাম ৭১’এর যীশু। এই ছবিটি অতুলনীয়।
আমার ধারনা আমার মত খুব কম যুবকই আছে যারা ৭১’এর ইতিহাস এতো বেশি পড়েছে বা জেনেছ । এখনকার তরুণ সমাজ ইতিহাস সঠিক ভাবে না পড়ে না জেনে, শুনে শুনে তর্ক করে যুক্তি, ভিত্তি জ্ঞান ছাড়া।
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমি আমার মাথায় রাখি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অনুভূতি আমি আমার হ্বদয়ে রাখি ঠিক যেন ৭১’এর একজন মুক্তিসেনার মত। শেখ মুজিবরের প্রতি অন্ধের মত পাগল ছিলাম যে , শেখ মুজিবরের কণ্ঠের সাথে ঢাকার সাবেক মেয়র ও সাবেক ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মৃত মেয়র হানিফের কণ্ঠের সাথে খুব মিল ছিল। তাই মেয়র হানিফের কণ্ঠের ভাষণ শুনার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে থাকতাম।
..............................................................................................
জামায়াতে ইসলামীকে আমি চরম পরম ঘৃণা করতাম। দেশে থাকতে একবার আমার এলাকায় আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব এসেছিলেন ওয়াজ করতে। কিন্তু আমি তার কথা না শুনে বাড়িতে বসে সারা রাত হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনেছিলাম যাতে মাইকের শব্দ আমার কানে না আসে। যাইহোক আমি উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া কোন নাস্তিক বুদ্ধিজীবী নয়। কিন্তু
ন্যূনতম জ্ঞান চিন্তা চেতনায় সুদূর প্রসারিত আমার মন মানসিকতা।
২০০৬-এর পরে ইতালিতে এসে আমি ইসলামিক ফরাম অফ ইউরোপের একজন দায়িত্বশীল ভাই মির্জা জামাল বেগ সাহেবের কাছ থেকে আমি দ্বীন ইসলামের দাওয়াত পাই। ধীরে ধীরে তার মাধ্যমে আমি ডঃ জাকির নায়েকের ওয়াজ শুনা শুরু করি এবং দরসে কোরআন ও ইসলামী ইতিহাস পড়া শুরু করি। তারপরে তার দেশের বাড়ি পিরোজপুর (সাইদী সাহেবের এলাকা) হওয়ায় সে এবং আরেক দায়িত্বশীল জনাব এমদাদুল হক সাহেবের প্রচেষ্টায় আমি বিরক্ত হওয়া স্বত্তেও আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের জীবনী জানতে সক্ষম হই। এরপরও আমি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে দেশে পিরোজপুরে লোক পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিলাম। কি আশ্চর্য ! একেবারে নিরপরাধ একজন এলেমকে শুধু মাত্র রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য এই ভাবে যুদ্ধ অপরাধী রাজাকার নারী ধর্ষণকারী হিসেবে সাজানো হয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে; এ আমরা কোন সমাজে বসবাস করছি।
এ আমরা কোন জাতি যারা শুধু মাত্র হলুদ মিডিয়া প্রচার মাধ্যম দ্বারা একজনকে দেবতা বানিয়ে পূজা দিচ্ছি আর এলেম লোকদেরকে বানাচ্ছি যুদ্ধ অপরাধী ,রাজকার, নারী ধর্ষণকারী , জঙ্গি ইত্যাদি। তারপর থেকে আমি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের প্রত্যেকটি ওয়াজ দেখেছি, শুনেছি, কেঁদেছি, শিখেছি এবং জেনেছি ইসলাম কি। হাতে গুনা দুই একটা ছাড়া কোথাও কোন জায়গায় রাজনৈতিক বক্তব্য উনি দেননি । আমি একজন ঈমানদার মুসলমান। তাই আল্লাহ্‌র উপর রয়েছে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সে বিশ্বাসেই বলতে পারি যে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী যদি মন্দ লোক হতেন তাহলে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন তাঁকে এতো বড় ক্ষমতা তথা তাঁর কণ্ঠে যে ম্যাজিক পাওয়ার আছে সেটা দিতেন না। সাঈদী সাহেব সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে ক্বাবা শরীফের ভিতরে ঢুকার সুযোগ পান, সেই ওয়াজও আমি দেখেছি। ক্বাবা শরীফের ভিতরে ঢুকার অনুভূতিতে সাঈদী সাহেব সারা রাত ঘুমাতে পারেন নি আল্লাহ্‌র শুকুরে সেজদায় পড়েছিলেন। তাঁর হাতে দেশ বিদেশে বহু বিধর্মী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। আল্লাহ্‌র প্রতি আমার ঈমানী দাবীতে বলতে পারি রাব্বুল আলামিন কোন দিন মন্দ মানুষকে এতো বড় সম্মানে সম্মানিত করবেন না ।
আর বিধর্মী , নাস্তিকদের বলতে চাই সঠিক সাক্ষী প্রমাণ আইনের ভিক্তিতে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের নিরপেক্ষ বিচারের ব্যবস্থা করা হোক। না হলে কোটি জনতা তোমাদের ছাড়বে না।
জামায়াতে ইসলামীরা বাংলাদেশে মঙ্গল কামনার রাজনীতি করে তা দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমের দিকে লক্ষ করলে আমরা উপলব্ধি করতে পারবো যে তারাই প্রকৃত শিক্ষিত, মার্জিত , সৎ , আদর্শবান দেশ প্রেমিক ; শুধু মাত্র হলুদ মিডিয়ার মিথ্যা প্রচার ছাড়া।

Tuesday, June 12, 2018

ইরানে ইসলামী বিপ্লব ও জামায়াতে ইসলামীর অবদান



- শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

            ১৯৭৯ সালে সংঘটিত ইরানের ইসলামী বিপ্লব সম্পর্কে সবাই অবগত। এই ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম প্রধান আদর্শিক প্রেরণা ছিল জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক প্রচারিত বিপ্লবী ইসলামী সাহিত্য। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সময় সখানকার মানুষের হাতে হাতে ছিল সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী, সাইয়েদ কুতুব শহীদ ও আল্লামা  ইকবালের বই। এর মধ্যে আল্লামা মওদূদী রহ: এর বই ই ছিল সবচেয়ে বেশী। তাইতো ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতৃবৃ্ন্দ স্বীকার করেছেন যে, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের জন্য শহীদ হাসানুল  বান্না, শহীদ কুতুব, ইকবালের কাছে যেমন তারা ঋণী, মাওলানা মওদূদী রহ এর কাছেও তারা ঋণী। কারণ তার সাহিত্য তাদেরকে ইসলামী বিপ্লব সাধনে প্রেরণা যুগিয়েছে" ( ইসলামী পূণর্জাগরণ ও মাওলানা আবুল আলা মওদূদী, অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, ৫০ বছর পূর্তি সংখ্যা ১৯৯১ ইং) ইতিহাসবেত্তা ফিলিপ জেনকিন্স বলেন, Mawdudi even had a major impact on Shia Iran, where Ayatollah Ruhollah Khomeini is reputed to have met Mawdudi as early as 1963 and later translated his works into Farsi. “To the present day, Iran’s revolutionary rhetoric of ten draws on his themes. (tnr. com The New Republic “The Roots of Jihad in India” by Philip JENKINS, December 24, 2008) অর্থাৎ ‍‌‌‌‌‌‌''এমনকি শিয়া অধ্যুষিত ইরানেও মওদুদীর বড় ধরণের প্রভাব আছে।  ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী ১৯৬৩ সালে মাওলানা মওদুদীর সাথে সাক্ষাত করেন, পরবর্তীতে ইমাম খোমেনী মওদুদীর বইগুলো ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন।  এখনো পর্যন্ত প্রায়শঃই ইরানের ইসলামী সরকার মাওলানা মওদুদীর কর্মপন্থা অনুসরন করে থাকে।'' উস্তাজ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ.)-এর ছেলে ড. আহমাদ ফারুক মওদূদীর একটি উক্তি এখানে উল্লেখ করা হলো: ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানের লাহোর থেকে প্রকাশিত Roz Naame নামক একটি পত্রিকায় ড. আহমাদ ফারুক মওদূদীর লেখা 'Two brothers- Maududi and Khomeini' বইয়ের ১২৯ পৃষ্ঠার কিয়দংশ প্রকাশিত হয়। সেখানে ড. আহমাদ লিখেছিলেন- Allama Khomeini had a very old and close relationship with Abba Jaan (father). Aayaatullah Khomeini translated his (fathers) books in Farsi and included it as a subject in Qum. অর্থাৎ ‍‌‌‌‌‌‌“আব্বাজানের সঙ্গে আল্লামা খোমেনীর খুবই অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। জনাব খোমেনী আব্বার বইপত্র ফার্সিতে অনুবাদ করেছিলেন এবং কোম (Qom)-এ সেগুলো পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন”। এখানে উল্লেখ্য যে, মাওলানা মওদূদী ও সাইয়েদ কুতুবের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রচনাবলির ফার্সি অনুবাদক হাদী খোরাসানীর সঙ্গে ১৯৬৮ সালে হজ্বব্রত পালনকালে পাকিস্তান জামায়াতের নায়েবে আমির মৌলানা খলিল আহমাদ হামিদী সাক্ষাত করেছিলেন। “মাওলানা মওদূদী রহঃ ও তাত্ত্বিক আলোচনা” নামের ফেইসবুক গ্রুপে নূরুল হুদা হাবীব “ইরানের ইসলামী বিপ্লব, মাওলানা মওদূদী ও তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াত” শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেন: “১৯৭৯ সালের মধ্য জানুয়ারিতে বিপ্লব সংঘটিত হলে ২২ শে ফেব্রুয়ারি মাওলানা মওদূদীর বিশেষ বার্তা সহ দলীয় আরেক শীর্ষ নেতা মিয়া তুফাইল মুহাম্মদ পাকিস্তান থেকে তেহরানের উদ্দেশ্যে উড়াল দেন। জামায়াত সহ মুসলিম বিশ্বের সমমনা সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের এক মিলনমেলায় পরিণত হয় তেহরান। বলার অপেক্ষা রাখেনা, মুসলিম ব্রাদারহুড এ মিলনমেলার আয়োজনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। ইরানের তৎকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইবরাহীম ইয়াজদি (মৃ. ২০১৭) ব্যক্তিগতভাবে তার নিজ বাসায় মিয়া তুফাইলের মেহমানদারী করেছিলেন। গভীর রাত পর্যন্ত তারা সদ্যঘটিত বিপ্লব এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন প্রসঙ্গে আলাপ করেন৷ সে রাতের আলাপচারিতার ব্যাপারে পরবর্তীতে জনাব তুফাইল মন্তব্য করেছিলেন- "Conversation not of tougues, but of hearts" ............. পাকিস্তান জামায়াতের অন্যতম বর্ষীয়ান নেতা জনাব লিয়াকত বেলুচ বিপ্লবের আগে-পরে খোমেনীর সঙ্গে তিন তিনবার সাক্ষাত করেছিলেন। ২০১৯ সালে লাহোরে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৪০ তম বার্ষিকী উদযাপনের এক আলোচনা সভায় তিনি এ বিপ্লবের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পাশ্চাত্যের অনুকরণের বাইরে গিয়ে ইরান ভিন্নধর্মী একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন।” বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলনের কর্ণধার আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদী ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইন্তেকালের পর তাঁর নামাজে জানাযায় আয়াতুল্লাহ খোমেনীর বিশেষ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লামা সাঈদী ইরানে ইসলামী বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকীর আমন্ত্রিত মেহমান ছিলেন।  ১৯৮৩ সালে আয়াতুল্লাহ খোমিনীর আমন্ত্রনে ইরানের বিভিন্ন এলাকা সফর করে তিনি বিভিন্ন মাহফিলে কোরআনের তাফসীর পেশ করেন এবং বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন।

            আধুনিক যুগে ইরানের ইসলামী বিপ্লব এক অনন্য ঘটনা। ইসলামী বিপ্লবের উষালগ্নে পরিকল্পিত বোমা বিস্ফারনের মাধ্যমে ৭২ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা, ইরাক কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অবরোধ ইত্যাদিকে স্বার্থকভাবে মোকাবেলা করে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের টিকে থাকা এর শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন। সারা পৃথিবীর কোন দেশে যখন ইসলামী সরকার ছিল না তখন ইরানের এই ইসলামী বিপ্লবের সফলতা সারা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনকে বিপুল প্রেরণা দান করেছে। ইরানের ইসলামী শক্তি শুধু নিজ দেশে ইসলামী বিপ্লব সাধন করেই ক্ষান্ত হয়নি । দেশে দেশে চলমান ইসলামী আন্দোলন গুলোকেও ইরান দৃঢ় সমর্থন, শক্তি এবং অর্থ যোগানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্থিনের ইন্তিফাদা, আলজেরিয়ার ইসলামী পূণর্জাগরণ, তিউনিশিয়া, মিশর এবং জর্দানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকংশ দেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ইরান সমর্থন ও শক্তি যুগিয়ে চলেছে। যেমন- আলজেরিয়ার জনসমর্থনপুষ্ট ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ইরান দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করে এবং এর উপর আলজেরিয়ার স্বৈরাচারী সরকারের জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদ জানায়। ইরানপন্থী লেবানানী হিজবুল্লাহদের সাফল্যও এখানে উল্লেখ্য । হিজবুল্লাহদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইসরাইলী বাহিনী দক্ষিণ লেবানান থেকে বিতাড়িত হয়। ইসরাইল ১৯৭৮ সালে দক্ষিন লেবানানে প্রবেশ করে এবং ইসরাইলের উত্তর সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখার জন্য দক্ষিন লেবানানে স্থানীয় এক মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তোলে। জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদ দক্ষিন লেবানন থেকে সকল ইসরাইলী সৈন্য প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে ৪২৫ নম্বর প্রস্তাব অনুমোদন করে। তবে ইসরাইল একে তোয়াক্কা করেনি। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে ইসরাইলী বাহিনী লেবানানে নৃশংস আগ্রাসন চালায় এবং তারা তিনমাস ধরে রাজধানী বৈরুতে অবরোধ করে রাখে। ইসরাইলী বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের লক্ষ্যে ইলামপন্থীরা গড়ে তোলে সুদক্ষ যোদ্ধাদল হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহদের সাথে ইসরাইলী বাহিনীর অগণিত লড়াই সংঘটিত হয়েছে। প্রাণহানী ঘটেছে উভয় পক্ষে ব্যাপক ভাবে। হিজবুল্লাহর অনমনীয় মনোভাব লেবানানের মুসলমানদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। দখলদারীর প্রথম কয়েক বছরেই ইসরাইল দক্ষিণ লেবানান থেকে ফিলিস্তিনী যোদ্ধাদের হটিয়ে দিতে সমর্থ হয়। এরপর পরই হিজবুল্লাহর অভ্যুদয় ইসলাইলীদের হিসাব গরমিল করে দেয়। হিজবুল্লাহদের সশস্ত্র জিহাদের এক পর্যায়ে ইসরাইলের নিজের এলাকাতেই হিজবুল্লাহদের হাতে তিনশত নৌসেনা ও ফরাসী সৈন্য নিহত হয়। এরপর পরই আমেরিকানরা তাদের বাহিনী পূণরায় নিযোগ করে। মার্কিন ডেষ্ট্রয়ার থেকে লেবানানের গ্রাম ও হিজবুল্লাহ অবস্থানের উপর ব্যাপক বোমা বর্ষণ করা হয়। তবে এতেও মার্কিনীরা হিজবুল্লাহকে দমাতে পারেনি। ১৯৮৫ সালের ইসরাইল নিতানী নদীর উত্তর দিক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এ সফলতার পর ১৫ বছর ধরে হিজবুল্লাহ ইসরাইলী বাহিনীর উপর তাদের আক্রমন অব্যাহত রাখে। দক্ষিণ লেবানানে দখলদার বাহিনীর সাথে তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম চলে প্রতিদিনই। হিজবুল্লাহ বাহিনীকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য ইসরাইল সব ধরণের কৌশলই অবলম্বন করে। তাদের সব অপকৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থায় মে ২০০০ ইং তারিখে ইসরাইল দক্ষিণ লেবানান থেকে তার সম্পূর্ণ বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আরব রাষ্ট্র গুলোর সাথে সকল যুদ্ধে ইসরাইলী বিজয় অর্জন করে এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর ভূখন্ড একের পর এক দখল করে। এবারই প্রথম হিজবুল্লাহ বাহিনীর সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইসরাইল কোন আরব ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত হয়। এরপর ২০০৬ সালে ইসরাইলের ২য় লেবানান যুদ্ধে ইসরাইল হিজবুল্লাহর কাছে ২য়বার পরাজয় বরণ করে। ইরানের ইসলামী বিপ্লাব সম্পর্কে আলোচনা প্রসংগে কিছুটা দীর্ঘ হলেও হিজবুল্লাহদের সাফল্য সম্পর্কে আলোচিত হল। এ হিজবুল্লাহদের এ সাফল্যের পিছনে আদর্শিক প্রেরণা, সমর্থন এবং শক্তির প্রধান উৎস ছিল ইরানের ইসলামী সরকারে। আফগানিস্তান জিহাদেও ইরানের ইসলামী সরকারের অবদান রয়েছে। আফগানিস্তান জিহাদ চলাকালে প্রায় ১৫ লক্ষ আফগান উদ্বাস্তুকে ইরান আশ্রয় দিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। এভাবে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী সরকার বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিরাট শক্তি সৃষ্টি করে চলেছে। 

শিয়া হিসাবে তাদের কিছু ত্রুটি আছে, কিন্তু তারা ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে যে বিরাট অবদান রাখছে তার স্বীকৃতিও দেওয়া উচিত।

আল-কোরআন ও হাদীসে পারস্য তথা ইরান সম্পর্কে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সুরা জুমায় বলা হয়েছে:   

هُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ ٭ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ۙ(۲) وَّ اٰخَرِیۡنَ مِنۡهُمۡ لَمَّا یَلۡحَقُوۡا بِهِمۡ ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ(۳)

অর্থাৎ ‍‌‌‌‌‌‌তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন তার আয়াতসমূহঃ তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত; যদিও ইতোপূর্বে তারা ছিল ঘোর বিভ্ৰান্তিতে; এবং তাদের মধ্য হতে অন্যান্যদের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে  মিলিত হয়নি। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (সুরা জুমা: ২ ও ৩ আয়াত)।

“অন্যান্যদের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে  মিলিত হয়নি” - এই আয়াতের উদ্দীষ্ট হলো নিঃসন্দেহে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী বিভিন্ন দেশের মুসলিম। ইকরিমা ও মুজাহিদ থেকে অনুরূপ বৰ্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে পারস্যবাসীরা অর্থাৎ ইরানীরা । সহীহ হাদীস থেকে তা জানা যায়: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলাম, এমতাবস্থায় সূরা জুমুআ অবতীর্ণ হয়। তিনি আমাদেরকে তা পাঠ করে শুনান। তিনি (وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ) পাঠ করলে আমরা আরয করলামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ, এরা কারা? তিনি নিরুত্তর রইলেন। দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার প্রশ্ন করার পর তিনি পার্শ্বে উপবিষ্ট সালমান ফারেসী (রা)-এর গায়ে হাত রাখলেন এবং বললেনঃ যদি ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের সমান উচ্চতায়ও থাকে, তবে তার সম্প্রদায়ের কিছুলোক সেখান থেকেও ঈমানকে নিয়ে আসবে [বুখারী: ৪৮৯৭, ৪৮৯৮, মুসলিম: ২৫৪৬, তিরমিযী: ৩৩১০] অন্য হাদীস নীচে দেয়া হলো:

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত: রাছুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:“দ্বীন যদি সুরাইরা নক্ষত্রের নিকটেও থাকে তাহলেও পারসিয়ানদের কোন একজন অথবা তাদের কোন এক সন্তান তা হাসিল করবে” (মুসলিম হাদীস নং ৪৬১৮, তিরমিযী হাদীস নং ৩১৮৪, ৩২৩২, ৩৮৬৮, মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ৭৭৩৫) অনেকে মনে করেন এই হাদীসসমূহ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) তাবেয়ী ছিলেন । কাজেই তখনো দ্বীন সুরাইরা নক্ষত্রের নিকটে যাওয়ার অর্থাৎ দ্বীন পৃথিবী থেকে দূরে যাওয়ার পরিস্থিতি হয় নি । কাজেই এসব হাদীস আধুনিক যুগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে হয়। আল্লাহ ভালো জানেন। 


See these video:


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য মুক্তবাংলা


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মারক ভাস্কর্য ‘মুক্তবাংলা’।  এটি সর্ব সাধারণের কাছে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে অতি পরিচিত। এই শিক্ষাঙ্গনের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর প্রাণের সঙ্গে মিশে আছে এই চোখ জুড়ানো মুক্তবাংলা। ইসলামের মৌলিক নীতিমালা অক্ষুণ্ণ রেখে এবং আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের আঙ্গিকে ১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রশাসন ভবনের পূর্ব পাশে স্থাপিত হয় এই ‘মুক্তবাংলা’।  খ্যাতিমান ডিজাইনার রশিদ আহমেদের নক্সার ভিত্তিতে একে অপরূপ সৌন্দর্যে রূপ দেয়া হয়।  মুক্তবাংলার সাতটি স্তম্ভ সম্বলিত গম্বুজের উপর রয়েছে দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার রাইফেল যা সাত সদস্যের মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার প্রতীক।  প্রতিটি স্তম্ভ বিস্তৃত প্রশারিত হাত ধরাধরি উল্লসিত অবয়বে আধুনিক ইসলামী স্থাপত্যভিত্তিক আর্চ রচিত, চোখে লাল সূর্য উদয়ের প্রত্যাশা, সর্বনিম্নে বড় ইট যা লাগাতার আন্দোলন নির্দেশক।  উপর থেকে চতুর্থ ধাপে রয়েছে লাল সিরামিক ইট আন্দোলন ও যুদ্ধের প্রতীক, দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে কালো পাথর শোক ও দুঃখের প্রতীক, তৃতীয় ধাপে রয়েছে সাদা মোজাইক সন্ধি ও যোগাযোগের প্রতীক এবং বেদির মূল মেঝে রয়েছে সবুজ মোজাইক যা নীল টাইলস ও শান্তির প্রতীক। সমুদয় অবকাঠামোটি সাতটি আর্চ সম্বলিত একটি অর্ধ উদিত (উদীয়মান) সূর্য। মুক্তবাংলার সৌন্দর্য ও বিশেষত্ব উপভোগ করতে শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।  প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ডানদিকে সবার নজর কাড়ে ব্যতিক্রমী এই রুচিশীল স্থাপত্য কর্মটি।

- ইমাদুল হক প্রিন্স

See this video: 

Thursday, June 7, 2018

আল্লামা সাঈদী (মাঃ) সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ভিডিওটি শেয়ার করুন প্লিজ




আল্লামা সাইদী সম্পর্কে চট্টগ্রামের এক মাহফিলে অধ্যাপক মাওঃ তৈয়বুর রহমান (সাতক্ষীরা) নামের এক আলেমের জ্বালাময়ী বক্তব্যঃ (সংক্ষেপিত এবং আঞ্চলিক ভাষার টান আছে বলে পরিমার্জিত )

আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী শুধু একজন বিশ্ববরণ্য আলেমেদ্বীন নয় তিনি বাংলার জমীনের একজন আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ওলি। গায়ের জোড়ে বললে তো হবেনা দলিল দিতে হবে। এখনি দলিল দিচ্ছি। দলিল মুখস্ত করেন আর দাতভাঙ্গা জবাব দেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। তাফসিরে ইবনে কাসীর এর মধ্যে আছে কাউকে আল্লাহর ওলি বলতে হলে নূন্যতম তিনটি শর্ত লাগবে।
প্রথম শর্ত হল বিসমিল্লাহর বা থেকে সূরা নাসের সিন পর্যন্ত সমস্ত আরবী গ্রামার দিয়ে পড়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। আসুন দেখি এই যোগ্যতা আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদীর আছে কিনা?
সৌদী আরব একবছর সারাবিশ্ব থেকে ১০০০ আলেমকে আরবী ভাষার উপর দক্ষতার পরীক্ষা নিয়েছিল। এই ১০০০ আলেমের মধ্যে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী প্রথম হয়েছিলেন রেকর্ড সংখ্যক মার্ক পেয়ে।
দ্বিতীয় শর্ত হল বিসমিল্লাহর বা থেকে সূরা নাসের সিন পর্যন্ত অর্থসহ ব্যাখ্যা করার যোগ্যতা থাকতে হবে। বাংলাদেশে সাড়ে বার হাজার পীর। যে জিনিস তত ভাল তার নকল তত বেশী বের হয়। হক্কানী পীরদের উপর শ্রদ্ধা রেখে বলছি- সাড়ে বার হাজার পীরের মধ্য থেকে আলেমদের একপাশে রাখেন আর আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদীকে এক পাশে রেখে একটি আয়াতের তাফসির করতে বলেন, আয়াতটি হল- আকিমুস সালাত ওয়াতুজ্জাকাত। অনেকেই হয়ত আকিমুস সালাত এর ব্যাখ্যা করতে পারবে কিন্তু ওয়াতুজ্জকাত এর থেকে ইসলামী অর্থনীতির ব্যাখ্যা চাইতে গেলে বেশীরভাগ পীরই কাঁপতে কাঁপতে পইরা মইরা যাবে।আর আল্লামা সাইদীর সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলে যাবে কিন্তু ব্যাখ্যা শেষ হবেনা।
তৃতীয় শর্ত হল মাথা থেকে পা পর্যন্ত সুন্নতী লেবাস থাকতে হবে। আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদীর সুন্নতী লেবাস আছে কিনা বাংলাদেশের সকল মানুষই তা ভাল করে দেখছে জানছে।
এখন আপনারাই বলুন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী আল্লাহর ওলি কিনা?
প্রতি বছর আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদীর হাত ধরে গড়ে ১৫-২০ জন বিধর্মী মুসলমান হয়েছে। বাংলাদেশে এমন একজন পীরের নাম বলুন যার হাত ধরে প্রতিবছর ২০ জন নয় কমপক্ষে ১ জন করে মুসলিম হয়েছে? পরিসংখ্যানে পাওয়া যাবে কি?
বাংলার জমীনের আল্লাহর এই শ্রেষ্ঠ ওলি এখন ভাল আছেন না কষ্টে আছেন? যদি কষ্টে থেকেই থাকে তবে আপনারা কি আর বসে থাকবেন?
আমরা চট্টগ্রামের এই ময়দান থেকে ঘোষনা করতে চাই- বাংলার জমীনের আল্লাহর এই শ্রেষ্ঠ ওলিকে নিয়ে আর লীলাখেলা করা চলবে না। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। আর নয়তো বাংলার তৌহিদী জনতা তার দাত ভাঙ্গা জবাব দেবার জন্য প্রস্তুত আছে। কি আপনারা সবাই প্রস্তুত তো?
(এর পর কয়েকমিনিট শুধু শ্লোগান---)
Date: 2013

Friday, May 25, 2018

নজরুল সঙ্গীতের বিষয়-বৈচিত্র্য

আখতার হামিদ খান: চর্যাপদ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালের বাংলা গান রচয়িতাদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামের গানে বিষয়ের যে বৈচিত্র্য, অন্য কারও গানে তা নেই। যুগের প্রয়োজনে এক এক কালে এক এক বিষয় প্রাধান্য বিস্তার করে। চর্যাগানের মূল বিষয় ছিল আধ্যাত্মিকতা। বৈষ্ণব পদাবলীতে পৌরাণিক বিষয় স্থান পেয়েছে। তার সঙ্গে কোথাও কোথাও প্রেমরস মিশ্রিত হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ের গানে লৌকিক ধ্যান ধারণা প্রবেশ করেছে। পরাধীনতার যুগে এসে গানের বিষয় হয়েছে দেশাত্মবোধ ও বিদ্রোহ চেতনা। এসব ছাপিয়ে সাম্প্রতিককালে প্রাধান্য বিস্তার করেছে মানবীয় প্রেম।
বাংলা গানের বিকাশ ও সমৃদ্ধির ধারায় অন্যতম প্রধান হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন এবং কাজী নজরুল ইসলাম। এছাড়াও বাংলা গানকে যাঁরা সমৃদ্ধ করেছেন, নতুন সুর ও রীতির প্রবর্তন করেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রামপ্রসাদ সেন, রামনিধি গুপ্ত, দাশরথি রায়, হাসন রাজা, লালন ফকির, বিজয় সরকার প্রমুখ। এঁদের প্রত্যেকের গানেই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। গানের বিষয়, সুর, আবদনে  রয়েছে স্বকীয়তা। কিন্তু অনেকের গানেই বিষয়-বৈচিত্র্য নেই। কেউ শ্যামাসঙ্গীত লিখেছেন তো অন্য কোন বিষয়ে লেখেননি। কেউ শুধু অধ্যাত্মিক ভাবের গান রচনা করেছেন। কেউ বাউল বা কেউ আধুনিক প্রেমমূলক গান। আবার কেউ কেউ নানা বিষয় নিয়ে গান লিখেছেন। কিন্তু এত ব্যাপক বিষয়ের অবতারণা নজরুল ছাড়া শ্যামাসঙ্গীতও রচনা করেছেন। রামনিধি গুপ্ত টপ্পা অঙ্গের গান। দাশরথি রায় পাঁচালি গান রচনা করেছেন। হাসন রাজা-লালন ফকির লোকসঙ্গীত, বাউল গান রচনা করেছেন। বিজয় সরকারের গানের বিষয় আধ্যাত্মিকতা। এঁদের প্রত্যেকের গানেই যে কোন একটি বিষয় নির্ভর করেছে। একই বিষয় ও ভাবের গান রচনা করেছেন সারা জীবন ধরে। ব্যতিক্রম রবীন্দ্র, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ ও রজনীকান্ত,। দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ এবং রজনীকান্ত মূলত ভক্তিমূলক, দেশাত্মকবোধক এবং প্রেম বিষয়ক গান রচনা করেছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল অবশ্য হাস্যরস বিষয়ে কিছু গান রচনা করেছেন। কিন্তু এ তিন জনের গানেই খুব বেশি বিষয় বৈচিত্র্য নেই। বিষয় বৈচিত্র্য রয়েছে রবীন্দ্র-নজরুলের গানে বেশি। এত বিচিত্র বিষয় নিয়ে বাংলার আর কোন গীতিকার সঙ্গীত রচনা করেননি। নানা বিষয় সঙ্গীত লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। নজরুল লিখেছেন তারও বেশি বিষয় নিয়ে।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, গানের বিষয় বলতে আমি গানের মর্মবাণীকে যেমন বুঝাচ্ছি, তেমনি বুঝাচ্ছি সঙ্গীতের ধারা বা শ্রেণীকে। অর্থাৎ কথার অন্তর্নিহিত ভাব কোন আবেদন প্রকাশ করছে, সে অনুসারেই সঙ্গীতের শ্রেণীকরণ করছি। যেমন ভক্তিমূলক, আধ্যাত্মিক, বৈষ্ণব, পদাবলী, কীর্তন, জারি, সারি, ভাটিয়ালি, পল্লীগীতি, গজল, প্রেমসঙ্গীত ইত্যাদি। সঙ্গীতের এই নানা শাখায় বিচরণ করেছেন নজরুল। রবীন্দ্রনাথও বিভিন্ন, বহু বিষয়ে গান লিখেছেন। যেমনস ব্রহ্মসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক, ভক্তিমূলক, কীর্তন, পদাবলী, প্রেম, প্রকৃতি, সম্প্রীতি, সমাজসচেতনা, আধ্যাত্মিকতা, বাউল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গান রচনা করেছেন। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সুরের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন সুরে। রামপ্রসাদী, কীর্তন, বাউল সুরের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন তাঁর গানে। কিন্তু নজরুল আর একটু এগিয়ে বাংলায় গজল রচনা করেছেন। মধ্যপ্রাচ্য অর্থাৎ আরবীয় সুরে সঙ্গীত রচনা করেছেন। জারি, সারি, মুর্শিদি, মারফতি, ভাটিয়ালি, গান যেমন লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন, শ্যামাসঙ্গীত, কীর্তন, ভজন ইত্যাদি গান; আবার আধুনিক মানবীয় প্রেমসঙ্গীত, রাগসঙ্গীত, বিদ্রোহ ও দেশাত্মকবোধক গানও লিখেছেন নজরুল। 
গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নজরুল অজ¯্রভারে গান লিখে যাচ্ছিলেন। সেই গানের ভা-ার পরিমাণে যেমন বিপুল, শ্রেণী বিভাগেও তেমনি বিচিত্র। লঘু বাংলা গান থেকেও গুরুগম্ভীর ধ্রুপদ পর্যন্ত বাংলা গানের হেন শাখা নেই যাতে তিনি গান রচনা করেননি। বিদেশি গানের অনুকরণে বিদেশি সুর বসিয়েও অনেক গান রচনা করেছেন তিনি। বৈচিত্র্য ও বিপুলতা এ দুইই নজরুলের সঙ্গীত প্রতিভার প্রাচুর্যের স্বাক্ষর বহন করে।’
প্রায় চার হাজার গান রচনা করেছেন নজরুল। এ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। আর নজরুলের গানের কথা, সুর ও বিষয়-বৈচিত্র্য সকলকে বিস্ময়াভিভূত করে। বৈষ্ণব যারা তাঁরা রাধাকৃষ্ণের বাল্যলীলা, প্রেমলীলা ও গোষ্ঠিলীলায় সুর-চিত্র দর্শনের দুর্লভ সুযোগ লাভ করবেন নজরুলের রচনায়। শাক্ত যিনি, তিনি শ্যামামায়ের পায়ের তলায় নিজের মনটিকেও একটি রাঙা জবা করে ধরে দিতে পারেন নজরুলের শ্যামসঙ্গীতের খেয়ায় ভেসে। মুসলমান যিনি, তিনি ঈদের বাঁকা চাঁদ প্রথম দেখার আনন্দে আত্মহারা হবার ভাষা খুঁজে পাবেন এই নজরুল গীতির ভা-ার থেকেই। প্রেমিক যিনি, তিনি প্রেমের বিভিন্ন স্তরের সুখের ও শোকের সাড়া পাবেন নজরুলের গানে। তাঁর হাসির  গানের সংখ্যাও কম নয়। তাঁর দেশাত্মবোধক গান সারা বাংলা তথা ভারতের নিপীড়িত জনগণের অন্তর মথিত বাণী।
সারা জীবন নজরুল নানা জায়গা ঘুরছেন, বিচিত্র পেশা গ্রহণ করেছেন, বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। নিজে ছিলেন শিল্পী এবং সুর¯্রষ্টা। আর তাই অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয়ই তার সঙ্গীতের বিষয় হয়ে উঠেছে। তাঁর কর্ম এবং অভিজ্ঞতা যেমন বিচিত্র ছিল; তেমনি তাঁর গানের বিষয়ও বিচিত্র ছিল। সঙ্গীত ছিল তাঁর একান্ত ব্যক্তিক অনুভূতির পরিম-ল। সঙ্গীত রচনাতেই সম্ভবত তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন বেশি। আর এ কারণেই তার সঙ্গীত এত বিপুল ও বৈচিত্র্যময়। জাত-পাতে তাঁর বিশ^াস ছিল না। তিনি মানুষ। তিনি সর্ব জাতির, সর্ব ধর্মের। আর এ বোধেরই প্রকাশ দেখা যায় তাঁর বিচিত্র বিষয়ের গানে। এদিকে যেমন লিখেছেন ভজন, কীর্তন, শ্যামসঙ্গীত, অন্যদিকে তেমনি লিখেছেন ইসলামি ভক্তিমূলক গান, জারি, সারি, মুর্শিদি মারফতি।
লেটোর দলকে কেন্দ্র করেই কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গীত ও কাব্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে। এখানেই একই সঙ্গে বহু বিচিত্র বিষয়ে গান রচনায় তাঁর হাতে খড়ি হয়। লেটোর দলের জন্য পালা রচনা করতে গিয়ে মুসলিম ও হিন্দু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে নজরুলের পরিচয় ঘটে। তিনি একদিকে যেমন মুসলিম জীবনধারা থেকে কাহিনী ও গীত রচনার উপাদান সংগ্রহ করেন, অপরদিকে হিন্দু পৌরাণিক উপাখ্যানের পটভূমিতেও পালাগান রচনা করেন। তাঁর সে সময়কার রচনাতেই এই দুই ঐতিহ্য¯্রােতের সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। নজরুলের পরবর্তীকালের বহু রচনায় মুসলিম ও হিন্দু ঐতিহ্যের যে অসামান্য সহাবস্থিত রূপটি প্রকাশ পেয়েছিল, তার সূচনা ঘটে এই পর্বে। তাছাড়া লেটোর দলের সঙ্গে যুক্ত হবার ফলে তিনি বর্ধমান অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়েও সুযোগ পেয়েছিলেন। সে অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রচলিত ঝুমুর গানের সঙ্গে সে সময়ই নজরুলের পরিচয় ঘটে। পরবর্তীকালে ঝুমুর অঙ্গে বহু গান রচনা করেছিলেন তিনি। এই বিচিত্র অভিজ্ঞতার প্রকাশই তাঁর নানা গানে। এমন কোন বিষয় নেই, যে বিষয় নিয়ে তিনি গান রচনা করেননি।
নজরুলের এই ব্যাপক কর্মযজ্ঞ, বিশাল বিষয়-বৈচিত্র্যময় সঙ্গীত ভা-ার পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বাংলা গানে যে সব ধারা প্রচলিত রয়েছে, নজরুলের গানেও সে সব ধারা রয়েছে। নজরুলের  গানের উল্লেখযোগ্য ধারাগুলো হচ্ছে- ভজন, কীর্তন, শ্যামাসঙ্গীত, জারি, সারি, ভাটিয়ালি, পল্লীগীতি, মুর্শিদি, মারফতি, হামদ, নাত, আধুনিক প্রেমসঙ্গীত, গজল, রাগসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক, বাউল সঙ্গীত, ঝুমুর, বিদ্রোহমূলক, হাসির গান ইত্যাদি। বাংলার আর কোন সঙ্গীত রচয়িতা এত বিচিত্র বিষয় নিয়ে গান রচনা করেননি। নজরুল গানের এই প্রত্যেকটি শাখায় সফলতা লাভ করেছেন।  এখানেই নজরুলের শ্রেষ্ঠত্ব। 
নজরুলের গানে এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে ভজন গান। ভজন এক জাতীয় আরাধনা সঙ্গীত বা ভক্তিগীতি। ঈশ্বর বন্দনাই এ গানের উদ্দেশ্য। অন্য কোন বাংলা গান রচয়িতা নজরুলের মত এত উৎকৃষ্ট, সমৃদ্ধ এবং বিপুল ভজন রচনা করতে সক্ষম হননি। তাঁর ভজন তথা হিন্দুধর্মীয় সঙ্গীত যেমন বিপুল, তেমনি বিস্ময়কর সঙ্গীত যেমন বিপুল, তেমনি বিস্ময়কর রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ। ‘হে গোবিন্দ রাখো চরণে’, ‘সখি সে হরি কেমন বল,’ ‘খেলছি এ বিশ্ব লয়ে,’ ‘অনাদি কাল হতে অনন্ত লোক গাহে তোমারি জয়’, ‘আহার দিবেন তিনি রে মন, জিভ দিয়াছেন যিনি,’ ‘অঞ্জলি লহৈা মোর সঙ্গীতে’, ‘কোথা তুই খুঁজিস ভগবান’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য গানসহ বহু ভজন লিখেছেন নজরুল।
বুলবুলের মৃত্যু নজরুলের জীবনে এক গভীর পরিবর্তনের বীজ বপন করে। অগ্নিগর্ভ কবিতা ও গীত রচয়িতা বিদ্রোহী নজরুল এই শোকের আঘাতে অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েন। এক প্রকার আধ্যাত্মিকতা তাঁকে গভীরভাবে পেয়ে বসে। অন্তর্গত বিষাদ ও আধ্যাত্মিকতাই যেন ছিল তার চৈতন্যের বাদীস্বর। সেই সময় থেকেই নজরুলের ভেতরে ভক্তিমূলক গান লেখার প্রবণতা দানা বাঁধতে থাকে। এবং পরবর্তী সময়ে তিনি ইসলাম ও হিন্দু ধর্মীয় আবেগের পটভূমিতে প্রচুর গান রচনা করেন। ভজনগুলো সেই অনুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ। নজরুলের গানের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এই ভজন জাতীয় গানগুলো। কোন কোন ভজন গানে শিবের আরাধনা ব্যক্ত হয়েছে। কোনটায় কৃষ্ণের কথা। পদাবলী কীর্তনের ঢঙে নজরুল প্রচুর কীর্তন রচনা করেছেন। কথা ও সুরে পুরোপুরি কীর্তন। কিছু গান ভজনও বলা চলে, আবার কীর্তনও বলা চলে; দুইয়েরই প্রভাব রয়েছে। যেমন: ‘হৃদি পদ্মে চরণ রাখো, বাঁকা ঘনশ্যাম; গোষ্ঠের রাখাল বলে দেরে কোথায় বৃন্দাবন ইত্যাদি।
পদাবলী কীর্তন বা কীর্তন গান বাঙালির বহু কালের ঐতিহ্যের ধারক। এগুলো বাঙালির অন্তর-সম্পদে পূর্ণ। বাংলার নিজস্ব ঢঙ, চিরায়ত সুর এ গানে বিধৃত। রবীন্দ্রনাথও বহু কীর্তনাঙ্গের গান রচনা করেছেন। নজরুলের কীর্তন খুবই ঋদ্ধ। কথা ও সুরের সার্থক সমন্বয় ঘটেছে নজরুলের কীর্তনে। আধুনিককালে যাঁরা কীর্তন গান রচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নজরুলের কীর্তনই শ্রেষ্ঠ এবং সংখ্যায়ও প্রচুর। উল্লেখযোগ্য কীর্তনগুলো হচ্ছে- ‘বাজে মঞ্জুল মঞ্জীর’, ‘সখি আমিই না হয় মান করেছিনু; ‘ওরে নীল যমুনার জল, আমি সুখে লো গৃহে রব, ‘না মিটিতে মনোসাধ, ‘মন মানস মাধবী ফুটিল কুঞ্জে, মণি মঞ্জীর বাজে অরুণিত চরণে, ‘এলো নন্দের নন্দন নবঘনশ্যাম। মধ্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলীর চেয়ে নজরুলের এ কীর্তনগুলো শিল্প সফরতায় কোন অংশেই কম নয়।
নজরুলের গানের একটা বিশাল অংশ জুড়ে যেমন রয়েছে ভজন এবং কীর্তন গান; তেমিন ব্যাপক অংশ জুড়ে রয়েছে শ্যামাসঙ্গীত। এত বিপুল পরিমাণ শ্যামাসঙ্গীত নজরুল ছাড়া আর কেউই লেখেননি। নজরুল ইসলামি ভাবধারার গানের থেকে অনেক অনেক বেশি তাঁর শ্যামাসঙ্গীত। রামপ্রসাদ শ্যামাসঙ্গীত রচনার সূত্রপাত করেন। নজরুল শ্যামাসঙ্গীতে কোথাও শ্যামা মাতৃরূপিণী, কোথাও কালীর রৌদ্রী রূপের ভয়ঙ্কর বর্ণনা, আবার কোথাও দেশাত্মবোধের প্রেরণা প্রকাশিত। অন্যান্য গানের চেয়ে নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং পরিমাণের প্রচুর বেশি। তাঁর উল্লেখযোগ্য শ্যামাসঙ্গীত হচ্ছে- ‘বলরে জবা বল;’ ‘শ্যামা নামের লাগলো আগুন, আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায়, শ্মশানকালীর রূপ দেখে যা; শ্মশানে জাগিছে শ্যামা, ‘থির হয়ে তুই বস দেখি মা; ‘ভারত শ্মশান হলো মা তুই; আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশি শ্যামা কালী; শ্যামা তোর নাম যার জপমালা; ওমা খড়গ নিয়ে মাতিস রণে।
নজরুল প্রচুর পরিমাণে জারি, সারি, ভাটিয়ালি এবং পল্লীগীতি রচনা করেছেন। এসব গানেও বাঙালির, আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধরা পড়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আবেগ যেন এসব গানে স্থির হয়ে রয়েছে। ‘পদ্মার ঢেউরে, মোর শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে, যা যারে, এ বিখ্যাত গানটি ভাটিয়ালি গানের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এছাড়াও রয়েছে- ‘নদীর এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে, এইতো নদীর খেলা; আমার গহীন জলের নদী; নদীর নাম সই অঞ্জনা; বাঁশি বাজায় কে কদম তলায়, ওগো ললিতে, পথভোলা কোন রাখাল ছেলে’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য গান।
ভক্তিমূলক গান রচনায় নজরুল অদ্বিতীয়। নজরুলের ইসলামি ভাবধারায় গানগুলোতে মুসলিম ঐতিহ্য ধরা পড়েছে। মুর্শিদি মারফতি হামদ নাত প্রভৃতি বিষয়ে নজরুল ইসলামি ভাবধারায় প্রচুর গান লিখেছেন। ভক্তি, শরণাগতি ও মাহাত্মবোধের প্রেরণা থেকে নজরুল ইসলাম ধর্ম সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয় অবলম্বনে ুদই শতাধিক গান রচনা করেছেন। এই সব গান নজরুলের ইসলামি গান রূপে খ্যাত। বাংলায় ইসলামি ভক্তিগীতির প্রবর্তন নজরুলই প্রথম করেন। তাঁর রচিত ইসলামি গান বাংলা গানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। বাংলায় ইসলামি গানের সর্বশ্রেষ্ঠ রূপকারও নজরুল। আল্লাহর প্রশস্তি, রসূল প্রশস্তি, ধর্মীয় বিধান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উপাসনা, উপাসনালয় প্রভৃতি নানা বিষয় অবলম্বনে নজরুলের ইসলামি গানগুলো রচিত। নজরুলের উল্লেখযোগ্য ইসলামি গানগুলো হচ্ছে- ‘মহম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে, রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল, তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে; খোদার প্রেমেরর শরাব পিয়ে; শোনো শোনো ইয়া ইলাহী আমার মোনাজাত; মওলা আমার সালাম লহ; ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়; মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই; মরু সাহারা আজ মাতোয়ারা; মোহাম্মদ মোর নয়ন-মণি; তোমার নুরের রোশনী মাখা; রোজ হাশরে আল্লাহ আমার করো না বিচার।’
আধুনিক বাংলা প্রেমগানের বিশিষ্ট রূপকার নজরুল। তৎকালীন ছায়াছবির একটা প্রধান অংশ জুড়ে ছিল নজরুলের গান। আধুনিক গানকে নজরুলই জনপ্রিয়তা দান করেছেন। তাঁর আধুনিক গানের আবেদন আজকে এতটুকু হ্রাস পায়নি। আধুনিক গানের পরিমাণও নজরুলের কম নয়। নজরুলের আধুনিক গানের সুর বৈচিত্র্য আশ্চর্যভাবে বিস্ময়কর। কালজয়ী কিছু গান গভীর নিশীতে ঘুম ভেঙ্গে যায়; তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি, প্রিয়, জনম জনম গেল আশা পথ চাহি; মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম; আজো মধুর বাঁশরী বাজে; আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো; তবু আমারে দেবো না ভুলিতে; যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই, কেন মনে রাখো তারে; আমি চাঁদ নহি অভিশাপ; মনে পড়ে আজ সে কোন জনমে, বিদায় সন্ধ্যা আসিল; মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী; ভীরু এ মনের কলি; মোর না মিটিতে আশা ভাঙিল খেলা ইত্যাদি।
বাংলায় গজল গানের প্রচলন মূলত নজরুলই করেন। গজল মূলত পারস্য প্রেম সঙ্গীত। ফার্সি কবিরা গজল রচনা করতেন। এ প্রেম ঐশী প্রেমপ্রার্থী। অন্য সকল প্রকার কাব্যগীতির মত জগলেরও সঙ্গীতাদর্শ হচ্ছে সুরের সাহায্যে গানের বাণীকে ধ্বনিত করে তোলা, যেন পদবাহিত ব্যঞ্চনা সুরের স্পর্শে প্রমূর্ত হয়ে উঠতে পারে। 

Popular Posts