Wednesday, July 11, 2018

রমজান পরবর্তী মাসসমূহে একজন মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য -ড. মুহা: রফিকুল ইসলাম

রমজান মাস রহমত বরকত এবং নাজাতের সওগাত নিয়ে আমাদের মাঝে এসেছিল। খুব দ্রুত আবার তা চলে গেলো। কিন্তু রেখে গেছে অনেক স্মৃতি। অনেক ভালোলাগার আবেশ। এখনও কিছু খেতে গেলে মন কেঁপে ওঠে, মনে হয় রোজা রেখেছি! আবার একটি বছরের অপেক্ষা! ভাগ্যে আছে কি না মহান আল্লাহ ভালো জানেন। তবে এ মাসে যারা সিয়াম পালন করেছে তারা অনেক ব্যাপারে সরাসরি মহান আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলার সাথে সিয়াম পালনকারীদের সম্পর্কগুলো নিম্নরূপ:
ক. মহান আল্লাহর প্রতি যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা সূরা আল বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলেন, হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল।এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলি সৃষ্টি হয়ে যাবে
খ. এমন একটি মাসের সাথে আমরা সম্পৃক্ত ছিলাম যে মাসের মর্যাদা সকল মাসের থেকে বেশি এবং হাদিসে যাকে ‘সায়্যিদুস শুহুর’ বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ সে মাসেই আল কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। তিনি সূরা আল বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলেন, রমজানের মাস, এ মাসেই কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সংবলিত, যা সত্য-সঠিক পথদেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়।কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাৎ পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে রোজা রাখা অপরিহার্য।
গ. এমন একটা মাসের সাথে যুক্ত ছিলাম যে মাসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু কাজ থেকে বিরত থাকলেও রাত্রে কোন কাজ থেকে বিরত থাকার দরকার ছিল না। যা নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমেই বলা হয়েছে,
ঘ. আমরা এমন একটা মাস অতিক্রম করেছি যে মাসে ছিললাইলাতুল কদর, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। সেটাও আল কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন, কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও বেশি ভালো, ফেরেশতারা ও রূহ এই রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে নাজিল হয়।এ রাতটি পুরোপুরি শান্তিময় ফজরের উদয় পর্যন্ত।(সূরা আল কদর)
রমজান মাসে আমরা অসংখ্য হাদিসের মুখোমুখি হয়েছি। যে সব হাদিসের মাধ্যমে রাসূল সা. মানবতার সফলতার কথা, মানুষের পুরস্কারের কথা, তাদের নিরাপত্তার কথা এমনকি তাদের মুক্তির চূড়ান্ত বয়ান সেখানে বর্ণনা করেছেন।

চলুন তার কিছু বর্ণনার সাথে আমরা পরিচিত হই।

ক.
আমরা এমন মাসের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম যে মাসে বদর যুদ্ধ হয়েছে। ঈমান এবং কুফরের মাঝে সরাসরি সংঘাত হয়েছে এবং চূড়ান্তভাবে ইসলাম বিজয়ী হয়েছে। এ বিষয়ে অনেক আয়াত হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যুদ্ধের কিছু পূর্বে রাসূল সা. এই ক্ষুদ্র কাফেলার বিজয়দানের জন্য অত্যন্ত আবেগঘন এক দোয়ায় বলেন, ইবন আব্বাস রা. বদরের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, রাসূল সা. তার হাত উঁচু করে বললেন: ‘হে আল্লাহ তুমি যদি এই দলকে ধ্বংস করে দাও তাহলে এই পৃথিবীতে কখনও কেউ আর আর ইবাদত করবে না’।…
খ.
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গী-সাথীদের এ মর্মে সুসংবাদ শোনাতেন, ‘তোমাদের সমীপে রমজান মাস এসেছে। এটি এক মোবারক মাস। আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এতে জান্নাতের দ্বার খোলা হয়। বন্ধ রাখা হয় জাহান্নামের দরোজা। শয়তানকে বাঁধা হয় শেকলে। এ মাসে একটি রজনী রয়েছে যা সহস্র মাস হতে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে যেন যাবতীয় কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো’। নাসায়ী : ২৪২৭; মুসনাদ আহমাদ : ৮৯৭৯; শুআবুল ঈমান : ৩৩২৪
গ.
যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, শয়তানকে আটক করা হয়। রাসূল সা. বলেছেন, ‘যখন রমজানের প্রথম রাত্রি আগমন করে শয়তান এবং অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের সকল দরোজা বন্ধ করে দেয়া হয়; খোলা রাখা হয় না কোন দ্বার, জান্নাতের দুয়ারগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়; বদ্ধ রাখা হয় না কোন তোরণ। এদিকে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, ‘হে পুণ্যের অনুগামী, অগ্রসর হও। হে মন্দ-পথযাত্রী থেমে যাও’।আবার অনেক ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আর এমনটি করা হয় রমজানের প্রতি রাতেই’। তিরমিযি : ৬৮২; ইবনমাজা : ১৬৪২; ইবনহিব্বান : ৩৪৩৫
ঘ.
এ মাসে যারা সিয়াম সাধনা করছে এবং মহান রবের কাছে কিছু প্রত্যাশা করেছে তাদের দোয়া বিফলে যাবে না। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন: তিন ব্যক্তির দু‘আ রদ হয় না। ন্যায়বিচারক শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তি যখন সে আল্লাহর কাছে দু‘আ করে..।(তিরমিজি)
ঙ.
এমন একটি মাসের সাথে আমরা ছিলাম যে মাসে কোন ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং সওয়াবের প্রত্যাশায় রোজা রেখেছে তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নবী সা. বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে সাওম পালন করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারি ও মুসলিম)
সম্মানীয় পাঠক, আমরা কি কখনও একটিবার হৃদয় দিয়ে ভেবেছি, আমাদের সিয়াম সাধনার পুরস্কার মহান আল্লাহ নিজে প্রদান করবেন! দুনিয়াতে কোন বড় মানুষের হাত থেকে সামান্য প্রাইজ পেলেই তা ছবি আকারে বাঁধাই করে রাখি, কেউ বেড়াতে এলে তাকে দেখাই, সবাই বাহবা প্রদান করে আরো কত কী!!
চ.
আমরা যারা সিয়াম পালন করেছি তাদের ব্যাপারে রাসূল সা. এর সুমহান ঘোষণা হচ্ছে- আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন “প্রত্যেক আদম সন্তানকে তার নেক আমল দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: তা অবশ্য সিয়ামের প্রতিদান ছাড়া; কারণ সিয়াম আমার জন্য আর আমিই তার প্রতিদান দেবো। কেননা আমার কারণে সিয়াম পালনকারী তারযৌনকার্য ও আহার বর্জন করে থাকে। (বুখারি ও মুসলিম)
ছ.
বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার নিজের জন্য একমাত্র সিয়াম ছাড়া, কারণ তা কেবল আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেবো। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। যদি তোমাদের কেউ সিয়াম পালন করে, তাহলে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে; যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, তবে সে যেন বলে, আমি সিয়াম পালনকারী। ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন, নিশ্চয়ই সিয়াম পালনকারীর মুখের না-খাওয়াজনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও অধিক প্রিয়। রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছেÑ একটি যখন সে ইফতার করে, অন্যটি যখন সে তার রব আল্লাহর দিদার লাভ করবে তখন আনন্দ প্রকাশ করবে।”
জ.
রমজান মাসে যে রোজাদারকে ইফতার করাবে তার এ কাজ তার গুনাহ মাফ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার কারণ হবে। রাসূল সা. এ ব্যাপারে বলেন: হযরত যায়েদ বিন খালেদ জুহানি রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করালো তাকে রোজাদারের অনুরূপ সওয়াব দান করা হবে।কিন্তুরোজাদারের সওয়াবের কোন কমতি হবে না। (তিরমিজি)
অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তিকোন রোজাদারকে ইফতার করাবে তার এ কাজ তার গুনাহ মাফ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে বাঁচাবার কারণ হবে।
ঝ.
সিয়াম পালনকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সিয়াম সুপারিশ করবে।আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে পানাহার ও যৌনাচার হতে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি রাতের ঘুম থেকে তাকে বিরত রেখেছি, সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (আলবানী, সহীহ আল জামি)
আমরা প্রাগুক্ত সকল আয়াত ও হাদিসের সাথে একটি মাস অতিবাহিত করেছি। প্রতেকটা আমলের সাথে যুক্ত ছিলাম। মহান আল্লাহ নিজেই আমাদের পুরস্কার হবেন, এ আশা আমরা অবশ্যই লালন করি। সাওম এবং আল কুরআন আমাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে এ বিষয়টি সুনিশ্চিত। তাহলে আমাদের আর কোনো চিন্তা নেই। আমাদের কোন শঙ্কা নেই। ইনশাআল্লাহ আমরা নাজাত পেয়ে যাবো।
কিন্তু রমজান মাস চলে গেলে আমাদের অবস্থাতো ভিন্ন হয়ে যায়। পরের মাসের প্রথম দিন থেকে আমাদের অধঃপতন শুরু হয়ে যায়। কেন হয়? কারণ, শয়তান আবার অবমুক্ত হয়ে যায়। তার যত বাহিনী আছে তাদের নিয়ে সে বনি আদমের পেছনে শতভাগ লেগে যায়। সে আল্লাহর গোলামদের বিপথগামী করার সকল জাল বিস্তার করে। আমরাও তার জালে আটকে যাই। তাহলে ব্যাপারটা কেমন হলো? মহান আল্লাহ এবং রাসূলের সরাসরি এতো আয়াত এবং হাদীস উপেক্ষিত হয়ে শয়তান জয়ী হয়ে যাবে? মহান আল্লাহর এতো এতো দয়া, রহমত ও মাগফিরাতের ঘোষণা সত্ত্বেও শয়তানের শয়তানিকিভাবে সিয়াম সাধনাকারী মুমিনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে? আমরা যদি প্রকৃত অর্থে রমজান পরবর্তী আবার রমজান পূর্ব মাসের মত হয়ে যাই তাহলে সিয়াম সাধনার শিক্ষা কোথায় গেলো? আমরা পুরো একটি মাস কী অর্জন করলাম?
সাওমের মাসের সব প্র্যাকটিস যদি পরের মাস সমূহে বাদ হয়ে যায়, তাহলে আমরা হিপোক্রেট হয়ে গেলাম না? গোপাল ভাড়ের মত স্রষ্টাকে একটু ধোঁকা দেয়া হয়ে গেলনা ?সব নসিহত, সব বক্তব্য, সব মোনাজাত, সব কাকুতি-মিনতি নতুন মাসের পহেলা দিন থেকে বাদ গেল? তাহলে আমরা কি আসলেই রমজানের স্পিরিটে ছিলাম,না অভিনয় করেছিলাম? নাকি একমাস আমল করে সারা বছর আমলহীন থাকার লাইসেন্স পেয়ে গেলাম? নাকি মহান রবের সাথে তামাশা করেছি (নাউজুবিল্লাহ)। অথবা চূড়ান্তভাবে বলতে হবে রোজার মাসে এমন শক্তি অর্জন হয়নি যার মাধ্যমে পরবর্তী মাসগুলোতে শয়তানের সাথে ডিফেন্স করতে পারি।
সম্মানীয় ভাই ও বোনেরা আসুন আমরা আবারও গভীর মনোনিবেশ সহকারে একবার ভেবে দেখি, মহান আল্লাহ এবং রাসূল সা. কতগুলোআয়াত আর হাদিস বলেছিলেন আমার আপনারমত রোজাদারের ব্যাপারে? তিনি তো সেই রব যিনি আসমান জমিনের মালিক, তিনি তো সেই যিনি আমাকে আপনাকে ইচ্ছা করলেই মৃত্যু দিতে পারেন, তিনি তো সেই আল্লাহ ইচ্ছা করলেই নিঃস্ব করতে পারেন, তিনি তো সেই রব ইচ্ছা করলে অসুস্থ করে দিতে পারেন, শরীরের শক্তি কেড়ে নিতে পারেন, তিনি সেই রব্বুল আলামিন যিনি ইচ্ছা করলে সন্তান কেড়ে নিতে পারেন, তিনি পারেন আমাদেরসন্তান না দিতে, তিনি পারেন দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে, পারেন সবার সামনে অপমান করতে,সুন্দর চেহারা কুৎসিত করে দিতে!! তাহলে কেন কোন জিনিস আমাদের সকলকে রমজান পরবর্তী তার স্মরণ থেকে বাধা দিল?
আমরা সকলে পাগল দেখেছি নিশ্চয়? সকলেই কি আজন্ম পাগল ছিলো? সকলেকি আজন্ম বিকলাঙ্গ ছিলো? না বন্ধুরা না! তাহলে আমাদের কোন্ শক্তি আল্লাহ থেকে গাফিল করতে পারে? তিনি তাই আফসোস করে সূরা আল ইনফিতার এর ৬-৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন “হে মানুষ! কোন জিনিস তোমাকে তোমার মহান রবের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে,যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাকে সুঠাম ও সুসামঞ্জস্য করে গড়েছেন এবং যে আকৃতিতে চেয়েছেন তোমাকে গঠন করেছেন”।
অতএব, আমরা কোনভাবেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করব না। আমরা শয়তানকে বিজয়ী হতে দেবো না। মহান রবের নির্দেশ মেনে চলবো। রোজা পরবর্তী মাসসমূহে আল্লাহ এবং রাসূল সা. এর পক্ষ থেকে যা করতে বলা হয়েছে, সে সব কাজ করার মাধ্যমে এবং রোজার মাসে অর্জিত তাকওয়ার শক্তি দিয়ে পাপের সকল অন্ধকার দু’পায়ে মাড়িয়ে সিরাতুল মুস্তাকিমের মহাসড়কে উপনীত হবই ইনশাআল্লাহ।
রোজার মাসে অর্জিত তাকওয়া পরবর্তী এগারোটি মাসে কার্যকর করার জন্য নিম্নোক্ত আমলসমূহ অত্যাবশ্যকভাবে পালন করার চেষ্টা করতে হবে।

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা আদায় করতে হবে

সকল কাজ পূর্ণ এখলাস তথা একমাত্র মহান আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন: “আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে।” (সূরা আল-বাইয়্যেনাহ :৫)

সময় মত সালাত আদায় করা

সিয়াম পালনের সময় যেমন সালাতের গুরুত্ব ছিল, সিয়াম পরবর্তী কোনোভাবেই যেন জামাআতে সালাতের গুরুত্ব হ্রাস না পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ (সূরা নিসা :১০৩)
এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামাজ আদায় করা। (সহীহ মুসলিম : ২৬৩
-রমজানের ন্যায় কুরআনুল কারিমের তেলাওয়াত ও তরজমা শিক্ষার কাজ অব্যাহত রাখা
-রোজার মাসের ন্যায় কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা
-সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া।
-রমাদান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
-ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত’’ মুসলিম]

বশি বেশি দান-সদাকাহ করা

রমজান মাসের পর অন্যান্য মাসেও বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে।বিশেষ করে ইয়াতিম, বিধবা ও গরিব মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হাদীসে এসেছে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাদানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত’’-আল-বুখারী।
মানুষকে দ্বীনের কাজে আহবান করা। রমজানের শিক্ষার আলোকে এ কাজটি অব্যাহত রাখতে পারলে পরবর্তী মাসসমূহে আল্লাহর পথে চলা অত্যন্ত সহজ হয়। শয়তান কম ধোঁকা দিতে পারে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে- ‘‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম’’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ :৩৩)।
হাদিসে এসেছে, ‘‘ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’ [সুনান আত-তিরমীযি)

সর্বদা তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা

তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। এ সিদ্ধান্ত প্রতি মুহূর্তে প্রতি ক্ষণে গ্রহণ করতে হবে। কেননা তাওবাহ করলে মহান আল্লাহ খুশি হন। আল-কুরআনে এসেছে “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায়,তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।’’ (সূরা আত তাহরীম : ৮)]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি।” (সহীহ মুসলিম)
তবে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম হচ্ছে, মন থেকে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়া, আর তা হচ্ছে, “হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের ওপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’’
এর ফজিলত ও মর্যাদার ব্যাপারে বলা হয়েছে: “যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’’ (সহীহ আল বুখারী)

গরিব, মিসকিন ও অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের খাদ্য খাওয়ানো।

মহান আল্লাহ আল কুরআনে বলেছেন: আর আল্লাহর মহব্বতে মিসকিন,ইয়াতিম এবং বন্দীকে খাবার দান করে । (সূরা আদ-দাহর: ৮)
এ বিষয়ে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।’’ (আল-বুখারী )

আল্লাহর যিকর বা স্মরণ করা

বেশি বেশি মহান আল্লাহকে স্মরণ করা ও তাসবিহ পাঠ করা। সময় পেলেই সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ,লা ইলাহা ইল্লাল্লা, আল্লাহু আকবার,পড়া।এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলোসুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ,লা ইলাহা ইল্লাল্লা, আল্লাহু আকবার যে ব্যক্তি সুবহানাল্লাহ পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহু আকবার পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তিলা ইলাহা ইল্লাল্লা পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবেআলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিনপড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’। (মুসনাদ আহমাদ )

প্রত্যেক সপ্তাহর সোমবার এবং বৃহস্পতিবার রোজা রাখা। হাদিসে এসেছে এসব দিনে ব্যক্তির আমল মহান আল্লাহর কাছে পৌঁছানো হয়।

-আইয়ামে বিজের রোজা রাখা। অর্থাৎ আরবি মাসের ১৩,১৪ এবং ১৫ তারিখ সিয়াম পালন করা।
-কোন অন্যায় কাজ করার ইচ্ছা মনে আসলে আল্লাহ এবং রাসূল সা. এর সাথে প্রাগুক্ত সম্পর্কগুলো অবশ্যই স্মরণ করার চেষ্টা করা।
মূলত যিনি সিদ্ধান্ত নিবেন রোজার মাসের শিক্ষা এবং তাকওয়া অবশ্যই বাকি এগারোটি মাস বহন করবেন, লালন এবং পালন করবেন মহান আল্লাহ অবশ্যই তার নিয়তকে পরিপূর্ণ করবেন। আর যিনি অবহেলা করবেন, তিনি অবশ্যই শয়তানের কাছে পরাজিত হবেন। রোজার তাকওয়া এবং শিক্ষা তাকে বাঁচাতে পারবে না। এজন্য আমরা মহান আল্লাহর ওপর দৃঢ় আস্থা রেখে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো যে, রোজার মাসে মহান আল্লাহর রহমতে যে সকল ব্যাপারে শয়তানকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছি, সে সকল ব্যাপারে কোনোভাবেই শয়তানকে আর বিজয়ী হতে দিব না। আল্লাহ তা‘আলা এ সিদ্ধান্তে অটল থাকার তৌফিক দান করুন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ

ইসলামের দৃষ্টিতে সাহিত্যচর্চার অপরিহার্যতা -গাজী নজরুল ইসলাম


সাহিত্য জীবনের ফুল, সমাজের কুঞ্জ, মানবের জীবনালেখ্য। মন ও মননের আয়না। সাহিত্যে ফুটে ওঠে মানবজীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, স্মৃতি-বিস্মৃতি, আনন্দ বেদনার উপাখ্যান। ব্যক্তি-পরিবার, সংসার-সমাজ, রাষ্ট্রীয়-আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলসহ জীবন ও জগতের, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের, শিক্ষা ও সংস্কৃতির, শিল্প ও কারুকার্যের, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের, ব্যবসায় ও বাণিজ্যের, দ্বন্দ্ব ও বিগ্রহের, মনীষা ও মননশীল লেখ-চিত্রই হলো সাহিত্য।

সাহিত্যে রচিত হয় জীবনের বন্দনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গাথা, সৃষ্টি ও স্রষ্টার রহস্যপঞ্জি।
সাহিত্য শিক্ষার বাহন, জ্ঞানের সিন্ধু, বিবেকের হাতিয়ার, বুদ্ধি-বৃত্তির চালিকাশক্তি।
সাহিত্য দিয়ে মানুষ নিজেকে চিনতে পারে, অপরকে জানতে পারে, বিশ্বকে বুঝতে পারে, স্রষ্টাকে ধারণায় ধারণ করতে পারে।
পৃথিবীতে সকল জিনিসের দু’টি করে দিক আছে। একটি ভালো দিক অপরটি মন্দ দিক। একটি সুন্দর-অপরটি কুৎসিত। একটি পবিত্র-অপরটি অপবিত্র। একটি সত্যের অপরটি মিথ্যার। ইংরেজি প্রবাদ : Truth is beauty and beauty is truth. সত্যই সুন্দর এবং সুন্দরই সত্য।
সাহিত্যেরও দুটি দিক। একটি সত্যের এবং সুন্দরের অপরটি মিথ্যার এবং কুৎসিত। সাহিত্যে সত্য এবং সুন্দরের সৃষ্টিই হলো আসল কাজ। সত্য ও সুন্দর সাহিত্যই সত্যপন্থী (হক) মানুষ সৃষ্টি করতে পারে। অসত্য এবং অসুন্দর সাহিত্য সৃষ্টি করে বাতিলপন্থী মানুষ (বে-হক)। সত্য-সুন্দর ও হকপন্থীরাই আল্লাহ পাকের প্রতিনিধি (খলিফা)। অসত্য অসুন্দর এবং বাতিলপন্থীরাই আল্লাহবিরোধী-তাগুতি। হক ও তাগুতপন্থীর দ্বন্দ্ব দুনিয়ায় অবধারিত ঘটনা।
আল্লাহ পাক কুরআনে এরশাদ করেন, ‘‘তোমরা যারা আল্লাহতে ঈমান এনেছ, তারা সাধনা করে আল্লাহর পথে, আর যারা কুফরিতে ঈমান এনেছ, তারা সাধনা সংগ্রাম করে তাগুতের পথে।’’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৭৬)
সাহিত্যেও সাধনা আছে লড়াই আছে। যারা হকপন্থী তাদের কলমের সাধনা চলে সত্যের পথে, আল্লাহর পথে, আর যারা বাতিলপন্থী তাদের কলমের সাধনা চলে তাগুতের পথে।
আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, “ আল্লাহ তোমাদের কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আল আলাক : ৪)
সাহিত্য রচিত হয় কলমের সাহায্যে। অতএব সাহিত্যে চলে কলমের সাধনা-কলমের লড়াই। একদলের কলম চলে সত্য ও হকের পথে- আরেক দলের কলম চলে বাতিল ও তাগুতের পথে।
যারা বাতিলের পথে কলম চালায় তাদেরকে কুরআনে বলা হয়েছে গা’বুন। অর্থ বিভ্রান্ত। তাদের সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা “বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের (সাহিত্যিক)/লেখকদের অনুসরণ করে। বিভ্রান্ত কলম লেখকদের (কবি-সাহিত্যিক) যারা সমর্থন করে তা উদ্ভ্রান্ত।” (সূরা আশ্-শোয়ারা : ২২৪) এরা বাতিল, বিভ্রান্ত, নোংরা, অশ্লীল, কামোদ্দীপক, যৌন আবেদনমূলক, অবৈধ প্রেম-চর্চা, শারাব-সাকি, ঘৃণা-পাপাচার, দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ, হিংসা-অহংকার, উচ্ছৃঙ্খলতা-লড়াই-যুদ্ধ-উন্মাদনামূলক সাহিত্য লেখে। আর এদের অনুসারীরা উদ্ভ্রান্ত ন্তের মত ঐসব অশ্লীল অসৎ উন্মাদনামূলক সাহিত্য কিংবা কবিতা পঙক্তি পাঠ করে সমাজকে কলুষিত করে। ফ্যাসাদ বাধায়, ভোগ-সম্ভোগে কাতর হয়- নগ্নতায় বিভোর হয়- ফলে সমাজে নৈরাজ্য-উচ্ছৃঙ্খলতা-ধর্ষণ-খুন-রাহাজানি, লুটপাট- অবৈধ-সম্ভোগ এবং দখলদারিত্ব অবশ্যাম্ভাবী হয়ে ওঠে। এরা পরনিন্দা পরহিংসা, মিথ্যা অপবাদ, অহেতুক কাহিনী সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষ ঈমানদার হকপন্থী সত্য ও সুন্দরের পূজারিদের হেয়প্রতিপন্ন করে। এমনকি তাদের লেখায় তারা স্রষ্টা-সৃষ্টি, তৌহিদ-রেসালাত এবং ঈমানকে অস্বীকার করে। মহান আল্লাহ পাক এই সাহিত্যিকদের লেখা সাহিত্য-কবিতা অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। তৎকালীন আরবে যারা তথাকথিত জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত ছিল তাদেরকে প্রায়শই ‘কবি’ বলা হতো। আর ঐ সব নামধারী কবিই ছিল উপরিউক্ত বিভ্রান্ত উদ্ভ্রান্ত কবিতা ও সাহিত্যের জনক। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা ঐসব কবিকে নিন্দাবাদ জানিয়ে তারা বিভ্রান্ত এবং তাদের অনুসারীদের উদ্ভ্রান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ঐ আয়াত নাজিল হওয়ার পর হক ও সত্যপন্থী কবিদের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহা, হাস্সান ইবনে সাবেত, কাব ইবনে মালেক প্রমুখ প্রখ্যাত সাহাবী কবি ক্রন্দনরত অবস্থায় রাসূলুুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা)! আল্লাহ পাক তো এই আয়াত নাজিল করেছেন। আর আমরাও তো কবিতা রচনা করি, সাহিত্য রচনা করি। এখন আমাদের উপায় কী? রাসূলুল্লাহ (সা) তার স্বভাবসুলভ ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে বললেন, অধৈর্য হয়ো না, বরং আয়াতের শেষ অংশটাও পাঠ করো। এখানে বলা হয়েছে, তোমাদের কবিতা-সাহিত্য যেন ঐরূপ অনর্থক ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়। কাজেই তোমরা আয়াতের শেষাংশে উল্লিখিত ব্যতিক্রমধর্মীদের মধ্যে শামিল। সূরার শেষাংশে এরশাদ হয়েছে, “ইল্লালাজিনা আমানু অ আ’মিলুস সালিহাতি অ যাকারাল্লাহু কাছিরা….।” (সূরা আশ্-শোয়ারা : ২২৭) অর্থাৎ তবে তাদের কথা আলাদা, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে। এখানে উদ্ধৃত আয়াতে কালিমাগুলির মর্মকথা হলো এই যে, প্রথমাংশে কাব্য ও সাহিত্য চর্চার ঐ দিকগুলোকে কঠোর নিন্দা জানানো হয়েছে যা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়। যেমন যা অসত্য ও অসুন্দর, অশ্লীল ও উদ্ভ্রান্ত, যৌন-পাপাচারে সম্পৃক্ত, যা আত্মগর্ব, আত্মঅহংকারে, পরনিন্দায়-তিরস্কারে, মুশরিকি আচার আচরণে পরিপূর্ণ। এসব কাব্য ও সাহিত্যচর্চায় আল্লাহ পাকের অবাধ্যতা কিংবা স্মরণ থেকে বিরত রাখা হয়। অন্যায়ভাবে কোন ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর নিন্দাবাদ-অবমাননা, উন্মত্ত প্রণোদনা সৃষ্টি করে সমাজে বিশৃঙ্খলা, পরকীয়া, ধর্ষণ, হত্যা সর্বোপরি কদাচার ও অশ্লীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। এই ধরনের কবিতা ও সাহিত্য নিন্দনীয় ও অপছন্দনীয়।
অপরপক্ষে যেসব কবিতা ও সাহিত্য অশ্লীলতা, অস্পৃশ্যতা, কদাচার, ব্যভিচার, পরনিন্দা ও পরশ্রীকাতরতা থেকে মুক্ত সেগুলো আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ইল্লালাজিনা আমানু অ আ’মিলুস সালিহাতি” বলে এ আয়াতের মাধ্যমে সত্যপন্থী কবি সাহিত্যিকদের ব্যতিক্রমধর্মী বলে ঘোষণা করেছেন।
কোন কোন কবিতা ও সাহিত্য তো জ্ঞানগর্ভ বিষয়বস্তু ও উপদেশমালা সংবলিত হওয়ায় তা এবাদতযোগ্য এবং সওয়াবের অন্তর্ভুক্ত।
হযরত উবাই ইবনে কা’বের রেওয়াতে আছে, “ইন্না মিনাশ শোয়ারাল হিকমা” অর্থাৎ কতক কবিতা বা সাহিত্য জ্ঞানগর্ভ হয়ে থাকে। (বুখারি)
হাফেজ ইবনে হাজার বলেন, এই রেওয়াতে ‘হিকমত’ বলে সত্যভাষণ বোঝানো হয়েছে।
ইবনে বাত্তাল বলেন, যে কবিতা ও সাহিত্য আল্লাহ তায়ালার একত্মবাদ, তাঁর জিকির এবং ইসলামের প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসা বর্ণিত হয় সেই সাহিত্য ও কবিতা কাম্য ও প্রশংসনীয়।
নিম্নবর্ণিত রেওয়াতে আরো সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে এই মর্মে যে,
হজরত ওমর ইবনে বারিদ তার পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ (সা) আমার মুখ থেকে উমাইয়া ইবনে আবু সালতের এক শ’ লাইনের কবিতা-সাহিত্য শ্রবণ করেন।
মুতারিক বলেন, “আমি কুফা থেকে বসরা পর্যন্ত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা)-এর সাথে সফর করেছি। প্রতি মনজিলেই তিনি কবিতা সাহিত্য পাঠ করে শোনাতেন।
তাবারি – প্রধান প্রধান সাহাবী ও তাবেয়ি সম্পর্কে বলেন, তারা কবিতা ও সাহিত্য রচনা করতেন, শুনতেন এবং শুনাতেন।
ইমাম বুখারি (রহ) বলেন, “হযরত আয়েশা (রা) কবিতা বলতেন।
আবু ইলালা ইবনে ওমর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উক্তি থেকে বর্ণনা করেন, যে কবিতা ও সাহিত্যের বিষয়বস্তু উত্তম ও উপকারী হলে তা ভালো এবং অশ্লীল ও গুনাহের হলে তা মন্দ। (ফাতহুল বারী)
সূরা আশ্ শোয়ারার ঐ আয়াতের শেষাংশে এমন সব কবিকে আলাদা করা হয়েছে, যাদের রয়েছে চারটি বৈশিষ্ট্য:
যারা মুমিন অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা)কে মানেন এবং আখিরাতে বিশ্বাস করেন।
নিজেদের কর্মজীবনে যারা সৎ, যারা ফাসেক, দুষ্কৃতকারী ও বদকার নন। নৈতিকতার বাঁধন মুক্ত হয়ে যারা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেন না।
আল্লাহকে যারা বেশি বেশি স্মরণ করেন। নিজেদের সাধারণ অবস্থায়, সাধারণ সময়ে এবং নিজেদের রচনায়ও। কবিতা ও সাহিত্য এমন যেন না হয় যে কবিতা ও সাহিত্য বড়ই তত্ত্বকথাসম্পন্ন, গভীর প্রজ্ঞা আওড়ানো অথচ ব্যক্তিজীবনে তার কোন লেশ মাত্র নেই।
তারা এমন সব ব্যতিক্রমধর্মী কবি, যারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে কারো নিন্দা করে না এবং ব্যক্তিগত, বংশীয় বা গোত্রীয় বিদ্বেষে উদ্ধুদ্ধ হয়ে প্রতিশোধের আগুন জ্বালায় না।
কিন্তু যখন তাগুতি ও জালেমের মুকাবিলায় সত্যের প্রতি সমর্থন দানের প্রয়োজন দেখা দেয় তখন তার কণ্ঠকে, লেখনীকে সেই একই কাজে ব্যবহার করে যে কাজে একজন মুজাহিদ তার তীর ও তরবারিকে ব্যবহার করে। সবসময় আবেদন নিবেদন করে টিকে থাকা এবং বিনীতভাবে আর্জি পেশ করে যাওয়াই মুমিনের রীতি নয়। এ সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে কাফের ও মুশরিক কবিরা ইসলাম ও নবী (সা)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, দোষারোপ ও অপবাদের যে তাণ্ডব সৃষ্টি করে এবং ঘৃণা বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়ায়, তার জবাব দেয়ার জন্য নবী করীম (সা) নিজেই ইসলামী কবি সাহিত্যিকদের উদ্বুদ্ধ করতেন এবং সাহস জুগিয়েছেন। তিনি কা’ব ইবনে মালেক (রা) কে বলেন, “আহযুহুম ফা অল্লাজি নাফছি বি ইয়াদিহি লাহুম আশাদ্দু আ’লাইহিম মিনান্নাবলি।” অর্থাৎ ওদের নিন্দা করো কারণ সেই আল্লাহর কসম যার হাতের মুঠোয় আমার জীবন আবদ্ধ। তোমার কবিতা (সাহিত্য) যেন ওদের জন্য তীরের চেয়েও বেশি তীক্ষè ও ধারালো।
হযরত হাস্সান ইবনে সাবেত (রা) কে বলেন, “আহজিহিম অ জিবরিলা মায়া’কা” এবং “ক্কুল অ রুহুল কুদুসে মায়া’কা”। অর্থাৎ তাদের মিথ্যাচারের জবাব দাও এবং জিবরিল তোমার সাথে আছে এবং বলো পবিত্র আত্মা তোমার সাথে আছে।
তাঁর উক্তি ছিল, “ইন্নাল মু’মিনু ইয়াজহাদু বি সাইফি অ ছানাহু”। অর্থাৎ মুমিন তলোয়ার দিয়েও লড়াই করে এবং তার কণ্ঠ দিয়েও।
উপরের আলোচনায় বুঝা গেল ইসলামের দৃষ্টিতে সাহিত্য কিংবা কবিতা চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম।
আজ বিশ্বব্যাপী ইসলামবিরোধী তাগুতি শক্তির সমর্থক কবি, সাহিত্যিকরা কুফরি ও মুশরিকি চিন্তা-চেতনার অনুসারী হয়ে তাদের সকল প্রকার মেধা-যোগ্যতা, যুক্তি-চিন্তা সহকারে ইসলামবিরোধী সাহিত্য, কবিতা-গান রচনা করে সুরলহরির রমরমা জাঁকালো অনুষ্ঠান করে প্রজন্মের তাবৎ কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, ছাত্র-ছাত্রী এমনকি একদল চিন্তাশীল ব্যক্তিকে উদ্ভ্রান্ত করে সুপরিকল্পিতভাবে নাস্তিক্যবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্বকে অশ্লীলতা এবং পাপাচারের গ্লানিতে পরিপূর্ণ করে নগ্নতা ও বেহায়াপনায় দেশ-জাতি-বিশ্বকে নরককুণ্ডের ব্ল্যাকহোল বানিয়ে ফেলছে। ধর্ষণ, খুন, অবৈধ ভোগ- সম্ভোগের বিলাস কামুকতায় অযাচিত নেশার ঘোরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উন্মাদ বানিয়ে নিজস্ব সত্তাকে বিলীন করে ফেলছে। এর মোকাবেলায় এখন বড়ই প্রয়োজন অধিকতর মেধা-মনন প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিদীপ্ত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিভাবান কবি ও সাহিত্যিক সৃষ্টি করা তীরের মত দ্রুতগামী এবং তরবারির মত ক্ষুরধার লেখনীর যার প্রতিঘাতে বাতিল কিংবা তাগুতি, জালেম কিংবা স্বৈরাচারের ভোগ বিলাসে উন্মত্ত-উদ্ভ্রান্ত ক্ষমতালিপ্সুতার সহযোগী তথাকথিত কবি-সাহিত্যিকদের পরাভূত করা যায়। তাদের অসত্য ও অসুন্দর, অশ্রাব্য ও অশ্লীল কবিতা-সাহিত্যের প্রাসাদ ভেঙে চুরমার হয়ে যায় কিংবা ইসলামী কবিতা ও সাহিত্য তাদের ওপর বিজয়ী রূপে আবির্ভূত হয়।
ইদানীং কালের উদ্ভ্রান্ত তাগুতপন্থী তথাকথিত কবি-সাহিত্যিকদের সৃষ্টি ‘রঙিলা রাসূল’, ‘স্যাটানিক ভার্সেস’, ত্বিন-যায়তুনের অপব্যাখ্যা, আজানকে বেশ্যার চিৎকার বলা, কোরআনি আন্দোলনকে তথাকথিত জিহাদি ও জঙ্গি আখ্যায়িত করা, অতি আধুনিকতার লেবেলে কুরআন ঘোষিত পর্দাপ্রথার অবগুণ্ঠনকে ছিন্ন ভিন্ন করার পাঁয়তারা, নগ্ন-নারীদেহ প্রদর্শনী ও ভোগ লালসার বিকিকিনিতে তথাকথিত ‘র‌্যাগ ডে’, ‘লাভ ডে’, ‘থার্টি ফার্স্ট ডে’ প্রভৃতি অশ্লীল ও বেলেল্লাপনার মৌজ-মহড়া ইত্যাদির বিপরীতে শালীন ও পরিশীলিত সত্য ও সুন্দরের আহবানে ইসলামী সাহিত্য রচনার ক্ষুরধার চর্চা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি।

আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন- বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশবিেিরর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডাঃ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের।

(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)

Friday, June 29, 2018

আমাকে যখন কেউ প্রশ্ন করে । সাইফুল্লাহ মানছুর । Amake Jokhon Keu Proshno Kore । Saifullah Mansur

গান : আমাকে যখন কেউ প্রশ্ন করে শিল্পী : সাইফুল্লাহ মানছুর গীতিকার : মতিউর রহমান মল্লিক সুরকার : মতিউর রহমান মল্লিক শব্দ ধারন : মাহসিন সাউন্ড সিস্টেম লেবেল : স্পন্দন অডিও ভিজুয়াল সেন্টার

Sunday, June 24, 2018

মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলন, আনোয়ার ইব্রাহীম এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

            মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলনের নেতা আনোয়ার ইব্রাহীম জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলেমীনের সাহিত্য ও আন্দোলন দ্বারা উজ্জ্বীবিত হয়েই মালয়েশিয়ার যুব আন্দোলন আবিম(Angkatan Belia Islam Malaysia (ABIM): www.abim.org.my ) গঠন করেন এবং এক সময় যুব সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র নেতায় পরিনত হন। দীর্ঘ ঘাত প্রতিঘাতের পর দাতুক সেরি মাহাথির মোহাম্মদের সাথে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। মন্ত্রী থেকে ক্রমান্বয়ে উপ-প্রধানমন্ত্রী পদ পর্যন্ত ক্ষমতা লাভ করেন। বিভিন্ন সরকারী কাজ পরিচালনায় ব্যাপক দক্ষতা ও সাফল্যের জন্য বিশ্বব্যাপি খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্বসম্রাজ্যবাদী ও ইহুদীবাদী শক্তির কৌশলী চক্রান্তের ফলে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সাথে বিবাদের সম্মুখিন হয়ে ক্ষমতাচ্যুত ও কারারুদ্ধ হন। আনোয়ার ইব্রাহীম ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর একটি জাতীয় নির্বাচনে মালয়েশিয়ার অপর ইসলামী আন্দোলন পাসসহ গঠিত এক ইসলামী জোট পূর্ব থেকেও অধিকতর ভালো ফলাফল লাভ করে। মালয়েশিয়ার কালানতান ও তেরেংগুনা দুটি প্রদেশে পাস এর সরকার প্রথিষ্ঠিত হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, আনোয়ার ইব্রাহীম ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সাথী সম্মেলনে অতিথি হিসাবে যোগদান করেছিলেন। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রাক্তন সিনিয়র নায়েবে আমির মরহুম আব্বাস আলী খান (রহ:) মালয়েশিয়ার আবিম ও পাস উভয় ইসলামী আন্দোলনের কার্যক্রমই পরিদর্শন করেন। মালয়েশিয়ার কুয়াল তেরেংগুনায় অনুষ্ঠিত জুন ২০০০ ইং তারিখে পার্টি ইসলাম মালয়েশিয়া- পাসের ৪৬ তম সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী যোগদান করেন। তার সফরসঙ্গী ছিলেন অন্যতম সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। এভাবে মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলনের সাথে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের যোগাযোগ রয়েছে।


           প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ আনোয়ারকে উপ -প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করলে, আনোয়ার ও তার সমর্থকরা "সংস্কার আন্দোলন"(ইংরেজিrefomasi movement) শুরু করে। এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা বারিসন ন্যাশনাল সরকারের নীতি বহির্ভূত কর্মকান্ড বিলোপ করা। সংস্কার আন্দোলনের নেতা কর্মীদের নিয়ে ১৯৯৯ সালে আনোয়ার ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি গঠন করে। এবং ৯৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যে parti Islam se Malaysia, ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন পার্টি ও নব গঠিত ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি নিয়ে "বারিসন অল্টারনেটিভ" নামে বিরোধী জোট গঠন করেন। ২০০৩ সালের আগস্টে আনোয়ারের পরামর্শে তার স্ত্রী ওয়ান আজিজাহ ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি ও মালয়েশিয়ান পিপলস্ পার্টি একীভূত করে পিপলস্ জাস্টিস পার্টি গঠন করে। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে PKRPAS এবং DAP মিলে পাকাতান রাকাত নামে জোট গঠন করেন। যা ২০০৮ সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ৩১টি আসন জয়লাভ করে বিরোধী দলে পরিণত হয়। এর মধ্যে মাহাথির মোহাম্মদ ২০০৩ সালের ওআইসি সম্মেলনের সফল সমাপ্তির পর ৩০শে অক্টোবর তিনি তার শিষ্যদের হাতে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।  মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে মাহাথির মোহাম্মদ তার একসময়ের শিষ্য নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে আবার রাজনীতিতে আগমণ করেন।  শত্রুতে পরিণত হওয়া একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে রাজনৈতিক জোট গঠন করে নির্বাচনে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান জোট ২২২ আসনের পার্লামেন্টে ১১২ আসনে বিজয়ী হয়। এর মধ্যে আনোয়ারের পিকেআর পায় ৪৮ আসন। 

               আজকে মালয়েশিয়াতে ইসলামের যে  কিছু কালচার বিদ্যমান: অলি গলিতে ইসলামী স্কুল, নামকরা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি IIU (www.iium.edu.my), ইসলামী ব্যাংক, হজ্ব ফাউন্ডেশন, ইয়ং জেনারেশনকে ইসলামের পথে নিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে আনোয়ার ইব্রাহীমের আবিম ও  ইখওয়ানুল মুসলেমিন প্রভাবিত ওলামায়ে আল-আজহার এবং পাস ইসলামিক পার্টি। সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে ওলামায়ে দেওবন্দও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মালয়েশিয়ার ইসলামের দিকে অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখুন, আমীন। এখানে উল্লেখ্য, আনোয়ার ইব্রাহিম ব্যক্তিগতভাবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পাকাতান ক্ষমতায় আসার পর থেকে সৌদি-আমিরাত বলয়ের চেয়েও তুরস্ক-ইরানের সাথে মালয়েশিয়ার সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়। দেশটি এর মধ্যে সৌদি নেতৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা জোট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আর তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ইরানের সাথে মিলে ওআইসি দেশগুলোর মধ্যে একটি শক্তিমান বলয় তৈরির লক্ষ্যে মাহাথির সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করেন।  


         ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সাথী সম্মেলনে অতিথি হিসাবে যোগদান করেছিলেন আনোয়ার ইব্রাহীম। সেই সম্মেলনে তিনি বাংলা শব্দে বলেছিলেন "আমি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরকে ভালবাসি"


        ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচারকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ' আখ্যায়িত করে বিচার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন  আনোয়ার ইব্রাহিম। এক বিবৃতিতে তিনি জামায়াতের সাত নেতার সংবিধানস্বীকৃত অধিকার রক্ষার আহ্বানও জানান। মালয়েশিয়া ক্রনিকল পত্রিকায় ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে তাঁর বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম ছিল 'ট্রায়াল অব জামায়াতে ইসলামী লিডারস ইন বাংলাদেশ : স্টপ দ্য পার্সিকিউশন' (বাংলাদেশে জামায়াত নেতাদের বিচার : নিগ্রহ বন্ধ করুন)।
Post edited in Feb, 2020

নীচের ভিডিওটি যোগ করা হলো এই পোস্টে ২৬/১১/২২ তারিখে:  

Popular Posts