Wednesday, August 8, 2018

বিপদে হতাশা ও সুখে অহঙ্কার -জাফর আহমাদ


মানব সভ্যতার ইতিহাস বড়ই বৈচিত্র্যময়। প্রকৃতির পালাবদলের মতো মানুষের মনও বদলায়। দূর অতীত থেকে মানবজীবনের কর্মচঞ্চল অঙ্গনে পদে পদে এর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। শরতের প্রকৃতি যেমন সবদিক সবুজ শ্যামল দেখা যায় এবং মন নেচে উঠে সবুজের সমারোহে কিন্তু সে তখন ভুলে যায় যে, সবুজের এই সমারোহ একদিন তিরোহিত হয়ে পাতা ঝরার মওসুমও আসতে পারে। মানুষের প্রকৃতি অনেকটা এ রকমই। কখনো সে সচ্ছলতা ও প্রাচুর্যের অধিকারী হলে এবং শক্তি-সামর্থ্য লাভ করলে সে তখন অহংকার করে বেড়ায়। তার মনের কোণে এ কথা একবারও উঁকি দেয় না যে, এই শক্তি-সামর্থ্য ও সম্পদের পাহাড় বা প্রভাব-প্রতিপত্তি পাতা ঝরা মওসুমের মতো যে কোন সময় চলে যেতে পারে। আল্লাহর রাসূল একবার নয় বেশ বার বলেছেন অহংকার করো না।

আবার এই মানুষটিই কোন বিপদে পড়লে আবেগে উত্তেজনায় কেঁদে ফেলে, বেদনা ও হতাশায় ডুবে যায়, তার সারা মন-মস্তিষ্ক এতটা বেসামাল হয়ে পড়ে যে, আল্লাহকে পর্যন্ত গালমন্দ করে বসে এবং তাঁর সার্বভৌম শাসন কর্তৃত্বকে অভিসম্পাত করে নিজের দুঃখ- বেদনা লাঘব করতে চেষ্টা করে। তারপর যখন দুঃসময় পার হয়ে গিয়ে সুসময় এসে যায় তখন আবার সেই আগের মতই দম্ভ ও অহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং সুখ-ঐশ্বর্যের নেশায় মত্ত হয়। এ হচ্ছে মানুষের নিচতা, স্থুলদৃষ্টি ও অপরিণামদর্শিতার বাস্তব চিত্র।
মানুষের এ নিচপ্রকৃতি সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে আমাদের ক্ষমতাসীনদের মাঝেও পরিলক্ষিত হয়। পৃথিবীর শাসকেরা যখন পরিপূর্ণরূপে ক্ষমতা পায় তখন তার অতীতের হীন অবস্থার কথা ভুলে যায়, ভুলে যায় ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য হীনতর অবস্থার কথা। ফলে তারা সারা রাজ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করে, জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালায় এবং তারা আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়। তারা আল্লাহর আজাবের ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে ও বলতে থাকে। যারা এগুলো বলে, তাদেরকে তারা ‘পাগল’ বলে আখ্যায়িত করে। তাদের আত্মম্ভরিতার মাত্রা এতটুকুই বেড়ে যায় যে, ‘কই তোদের রব? কই তোদের রবের আজাব? তোদের প্রভু তো রক্ষা করতে আসে না? (নাউজুবিল্লাহ) বরং উল্টো আমরাই সুখ-ঐশ্বর্যের সাগরে ভাসছি, চারদিকে আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের ঝাণ্ডা উড়ছে। প্রকৃতপক্ষে এরা নিজেরাই পাগল হয়ে পড়েছে। শয়তান ওদের সামনে রঙিন পৃথিবীর স্বপ্ন বার বার উপস্থাপন করে মোহাবিত করে তুলে। আল্লাহ তা’আলাও তাদের কৃতকর্মকে সুদৃশ্য করে দেন। ফলে তারা আরো দিশেহারা হয়ে পড়ে। তার মধ্যে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ লাভ করে। তার কাছে সত্য মিথ্যা, শিরকও তাওহিদ, পাপ ও পুণ্য এবং সচ্চরিত্র ও অসচ্চরিত্র অর্থহীন মনে হয়। তার কাছে এখানকার ভোগ বিলাস, আরাম আয়েশ, বস্তুগত উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং শক্তি ও কর্তৃত্বই মনে হবে কল্যাণকর। প্রকৃত তত্ত্ব ও সত্যের ব্যাপারে মাথা ব্যথাই থাকবে না।
প্রথমে বলেছিলাম এ ধরনের ব্যক্তিদের কার্যাবলিকে শোভন বা সুদৃশ্য বানিয়ে দেয়া হয়। আল কুরআনে কখনো আল্লাহর কাজ কখনো শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। যখন বলা হয়, আল্লাহ তার কাজগুলো আরো শোভন করে দেন তখন এর অর্থ দাঁড়ায়, এ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকারীদের কাছে স্বভাবতই জীবনের এ সমতল পথই সুদৃশ্য অনুভূত হতে থাকে। আর যখন বলা হয় শয়তান তার কার্যাবলি শোভন করে দেয়, তখন এর অর্থ দাঁড়ায়, এ চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি অবলম্বনকারীদের সামনে শয়তান সব সময় একটি কাল্পনিক জান্নাত পেশ করে থাকে এবং বলে আশ্বাস দিতে থাকে শাবাশ বেটারা এগিয়ে যাও।
এগুলো তাদের নিচ সহজাত প্রবৃত্তির একটি নিকৃষ্টতর প্রদর্শনী ছাড়া আর কিছু নয়। মহান করুণাময় আল্লাহ তা’আলা তাদের দুঃসাহসিক ভ্রষ্টতা ও অসৎকার্যাবলি সত্ত্বেও নিছক তাঁর অনুগ্রহ ও করুণার কারণে তাদের শাস্তি বিলম্বিত করছেন। তাদের সংশোধিত হবার সুযোগ দেয়াই উদ্দেশ্য। কিন্তু তারা এ অবকাশ কালে ভাবছে, আমাদের সচ্ছলতা ও প্রাচুর্য কেমন স্থায়ী বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আমাদের এ বাগানে কেমন চিরবসন্তের আমেজ লেগেছে, যেন এখানে শীতের পাতা ঝরার মওসুমের আগমনের কোন আশঙ্কাই নেই।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “এমন এক সময় আসা বিচিত্র নয় যখন আজ যারা অস্বীকার করছে, তারা অনুশোচনা করে বলবে, হায়, যদি আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিতাম! ছেড়ে দাও এদেরকে, খানাপিনা করুক, আমোদ ফুর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে ভুলিয়ে রাখুক। শিগগির এরা জানতে পারবে। ইতঃপূর্বে আমি যে জনবসতিই ধ্বংস করেছি তার জন্য একটি বিশেষ কর্ম-অবকাশ লেখা হয়ে গিয়েছিল। কোন জাতি তার নিজের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে ধ্বংস হতে পারে না, তেমনি সময় এসে যাওয়ার পরে অব্যাহতিও পেতে পারে না।” (সূরা হিজর : ২-৫)
অপরাধ করার সাথে সাথে আল্লাহ কাউকে গ্রেফতার করেন না। আর এই জন্য নির্বোধরা ধারণা করে নিয়েছে যে, ইসলাম, ইসলামী হুকুম-আহকাম ও ইসলামী ব্যক্তিত্বের সাথে অসদাচরণ করা হলেও কিছু হয় না। অথচ আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে, প্রত্যেক জাতিকে শুনবার, বুঝবার নিজেকে শুধরে নেবার জন্য কী পরিমাণ অবকাশ দেয়া হবে এবং তার যাবতীয় দুষ্কৃতি ও অনাচার সত্ত্বেও পূর্ণ ধৈর্য সহকারে তাকে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার কতটুকু সুযোগ দেয়া হবে তা আল্লাহ পূর্বাহ্নেই স্থির করে নেন। যতক্ষণ এ অবকাশ থাকে এবং আল্লাহর নির্ধারিত শেষ সীমা না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ঢিল দিতে থাকেন। এই নির্ধারিত সময়সীমা কিয়ামত পর্যন্ত হতে পারে। আবার এমনটিও হতে পারে যে, তাদের কর্মকাণ্ড যদি বিকৃতির চরম পর্যায় ধারণ করে তাহলে তার কর্মের অবকাশ কমিয়ে দেয়া হয় এবং তাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়। যার নজির আমাদের সামনে অনেক রয়েছে।
ঢিল দেয়া বা ধ্বংস করে দেয়ার অর্থ এই নয় যে, এখানেই সব শেষ। বরং আখিরাতে তাদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ বলেন, যারা নিজেদের রবের দাওয়াত গ্রহণ করেছে তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে আর যারা তা গ্রহণ করেনি তারা যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের মালিক হয়ে যায় এবং এ পরিমাণ আরো সংগ্রহ করে নেয় তাহলেও তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য এ সমস্তকে মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে তৈরি হয়ে যাবে। এদের হিসেব নেয়া হবে নিকৃষ্টভাবে এবং এদের আবাস হবে জাহান্নাম, বড়ই নিকৃষ্ট আবাস। (সূরা রাদ : ১৮)
এই দুই প্রকারের মাঝে সফলকামী আরো কিছু মানুষ ও দল আছে যারা উভয় অবস্থায় ভারসাম্যনীতি অবলম্বন করে। সুখ এলে আল্লাহর শোকরিয়ার মাত্রা বেড়ে যায় আর দুঃখ যাতনা ও বেদনা এলে ধৈর্যধারণ করে। সবরকারি ব্যক্তি বা দল কালের পরিবর্তনশীল অবস্থায় নিজের মানসিক ভারসাম্য অটুট রাখে। সময়ের প্রত্যেকটি পরিবর্তনের প্রভাব গ্রহণ করে তারা নিজেদের রঙ বদলাতে থাকে না। বরং সব অবস্থায় একটি যুক্তিসঙ্গত ও সঠিক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে চলে। যদি কখনো অবস্থা অনুকূলে এসে যায় এবং সে ধনাঢ্যতা, কর্তৃত্ব ও খ্যাতির উচ্চাসনে চড়তে থাকে তাহলে শ্রেষ্ঠত্ব ও অহংকারের নেশায় মত্ত হয়ে বিপথে পরিচালিত হয় না। আর কখনো বিপদ-আপদ ও সমস্যা-সঙ্কটের করাল আঘাত তাকে ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকে তাহলে এহেন অবস্থায়ও সে নিজের মানবিক চরিত্র বিনষ্ট করে না। আল্লাহর পক্ষ থেকে সুখৈশ্বর্য বা বিপদ-মুসিবত যে কোন আকারেই তাকে পরীক্ষায় ফেলা হোক না কেন উভয় অবস্থায়ই তার ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অপরিবর্তিত ও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে। তার হৃদয়পাত্র কখনো কোন ছোট বা বড় জিনিসের আধিক্যে উপচে পড়ে না।
লেখক : প্রাবন্ধিক

Tuesday, August 7, 2018

তুরস্কে সাদাত পার্টির ভোট কি আসলেই কমেছে? -রহমত উল্লাহ

তুরস্কের নির্বাচনের ফলাফলে সাদাত পার্টির আসন না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশি গবেষকদের কাছ থেকে। এ নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে নিরপেক্ষ একটি বিশ্লেষণের অনুরোধ করেছেন অনেকেই। সে কারণেই এ লেখা।
সাদাত পার্টির ভোট বেড়েছে দ্বিগুণ

২০১৫ সালের ১ নভেম্বরের নির্বাচনের তুলনায় ২৪ জুনের নির্বাচনে সাদাত পার্টির ভোট সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ২০১৫ সালের ১ নভেম্বরে সংসদ নির্বাচনে সাদাত পার্টি ০.৭% ভোট পেয়েছিল। ভোট সংখ্যা ছিল : ৩ লাখ ২৬ হাজার ৫০টি। গত ২৪ জুনের নির্বাচনে সাদাত পার্টি পেয়েছে ১.৩ শতাংশ ভোট। প্রাপ্তভোট ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩১টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাদাত পার্টি ভোট বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। (দেখুন : ইয়েনি শাফাক পত্রিকার নির্বাচনী তথ্যসমগ্র)।

সাদাত পার্টি কেন আসন পেল না?

তুরস্কের সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু সমীকরণ রয়েছে। এ সমীকরণ না জানলে সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর অর্জনের মূল্যায়ন করা কঠিন।
১. তুরস্কের সংসদ নির্বাচনে কোনো দল মোট ভোটের সর্বনিম্ন ১০% না পেলে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। এ কারণে ২০০২ সাল থেকে সংসদে সাদাত পার্টির অংশগ্রহণ নেই।
২. ২৪ জুন জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করা দলগুলোর জন্য সর্বনিম্ন ১০% ভোটের শর্ত ছিল না। ফলে সাদাত পার্টি থেকে কয়েকজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু জোটবদ্ধ হলেও রাজনৈতিক দলগুলো পৃথক পৃথক প্রার্থী দেয়ায় সমীকরণ বদলে যায়।
৩. ২৪ জুনের নির্বাচনে ৫টি দল সর্বনিম্ন ১০% ভোটের কোটা পূরণ করায় সব প্রদেশেই এ ৫টি দলের প্রার্থীরা ভোট বণ্টনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছেন। সংসদ সদস্যদের জয়ের ক্ষেত্রে দেশব্যাপী মোট ভোটে এগিয়ে থাকা দলের প্রার্থী, এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দলের প্রার্থী……. এভাবে নিচের দিকে নামা হয়। তা ছাড়া জোটের হিসেবের ক্ষেত্রে প্রথমে জোটের প্রাপ্তভোট অনুযায়ী প্রদেশগুলোতে বিজয়ীদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এরপর প্রদেশগুলোতে জোটবদ্ধ দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট অনুয়ায়ী বিজয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়।
ফলে দেখা গেছে, সাদাত পার্টি কোনো প্রদেশেই সংসদ সদস্যদের জয়ী করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় সংসদ সদস্য পায়নি।

সাদাত পার্টির কেউ কি সংসদে যেতে পারছে না?

দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থীকে জয়ী করাতে না পারলেও সাদাত পার্টির পক্ষ থেকে সিএইচপির ব্যানারে ৩ জন সদস্য জয় পেয়েছেন। এ তিন সংসদ সদস্য দলীয় ব্যানার ব্যবহার করতে পারবেন কি-না তা বলা মুশকিল।
সাদাত পার্টি কেন এ কে পার্টির সঙ্গে জোট করলো না সে সম্পর্কে বিশ্লেষকদের বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে। তবে তুরস্কে ইসলামী রাজনীতির প্রবর্তক নাজিমুদ্দিন এরবাকানের দল ভেঙে বেরিয়ে আসা রজব তাইয়্যেব এরদোগান ও আবদুল্লাহ গুলের নেতৃত্বে গঠিত এ কে পার্টির সঙ্গে প্রথম থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে আসছে সাদাত পার্টি।
লেখক : তুরস্ক প্রবাসী পিএইচডি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক

Wednesday, July 25, 2018

সাঈয়েদ কুতুব শহীদের একটি অসাধারণ গান বাংলাা অনুবাদসহ ((ভিডিওসহ)


সাঈয়েদ কুতুব শহীদের একটি অসাধারণ গান বাংলাা অনুবাদসহ দেয়া হলো:

Bangla Lyrics::

শত বাঁধার আড়ালে তুই স্বাধীন ওরে ভাই আল্লা’কে যদি রাখতে পারো শক্ত হাতে ধরে। অন্তরীনে থেকেও রে তুই মুক্ত স্বাধীন, ভাই, ক্রীতদাসের কুট মন্ত্রণা কীইবা করতে পারে? হৃদয় তোমার দাও খুলে দাও তারই উন্মেসের আঁধার রাতের সেনা সামন্ত ধ্বংশ হবেই ভাই, এই ধরা তে নতুন প্রভাত উদয় হবেই ফের দেখবে সে ভোর চোখ মেলে দে’ পূর্বে তাকাবেই। নেকড়ে দলের আবাস কিন্তু চিরস্থায়ী নয়। তোমার গায়ে হীন জোয়ানে তীর ছুড়েছে ভাই গাদ্দারেরই অথর্ব হাত উঠেছে তোমার গায় দুহাত, ও ভাই, রক্ত রাঙা ঝরছে অঝরে ভাংবে ও হাত ‘সবরে জামিল’ তোমার থাকা চাই কাঁধের সংগীন কি তবে ছুড়েই ফেলেছো? শক্ত বাঁধন, হাত দুখানা নিথর তাই কিরে? মনে রাখিস এ কুরবানী আকাশ পানে ধায় এই রক্তে তোর চিরস্থায়ী জীবন সুনিশ্চয়। ভাই, তুমি কি সংগ্রামে আজ শ্রান্ত, নিশ্চল? কে মুছিবে মজলুমের ঝরা চোখের জল কে উড়াবে দ্বীনের এই পতাকা, ভেবেছো?
See this video:

Tuesday, July 17, 2018

আত্মীয়-স্বজনের সাথে গড়ে উঠুক জান্নাতী সম্পর্ক -ড. মো: আকতার হোসেন

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের রিজিক প্রশস্ত হওয়া এবং নিজের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাওয়া পছন্দ করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। (বুখারি ও মুসলিম)
রাবি পরিচিতি :

আনাস ইবনে মালিক (রা) ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী, খাদিমে রাসূল, ইমাম, মুফতি, মুয়াল্লিমে কুরআন, মুহাদ্দিস, খ্যাতিমান রাবি, আনসারি, খাযরাজি ও মাদানি। কুনিয়াত আবু সুমামা ও আবু হামযা। উনার উপাধি ‘খাদিমু রাসূলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’। বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনু নাজ্জার শাখায় হিজরতের দশ বছর আগে ৬১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মালিক ইবন নাদর এবং মাতা উম্মু সুলাইম সাহলা বিনতু মিলহান আল-আন সারিয়্যা। উম্মু সুলাইম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহর (সা) খালা হতেন।
হযরত রাসূলে কারীম (সা) যখন মদীনায় আসেন তখন প্রসিদ্ধ মতে আনাসের বয়স দশ বছর। রাসূল (সা) একটু স্থির হওয়ার পর আনাসের মা একদিন তাঁর হাত ধরে রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে নিয়ে যান এবং তাঁর খাদিম হিসেবে পেশ করেন। হযরত আনাস (রা) সর্বদা রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামের সান্নিধ্যে থাকতেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রায় দশ বছর অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে তাঁর খিদমতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামের সাথে প্রায় সকল অভিযান যেমনÑ বদর, উহুদ, খন্দক, কুরায়জা, মুসতালিক, খাইবার, হুনাইন ও তায়িফ ইত্যাদি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
হযরত আনাসের মৃত্যুসন ও মৃত্যুর সময় বয়স সম্পর্কে প্রচুর মতভেদ আছে। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মতে হিজরি ৯৩ সনে মৃত্যুবরণ করেন এবং তখন তাঁর বয়স হয়েছিল একশো বছরের ঊর্ধ্বে। কুতন ইবন মুদরিক আল-কিলাবী জানাযার নামায পড়ান। বসরার উপকণ্ঠে ‘তিফ্ নামক স্থানে তাঁর বাসস্থানের পাশেই কবর দেয়া হয়। হযরত আনাস ছিলেন দুনিয়া থেকে বিদায়গ্রহণকারী বসরার শেষ সাহাবী। সম্ভবত একমাত্র আবুত তুফাইল (রা) ছাড়া তখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো সাহাবী জীবিত ছিলেন না। মৃত্যুকালে হযরত আনাস মোট ৮২ জন ছেলেমেয়ে রেখে যান। তাদের মধ্যে ৮০ জন ছেলে এবং হাফসা ও উম্মু আমর নামে দুই মেয়ে। তা ছাড়া নাতি-নাতনীর সংখ্যা ছিল আরও অনেক।
তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা মোট ২২৮৬। মুত্তাফাক আলাইহি ১৮০, বুখারি এককভাবে ৮০ এবং মুসলিম এককভাবে ৭০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর ছেলে এবং নাতীদের থেকেও বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আলোচ্য হাদীসে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। কেননা মানুষের মাঝে ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা, দয়া ও সহযোগিতার মূলভিত্তি হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক। এ সম্পর্ক নষ্ট হলে সমাজ উচ্ছন্নে যাবে। বর্তমান সময়ের পত্রিকার পাতায়, অনলাইন ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়াসহ সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় সমাজের অনেক মুসলমানই পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য ও আত্মীয়স্বজনের অধিকার সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন। আত্মীয়স্বজনের সাথে মিলনের সেতুবন্ধকে ছিন্ন করে চলেছেন। আপন পিতা-মাতাকে পাঠাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে। আবার অনেক পিতা-মাতা ছেলেমেয়ে বেঁচে থাকার পরও জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন।

আত্মীয় কারা:

ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক বলতে বুঝায় মা ও বাবার দিক থেকে রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দেরকে। সুতরাং পিতা-মাতা, ভাই-বোন, চাচা, ফুফু, মামা, খালা এবং তাদের ঊর্ধ্বতন ও নিম্নতম ব্যক্তিবর্গ ও সন্তানগণ। এরা সবাই আরহাম রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়ের অন্তর্ভুক্ত। এদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারণ বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
“এবং তারা (রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়) আলাহর বিধান মতে তারা পরস্পর বেশি হকদার।” (সূরা আহজাব, আয়াত : ৬)
কারো মতে আত্মার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে আত্মীয় বলা হয়। সাধারণত রক্ত, বংশ কিংবা বৈবাহিক সূত্র থেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। শরয়ী বিধান অনুযায়ী আত্মীয়স্বজনের আলাদা আলাদা হক বা অধিকার আছে। তাদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ওয়াজিব। শরয়ী কারণ ছাড়া সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্পূর্ণ হারাম। আলাহর বাণী,
“আর তোমরা আলাহকে ভয় কর, যার নামে একে অন্যের নিকট হতে অধিকার চেয়ে থাক এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাক। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ আলাহ তোমাদের ওপর কড়া নজর রেখেছেন।” (সূরা নিসা-১)

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব:

কুরআন ও হাদীসে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। আলাহতা’আলা বলেন, তোমরা এক আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করো, কোনো কিছুকেই তাঁর সাথে অংশীদার বানিয়ো না এবং পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো, যারা ( তোমাদের) ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, এতীম, মেসকীন, আত্মীয় প্রতিবেশী, কাছের প্রতিবেশী, পাশের লোক, পথচারী ও তোমার অধিকারভুক্ত (দাস দাসী, তাদের সাথেও ভালো ব্যবহার করো), অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা এমন মানুষকে কখনো পছন্দ করেন না, যে অহংকারী ও দাম্ভিক। ( সূরা আন নেসা-৩৬)
হাদীসের আলোকে জানা যায়, কেউ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলে আলাহ তার সাথে নিজ সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, আলাহ বলেন, “আমি রহমান, আমি রাহেমকে (আত্মীয়তার বন্ধন) সৃষ্টি করেছি। রাহেম নামটিকে আমি নিজের নাম থেকে নির্গত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে, আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব। আর যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব। (বুখারি, আহমাদ ও তিরমিজি)
নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে ঘোষণা করেছেন। যেমনÑ জুবাইর ইবনে মুতঈম (রা) থেকে বর্ণিত আলাহর রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেছেন,
“আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (বুখারি ও মুসলিম)
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর আমল আলাহতা’আলা কবুল করেন না। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, “আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত জুমার রাতে (আলাহর নিকট) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না। (আহমাদ) এ কারণেই রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন “যে ব্যক্তি আলাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলে।” (বুখারি)
হজরত আয়িশা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেন, রাহেম (আত্মীয়তার সম্পর্ক) আরশের সাথে ঝুলানো রয়েছে। সে বলে, যে আমাকে জুড়ে দেবে, আলাহ তাকে জুড়ে দেবেন। যে আমাকে ছিন্ন করবে আলাহ তাকে ছিন্ন করবেন। (বুখারি ও মুসলিম)
আমাদের প্রিয়নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ছিলেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার মূর্তপ্রতীক। আবু সুফিয়ান (রা:) ইসলাম গ্রহণের আগে বাণিজ্য সফরে শাম দেশে গেলে বাদশা হিরাক্লিয়াস তার কাছে রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম সম্পর্কে বিবরণ জানতে চান। তিনি বিবরণ তুলে ধরেন এভাবে যে, “তিনি আমাদের আলাহর ইবাদত, সালাত, সত্যবাদিতা, চারিত্রিক শুভ্রতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ করেন।”
হযরত আবদুলাহ ইবনে আনাস (রা:) বলেন, “যখন রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম মদিনায় আগমন করেন, তখন আমি তার নিকটবর্তী হলাম। যখন আমি তার চেহারা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম, বুঝতে পারলাম যে, নিঃসন্দেহে এটি কোনো মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না। তিনি প্রথমে যে কথা বলেছিলেন তাহলো, “হে লোকসকল, ইসলামের প্রচার কর, গরিবদের অন্ন দান কর, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা কর, রাতের বেলায় নামায আদায় কর, তাহলে তোমরা সহজে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিজি)
আমর ইবনে আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে প্রকাশ্যে বলতে শুনেছি, অমুকের বংশধররা আমার বন্ধু বা পৃষ্ঠপোষক নয়। আমার বন্ধু বা পৃষ্ঠপোষক হলো আলাহ এবং নেককার মুমিনগণ। তবে তাদের সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। আমি তা সজীব রাখার চেষ্টা করব। (বুখারি ও মুসলিম)
হজরত আবু বকর (রা:) খালাতো ভাইকে অর্থনৈতিক সাহায্য করতেন। ইফকের ঘটনায় এ ভাই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছিলেন। এতে তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি ঠিক করলেন এ ভাইকে সাহায্য করবেন না। কিšু— মহান আলাহ এটা পছন্দ করলেন না। (সূরা নূর : ২২) ফলে আবু বকর (রা) তার সিদ্ধান্ত বদলালেন।
আত্মীয়স্বজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হকদার হলেন পিতা-মাতা। কুরআন ও হাদীসের আলোকে পিতা-মাতার আনুগত্য ও সেবা অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফরজ আইন ইবাদত। কুরআনে আলাহ বারবার তার নিজের ইবাদতের করার পরই পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। আলাহ বলেন,
“তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। পিতা-মাতা উভয়ে বা তাদের একজন যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদেরকে ‘উফ’ বলবে না। তাদেরকে ধমক দেবে না এবং তাদের সাথে সম্মানজনক বিনম্র কথা বলবে। মমতাবশে তাদের জন্য নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করে রাখবে এবং বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আপনি তাদেরকে দয়া করুন যেমনভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছেন।” (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪)
শিরকের পরে ভয়ঙ্করতম কবিরা গুনাহ হলো পিতা-মাতার অবাধ্যতা। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, কঠিনতম কবিরা গুনাহ আলাহর সাথে শিরক করা, এরপর পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। (বুখারি)
পিতা-মাতার খিদমতকে নামাযের পরেই সর্বোত্তম আমল বলে ঘোষণা করে প্রিয়নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল হলো সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা এবং পিতা-মাতার খিদমত করা। (বুখারি ও মুসলিম)
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আরো বলেন, “পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আলাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আলাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি)
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন,
“তার ধ্বংস হোক, তার ধ্বংস হোক, তার ধ্বংস হোক!! বলা হলো, কার কথা বলছেন ইয়া রাসূলালাহ! তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার কোনো একজনকে বা উভয়কে বার্ধক্যে পেয়েছে, অথচ জান্নাতে যেতে পারল না।” (মুসলিম)
অন্য হাদিসে এসেছে, তিন ধরনের ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না; তারা হলো- পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি; দাইয়ুস অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি যার স্ত্রী ব্যভিচারিণী অথচ সে তাতে বাধাদান করেনি বা তার প্রতিকার করেনি এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী। (নাসাঈ)
হাদিসের সূত্র মতে মাতা-পিতার মৃত্যুর পরেও সন্তানের জন্য ৪টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে যায় । সেগুলো হলো, ১) মাতা-পিতার জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা, ২) তাঁদের কৃত ওয়াদা এবং বৈধ অসিয়তসমূহ পালন করা, ৩) তাঁদের বন্ধুদের সাথে সুন্দর আচরণ করা এবং ৪) তাঁদের আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় এবং সুন্দর আচরণ করা। (আল আদাবুল মুফরাদ)
এভাবে পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের হকের ব্যাপারে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস রয়েছে যা স্বল্প পরিসরে উলেখ করা সম্ভব নয়।

শেষ কথা :

আধুনিক সভ্যতায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনে পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের প্রতি অবহেলা সীমাহীন। ফলে আমাদের মাঝ থেকে শ্রদ্ধা, স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা ইত্যাদি লোপ পাচ্ছে এবং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন নষ্ট হচ্ছে। অথচ পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজন হক আদায় করা একজন মুমিনের জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে এ ব্যাপারটি অনুধাবন করা সকলের জন্য একান্ত জরুরি।
লেখক : অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

Popular Posts