Wednesday, September 26, 2018

স্টিফেন হকিংসকে বিজ্ঞানী বলা যাবে না



আবু মহি মুসা : শুরুতেই একটি কথা বলতে হচ্ছে যে, আমাদের এ সভ্যতার দর্শনের শুরু হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ৬ শতক থেকে। যার সূত্রপাত ঘটিয়েছে গ্রিক। যে কারণে গ্রিককে বলা হয় ‘মাদার অব ফিলোসফি।’ খ্রীস্টপূর্ব ৬ শতক থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়-কাল হচ্ছে ছাব্বিশ শত বছর। যেখনে বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে শত ভাগের কাছাকাছি, সেখানে এই ছাব্বিশ শত বছরে দর্শনের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে মাত্র ১০ ভাগ। এই সময়ে মধ্যে আমরা  দার্শনিক কোনো বিষয়ে সঠিক কোনো ধারণা পাইনি। যেমন প্রেম, দেশপ্রেম,  মানবিক মূল্যবোধ, সততা, দর্শন, দর্শনের উৎপত্তি ইত্যাদি, কোন্ বিষয়ে আমরা ধারণা পেয়েছি?   
উল্লেখিত বিষয়ের মধ্যে  বিশ্বসৃষ্টি সম্পর্কিত একটি বিষয় রয়েছে।  বিশ্বসৃষ্টি সম্পর্কে বহু আলোচিত এবং আলোড়িত যে মতবাদ, তা হচ্ছে স্টিফেন হকিংসের ‘বিগ ব্যাং থিওরী।’ বিগ ব্যাং থিওরী সম্পর্কে আমি বলবো, it is bogus and absolutely bogus. Not only that Stepehen Halkings neither philosopher, nor Scientiest. অর্থাৎ স্টিফেন হকিংস বিজ্ঞানীও ছিলেন না, দার্শনিকও ছিলেন না।  এ বক্তব্যটি শুনে অনেকের বিস্ময়ের অন্ত থাকবে না। সমগ্র বিশ্ব  টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে যেভাবে তাকে সপ্তম আস্মানে নিয়ে গেছে, সেখানে উল্লেখিত বক্তব্য সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য করে তোলা সহজ ব্যাপার নয়। তিনি যে বিজ্ঞানী নন, এখানে তিনটি যুক্তি রয়েছে।
প্রথম যুক্তি : লক্ষ্য করা গেছে,  অনেক সময় অনেকেই নিজেকে দার্শনিক হিসেবে দাবি করে থাকেন। কে দার্শনিক এটা  কেউ নিজে দাবি করলেও হবে না, বা অন্য কেউ বললেও হবে না। কে দার্শনিক এটা বলবে দর্শনের সংজ্ঞা। আমরা কি  দর্শনের সেই সংজ্ঞা পেয়েছি? আমি ‘দেশপ্রেমিক’, দেশপ্রেমের সংজ্ঞা বলবে আমি দেশপ্রেমিক কিনা? ঠিক তেমনি বিজ্ঞানের সংজ্ঞা বলবে কে বিজ্ঞানী। আমরা আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানের সঠিক কোনো সংজ্ঞা পাইনি। বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে,  বিজ্ঞান হচ্ছে, ‘বিশেষ জ্ঞান’। আমি দর্শনকেও বিশেষ জ্ঞান  বলতে পারি । এ দিয়ে কি বুঝা যাবে বিজ্ঞান কি অথবা কে বিজ্ঞানী? বিজ্ঞানের যে সংজ্ঞা বইর মধ্যে পাওয়া যায় তা হচ্ছে, ‘কোনো বিষয়ের সুসংঘবদ্ধ জ্ঞানই হচ্ছে বিজ্ঞান।’ বিজ্ঞানের এ সংজ্ঞাকে গ্রহণযোগ্য বলে  মনে করা হয় না।
আমরা জানি যে,  বিশ্বজগৎ দুটো ভাগে বিভক্ত। একটি বস্তুজগৎ, অন্যটি ভাবজগৎ। বস্তুজগতের কোনো কিছুর সংজ্ঞার প্রয়োজন হয় না। যেমন, তাল গাছ, নারকেল গাছ। আমরা নামেই তাকে চিনতে পারি। কিন্তু ভাবের ক্ষেত্রে সংজ্ঞার প্রয়োজন হয়। কারণ, শুধু নাম দিয়ে কিছুই বুঝা যায় না। যেমন, প্রেম, মানবিক মূল্যবোধ সততা, ন্যায়পরয়ণতা ইত্যাদি । এ জন্য এর সংজ্ঞার প্রয়োজন। সংজ্ঞারও  একটি সংজ্ঞা আছে। সংজ্ঞার সংজ্ঞা হচ্ছে ‘brief description’ অর্থাৎ যে বিষয়ের সংজ্ঞা দেয়া হবে, তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। এরপর উদঘাটন করতে  হবে ঐ বিষয়ের সাথে আর কি কি বিষয় জড়িত। যেমন, ভালোবাসা, একটি শব্দ। এই একটি শব্দ দিয়ে কিন্তু বুঝা যায় না ভালোবাসা কি। ৭টি বিষয়ের সমষ্টি হচ্ছে  ভালোবাসা (প্রেম-ভালোবাসা অধ্যায় : সৃষ্টি থেকে ধ্বংস)। যেমন, মানসিক আকর্ষণ, কল্যাণ কামনা, স্বার্থ, জ্ঞান, আবেগ, ইচ্ছা এবং অনুভুতি। জ্ঞানটা এর মধ্যে কেন রয়েছে। যেমন, দশটি মেয়ে একই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কলেজে যায়। এর মধ্যে একটি মেয়েকে আমার ভালো লাগলো, যে মেয়েটি দেখতে কুৎসিৎ। এই কুৎসিৎ মেয়েটিকে ভালো লাগার কারণ হচ্ছে, এ মেয়েটির এমন একটি গুণ আছে, যা আর কারো মধ্যে নেই। এখানে জ্ঞান এনালাইসিস করবে, মেয়ের রূপ সৌন্দর্য ভালো লাগবে না গুণ ভালো লাগবে। উল্লেখিত বিষয়ের  প্রত্যেকটির ভূমিকা রয়েছে। ঠিক তেমনি কি কি বিষয় নিয়ে বিজ্ঞান এটা জানতে হবে। বিজ্ঞান বলতে দুটো বিষয়। একটি জ্ঞান, অন্যটি বস্তু। জ্ঞান ছাড়া বিজ্ঞান হবে না, বস্তু ছাড়াও বিজ্ঞান হবে না। (যদিও অতিন্দ্রি বিজ্ঞানের কথা বলা হয়েছে, সেখানে বস্তুর উপস্থিতি নেই, এটা একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ)। রাইট ব্রাদার্স বিমান সৃষ্টির সূত্রপাত ঘটিয়েছেন গ্লাইডিংয়ের মাধ্যমে। এর জ্ঞান তাঁরা কোথায় পেয়েছেন? আকাশে পাখি উড়তে দেখে। পরবর্তীকালে যান্ত্রিক বিমান আবিস্কৃত হয়েছে। এটা বিজ্ঞানের ব্যাপার। এর জ্ঞান তারা পেয়েছে আকাশে পাখি উড়তে দেখে। এরা যদি কোনো কালেই আকাশে পাখি উড়তে না দেখতেন, তাহলে তাদের পক্ষে বিমান আবিস্কার করা সম্ভব ছিল না। এটাই হচ্ছে ভাব বা জ্ঞান। পাখি দেখে বিমানের নক্সা করলেন। এই নক্সা নিয়ে গেলেন বস্তুর কাছে। বস্তু দিয়ে বিমানের বডি তৈরী করলেন, ডানা দিলেন, লেজ দিলেন। এরপর ইঞ্জিন ফিট করলেন। আকাশে উড়লেন। এবার বিজ্ঞানের সংজ্ঞা হবে এভাবে, ‘ যে জ্ঞান বস্তুর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অথবা বস্তু মধ্য দিয়ে যে জ্ঞানের বিকাশ ঘটে এটা হচ্ছে বিজ্ঞান। প্রশ্ন হচ্ছে, স্টিফেন হকিংসের কোনো জ্ঞান সরাসরি বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত? এটাই যথেষ্ট যে তিনি বিজ্ঞানী নন।  
দ্বিতীয় যুক্তি : দর্শনের উৎপত্তির পর দর্শন দুই ভাগে বিভক্ত। ভাববাদ এবং বস্তুবাদ। তৃতীয় স্তরে দর্শন চারভাগে বিভক্ত । যেমন, ভাববাদী ক্ষেত্র, বস্তুবাদী ক্ষেত্র, ধর্মীয় ক্ষেত্র এবং দার্শনিক সাধারণ ক্ষেত্র।  কিন্তু, মতবাদ দেয়ার ক্ষেত্র হচ্ছে তিনটি। বস্তুবাদী ক্ষেত্র, ভাববাদী ক্ষেত্র এবং মিশ্রক্ষেত্র। বস্তুবাদী ক্ষেত্র বলতে যেমন, একজন ডাক্তার-বিজ্ঞানী একটি রোগের ঔষধ অবিস্কার করেছেন, এটা হচ্ছে বস্তুবাদী ক্ষেত্র। এখানে তার সাথে কোনো দার্শনিকের দ্বিমত পোষণ করার ক্ষমতা নেই। তাদের দুজনের পথ এবং মত ভিন্ন। কিন্তু মিশ্রক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা দেবেন প্রমাণ, দার্শনিকরা দেবেন যুক্তি। প্রমাণ এবং যুক্তি এক হতে হবে।  মিশ্রক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা ৯৯ ভাগ প্রমাণের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন, ডারউইনের বিবর্তনবাদ। অনেক প্রমাণ দেখানো হয়েছে। শেষে বলা হয়েছে মানুষ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। এবং বলা হয়েছে, মানুষের পূর্বপুরুষ ছিল প্রাইমেট। শিক্ষিত সমাজের অনেকে এখনও মনে করেন, মানুষের পূর্বপুরুষ ছিল বানর। এটা সম্পূর্ণ একটি বোগাস মতবাদ। কতগুলো যুক্তি চান মানুষ মানুষ আকৃতিতে সৃষ্টি হয়েছে? বানর যদি মাটি থেকে সৃষ্টি হতে পারে, মানুষর সৃষ্টি মাটি হতে বাধা কোথায়? কাজেই এই মিশ্রক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা যতগুলো বিষয়ে মতবাদ দিয়েছেন, যেমন, বিগ ব্যাং, ব্লাক হোল, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, বিশ্ব্সৃষ্টি, আকাশ অসীম না সসীম, পৃথিবী ধ্বংস, সবগুলো বোগাস। এর মধ্যে বস্তুগত প্রমাণ, দার্শনিক যুক্তি, বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যা নেই। এর পর টাইম ট্রাভেলের কথা বলা হয়েছে। এলিয়েন নামক প্রাণীরা পৃথিবীতে আসে। অনেকে দেখেছেও। ভন্ডামীর একটা সীমা থাকা উচিৎ।
তৃতীয় যুক্তি : স্টিফেন হকিংস বলেছেন, জমাটবদ্ধ বস্তুতে মহাবিস্ফোরণের ফলে মহাবিশ্বের সৃষ্টি । প্রশ্ন হচ্ছে, জমাটবদ্ধ বস্তু কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? এর ভর কত? তরল না সলিড? মহাবিস্ফোরণের ফলে যে বস্তুপুঞ্জ ছুটে এসে সূর্যের সৃষ্টি করেছে, বিস্ফোরণ স্থল থেকে এর দূরত্ব কত? এর মাঝে অনেক গ্যালাক্সি এবং সৌরজগৎ রয়েছে। সে সব সৌরজগৎ অতিক্রম করে সূর্যের সৃষ্টি করা কি সম্ভব? বস্তুপুঞ্জ ছুটে আসার শক্তি কোথায় পেয়েছে, নাকি জেট ইঞ্জিল ফিট করা ছিল? ভারতের দুজন বিজ্ঞানী বলেছেন, মহাবিশ্ব এত সুশৃঙ্খলভাবে সৃষ্টি,  বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে এভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টি  সম্ভব নয়। কাজেই তার এ মতবাদ সম্পূর্ণ মনগড়া কল্পকাহিনী।
প্রশ্ন হতে পারে যে, মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? জার্মান দার্শনিক ইমনুয়েল কান্ট বলেছেন, ‘বিশ্ব কখনো সৃষ্টি হয়নি, কখনো ধ্বংস হবে না। ছিল, আছে, থাকবে। বিষয়টি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের সাথে সাংঘর্ষিক। ধর্মের সাথে এর তুলনা করা যাবে না। ধর্ম হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য । অন্য দিকে জ্ঞানীদের জন্য জ্ঞানের ভান্ডার। জ্ঞানীদের জন্য  সূরা ইমরানের ৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, এই গ্রন্থের কিছু আয়াত আছে সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন, অন্যগুলো রূপক। অর্থৎ কাল্পনিক। পরের আয়াতে বলা হয়েছে, যারা নাস্তিক, তারা এসব নিয়ে ফেতনা সৃষ্টি করে।’ কাজেই এমন কিছু বলা যাবে না যা বললে ধর্মের ভিত দুর্বল হতে পারে।  যেহেতু এ বিষয়টি নিয়ে ধর্মের সাথে একটি সাংঘর্ষিক বক্তব্য দেয়া হয়েছে, এবং বহু আলোচিত। আমরা কখনো ধর্মীয় বিষয়ের সাথে দার্শনিক বিষয়ের তুলনা করবো না। এ ক্ষেত্রে আমরা বলবো, ইমানুয়েল কান্টের এ বক্তব্য যথার্থ। তিনি এতটুকুই বলে থেমে গেছেন। আমরা এখান থেকে আরও সামনের দিকে নিয়ে গেছি। আমরা বলেছি, বিশ্বের অনেক গ্রহের সৃষ্টি হয়েছে, অনেক গ্রহ ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কোন গ্রহ ধ্বংস হয়েছে? এবার আমরা ফর্মুলায় যাবো। বলা হয়েছে, যে গ্রহের সৃষ্টি আছে, কেবল সেই গ্রহের ধ্বংস আছে। যে গ্রহের সৃষ্টি এবং ধ্বংস আছে, সে গ্রহের সময় আছে। যে গ্রহের সময় আছে সে গ্রহটাই ধ্বংস হবে। যেমন, পৃথিবী একটি ধ্বংস হবে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এখানে সকাল, বিকাল, রাত্রি আছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘মহাবিশ্বের বয়স ১৪ শো কোটি বছর। সময় সম্পর্কেই তো তাদের কোনো ধারণা  নেই। পৃথিবীর বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রা- রাসেল প্রেম সম্পর্কে বলেছেন, ‘প্রেম হলো সিগারেটের মতো, যার শুরু অগ্নি দিয়ে, শেষ ছাইয়ে।’ মানুষের জীবনে মানবিক মুল্যবোধের পর যে বিষয়টি মূল্যবান সেটি হচ্ছে প্রেম-ভালোবাসা। মানুষের মধ্যে যেদিন ভালোবাসা থাকবে না, সেদিন সভ্যতাও থাকবে না। আদি রাষ্ট্রের উৎপত্তির একটি কারণ হচ্ছে প্রেম। অথচ বার্ট্রা- রাসেল কি বললেন। ওই সব বিজ্ঞানীরা সময় সম্পর্কে ঠিক তেমনি যুক্তিহীন ভিত্তিহীন কথা বলেছে। সময়ের উৎপত্তি সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। সময় হচ্ছে পৃথিবীর ব্যাপার। দুটো কারণে সময়ের উৎপত্তি।  সূর্য আলো দিচ্ছে, পৃথিবী ঘুরছে, ফলে আমরা একটি দিন এবং একটি রাত পাচ্ছি। এই দিন রাত্রিকে যান্ত্রিক উপায়ে ২৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় এক দিন। এটাকে মিনিট, সেকেন্ডে ভাগ করা হয়েছে। কাজেই পৃথিবীর সময় দিয়ে কি বিশ্বের বয়স নির্ণয় করা যাবে?
স্টিফিন হকিংসের বিগ ব্যাং থিওরী যে একটি বোগাস মতবাদ, এর পর আর কোনো যুক্তির প্রয়োজন আছে। তার মতবাদ যদি বোগাস বলা হয়, তাহলে বলতে হবে তিনি বিজ্ঞানী নন। তার এই মতবাদ ডারউইনের বিবর্তনবাদের মতো একদিন কোল্ডস্টোরেজে চলে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : দার্শনিক।

Tuesday, September 25, 2018

মানুষ গুজবে কান দেয় কেন? -মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত



বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বহুল প্রচারিত শব্দটি হচ্ছে ‘গুজব’। সোস্যাল মিডিয়ায় গত কয়েক দিনে ‘গুজব’ শব্দটি যতবার ব্যবহৃত ও উচ্চারিত হয়েছে, তা আর কোনো শব্দের ক্ষেত্রে হয়েছে কি না সন্দেহ। বহুল প্রচারিত ‘গুজব’ শব্দটির ব্যবহার বাড়ে ৪ আগস্টের পর থেকে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর জিগাতলা-সায়েন্সল্যাবে অবস্থানরত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা এবং তৎপরবর্তী ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। সেদিন নিরাপদ সড়কের দাবিতে সপ্তম দিনের মতো রাজপথে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। সেদিন দলীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা একযোগে হামলে পড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর। সে সময় ঘটনাস্থলে থাকা আহত শিক্ষার্থীরা ফেসবুক লাইভে এসে তাদের ওপর বর্বরোচিত হামলার বিবরণের পাশাপাশি এটিও বলে যে, তাদের চারজন ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং চারজন ছাত্রীকে ধরে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। আরো বহু ছাত্রকে আটকে রেখেছে তারা। ঘটনাস্থলে থাকা ছাত্রছাত্রীদের অসংখ্য লাইভ ভিডিওতে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে তাদের সহপাঠী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রচ- বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটিকে ‘গুজব’ বলে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন। আর এর পরপরই সোস্যাল মিডিয়ায় ‘গুজব’ শব্দটি একটি ব্যঙ্গাত্মক ও হাস্যরসাত্মক শব্দে পরিণত হয়।

ইদানীং ছাত্রসমাজ ‘গুজব’ শব্দটিকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করছে। সোস্যাল মিডিয়ায় একযোগে প্রচারণার ধরন এমনই যে, শিক্ষার্থীদের কেউ আহত ও রক্তাক্ত কিংবা চোখে ব্যান্ডেজ, গুলিবিদ্ধ অথবা সাংবাদিকদের ওপর হেলমেটধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি হামলা এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের ছবি অথবা একেকটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র পোস্ট করে তার ক্যাপশনে লিখেছেন- ‘গুজবে কান দেবেন না। তবে চোখ দিয়ে দেখুন।’
একজন ছাত্রের চোখ উপড়ে ফেলা, চারজনকে হত্যা করা, চারজন ছাত্রীকে ধর্ষণ করা এবং আরো ছাত্রীকে আটকে রাখার যে খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের ডেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের ভেতরের দৃশ্য দেখানো হয়। এ রকম দু’জন ছাত্রলীগ সমর্থক ছাত্রকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়- শিক্ষার্র্থীদের পক্ষ হতে যা বলা হচ্ছে তার সবই গুজব! সেদিনই রাতে এক প্রেসনোটে ডিএমপি থেকে জানানো হয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রচারিত ঘটনার কোনোটা ঘটেনি। এগুলো সবই গুজব। গুজবে কান না দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়। সেদিনই মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে একটি মেসেজ দিয়ে সরকার জানায় এটি গুজব মাত্র। আমার মোবাইলেও সে রকম একটি মেসেজ পেয়েছি। এড়াঃ. রহভড় থেকে পাঠানো মেসেজে লেখা ছিল- ‘রাজধানীর জিগাতলায় ছাত্রহত্যা ও ছাত্রীধর্ষণের ঘটনার কোনো সত্যতা নেই। বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। এতে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। পুলিশকে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’
যদিও আজ পর্যন্ত আসলে সত্যিকারার্থে সেদিন আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর কার্যালয়কেন্দ্রিক কী ঘটেছিল তা জাতির সামনে তুলে ধরা হয়নি।
তথ্য জানার অধিকার একজন নাগরিকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। সেদিন আসলে কী ঘটেছিল এবং কোন ঘটনা থেকে গুজবের সূত্রপাত হয়েছে, কতজন আহত কিংবা কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কতজন শিক্ষার্থী হসপিটালে ভর্তি, কোন পক্ষ কোন পক্ষকে আঘাত করেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছিলো। আর এই ঘটনার জন্য কোন তদন্ত কমিটি করা হয়েছে কিনা তা আজ পর্যন্ত জাতির সামনে তুলে ধরা হয়নি। যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নাগরিকদের গুজবে কান না দেয়ার আহবান জানিয়ে মেসেজ দেয়া হয় সে ঘটনার প্রকৃত সত্য যদি জাতির সামনে তুলে ধরা না হয় তাহলে নাগরিকরা গুজবে প্রভাবিত হবেন এটাই তো স্বাভাবিক। মূলধারার গণমাধ্যমকে যখন গলাটিপে ধরা হয় তখন গণমাধ্যমের বদলে সোস্যাল মিডিয়াকেই জনগণ খবর জানার মূল মাধ্যম হিসেবে ধরে নেয়। তখন যদি কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কোন খবর প্রচার করে তখন তা সত্য না মিথ্যা, কে তার প্রমাণ দেবে? ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন নিয়ে মূল ধারার গণমাধ্যমের ওপর সরকার খড়গহস্ত হয়েছে তখনই সেখানে সোস্যাল মিডিয়া শক্তিশালী অবস্থানে চলে গিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রথম কয়েকদিন সকল টেলিভিশন চ্যানেল লাইভ প্রচার করেছিল কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটে সে প্রক্রিয়া থেমে যায়। তথ্য মন্ত্রণালয় সকল টিভি চ্যানেলকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে বলে। সরকার সমর্থক চ্যানেল একাত্তর ও যমুনা টিভিকে বিশেষভাবে সতর্ক করে দেয়। ফলে সায়েন্সল্যাব ও জিগাতলায় সেদিন কোনো চ্যানেলই তেমন লাইভ প্রচার করেনি। এমনকি তথ্য মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তার ফলে বেসরকারি সকল টিভি চ্যানেল কেন যেন বিটিভির মতো আচরণ করতে শুরু করে। সেদিন একটি পোস্ট দেখে খুব হাসি পেয়েছিল। কোন একজন স্কুলছাত্র বিটিভির খবর পড়ার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছিল- ‘দিনাজপুরে বাতাবিলেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে।’ এটি দিয়ে পোস্টকারী বুঝাতে চেয়েছেন হাজার হাজার স্কুলশিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে এলেও বিটিভিতে সেই খবর স্থান পায়নি। এটি বিটিভির প্রতি জনগণের এক ধরনের অনাস্থা। যদিও সংসদে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বাংলাদেশে ৮০% মানুষ বিটিভি দেখে। সেদিন ধানমন্ডি জিগাতলায় যদি অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ থাকতো সকল মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে খবর প্রচারের স্বাধীনতা দেয়া হতো, টিভি চ্যানেলগুলো যদি আগের মতো লাইভ টেলিকাস্ট করার সুযোগ পেত, তাহলে কোনটা সত্য আর কোনটা গুজব তা নাগরিকদের সামনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যেতো। মূলধারার গণমাধ্যমকে প্রেসনোট জারি করে এবং বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকারই তো গুজব সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে।
গুজব মানুষের এক ধরনের বিশ্বাসের প্রতিফলন। মানুষ যা প্রতিনিয়ত দেখে এবং মানুষের অন্তরে যে বিষয় স্থির হয়ে গেছে, সে ধরনের ঘটনার খবর সামনে এলে- সেটা গুজব হোক বা সত্যি হোক, মানুষ তার বিশ্বাসের জায়গা থেকেই সেটিকে সত্য বলে ধরে নেয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, গুলিবর্ষণ ও ধর্ষণের খবর কেইবা বিশ্বাস করবে না- বলুন দেখি। দেশের নাগরিকদের সামনে তো এমন জলজ্যান্ত উদাহরণ রয়েছেই! ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা এবং সেই লাশের ওপর পৈশাচিক নৃত্য, বিশ্বজিৎকে দিন-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা, কুষ্টিয়ায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্লজ্জ হামলা, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হাতুড়িপেটা- এসবতো সাধারণ নাগরিকদের স্মৃতি থেকে এখনও মুছে যায়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির নেতাদের ওপর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য গুলির ভিডিও এখনো সোস্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবে আছে। এরপরও ছাত্রলীগের হামলার খবর জনগণ কিসের ভিত্তিতে গুজব বলে মনে করবে? আর ধর্ষণের ঘটনা- সেটা তো আরো স্পর্শকাতর। কিন্তু যে ছাত্রসংগঠনের নেতা কাজী নাসির উদ্দিন মানিকের ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপনের রেকর্ড আছে, যে সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধর্ষণের খবর প্রতিদিন কোনো না কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়- সেই সংগঠনের লোকজন কাউকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করেছে- এমন গুজবে কান দেয়ার যৌক্তিক উপকরণতো ছাত্রলীগই তৈরি করে রেখেছে!
বাংলাদেশের মানুষ গুজবে কেন বিশ্বাস করছে? এ প্রশ্নের সহজ উত্তর যে কেউ একবাক্যে বলে দিতে পারবে- সেটা হলো, এদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। বাংলাদেশের মানুষ খবর পাওয়ার জন্য এখন আর টিভি চ্যানেল অন করে না। আর সে কারণেই মানুষ ঘটনা জানার জন্য সবার আগে সোস্যাল-মিডিয়ায় প্রবেশ করে এবং সত্যটা জানার চেষ্টা করে। একটা প্রেসনোট জারি করে কিংবা নাগরিকদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে গুজবে কান দেয়া থেকে জনগণকে বিরত রাখা আদৌ সম্ভব কি না- বিষয়টি সরকারের কর্তাব্যক্তিরা ভেবে দেখবেন বলে আশা করি। প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করুন। গণমাধ্যমকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দেশে অবাধ তথ্যপ্রবাহের ব্যবস্থা করুন- দেখবেন, কোনটা ‘গুজব’ আর কোনটা ধ্রুব সত্য। তা যদি না হয় তাহলে এইসব চাতুর্যপূর্ণ প্রেসনোটই বরং হয়ে উঠবে অতীব নির্মম একেকটি গুজব।
লেখক : এমফিল গবেষক

Friday, September 21, 2018

শহীদ মাওলানা নিজামী (রহঃ) সম্পর্কে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কিছু কথা


ভিডিওটি দেখুন, প্রচার করুন। টার্কিশ ভাষাকে মনে হবে বাংলা শুনছেন!
এরদোগান নিজামী শাহাদাতের সময় প্রোগ্রামে শহীদ নিজামীর কথা বলছেন। আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামে যেমন বলেছেন তেমনি বলেছেন একদম নিজেদের ঘরোয়া সমাবেশে। এটি তাদের একান্তই নিজেদের একটি সমাবেশ। সেখানে তিনি বলেন-
"বাংলাদেশের ঘটনা শুনেছেন..? মতিউর রহমান নিজামী, যাকে ৪৫ বছর আগের কাহিনীর কারনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওখানে আমাদের ঈঐচ (ধর্মনিরপে- প্রধান বিরোধী দল) এর মত এক রাজনৈতিক দল আছে। যার প্রধান এক মহিলা মতিউর রহমান নিজামীর ফাসিঁ দিয়েছে।
যার বয়স ৭৩, যাকে ৪৫ বছর আগের কাহিনীর কারনে ফাসিঁ দেওয়া হয়েছে। যিনি একজন বিজ্ঞ মানুষ, আলেম ও সাবেক মন্ত্রী....
কী বলতে চাই জানেন..? বেশী কিছু বলতে চাইনা..! শুধু এতটুকুই বলব, জালিমদের জায়গা জাহান্নাম।
কিন্তু এই অন্যায়ের কেউ কী প্রতিবাদ করেছে..? না, করেনী..। গণতন্ত্রকামীরা কী আওয়াজ করেছে..? না, করেনী..। কিন্তু অন্য ধর্মের হলে পশ্চিমাতে এটা নিয়ে কেয়ামত ঘটে যেত। উনি শুধু মুসলমান ও মুসলিম নেতা হওয়ার কারনেই সবাই চুপ.... "
সর্বশেষ বলেছেন.... সকল জুলুমেরই একটা শেষ আছে, সকল খারাপের পরই একটা বসন্ত আসে.... এবং সেই দিন আসবেই ইনশাআল্লাহ....
উনি সর্বশেষ তুরস্কের কিছু কথা বলে একটি হাদীস উল্লেখ করেন, "মান সাবারা..... জাফারা" যে ধৈর্য্য ধরে সে বিজয়ী হয়।

শহীদ মাওলানা নিজামী (রহঃ) সম্পর্কে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কিছু কথা,
প্রেসিডেন্ট এরদোগান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান

Thursday, September 20, 2018

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে স্বরণীয় একটি বিকেল! - শিবির নেতা হাফিজুর রহমান


এরদোয়ান : দ্যা চেঞ্জ মেকার লিখতে গিয়ে বেশ কয়েকবারই একে পার্টির হেড কোযার্টারে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে কিংবা প্রয়োজন হয়েছে। নয় তলা বিশিষ্ট এই কার্যালয়ের নবম তলায় দলীয় চেয়ারম্যানের অফিস। নিচ থেকে উপরে উঠতে চারটি লিফট রয়েছে, যেগুলো আটতলা পর্যন্ত যায়। স্বভাবতই নয় তলায় উঠতে আলাদা সিড়ি/লিফট ব্যবহার করতে হয় এবং দরকার হয় স্পেশাল এপয়েন্টমেন্টের। বই লিখতে গিয়ে আটতলা পর্যন্তই উঠেছি। আটতলায় দলের সাংগঠনিক সভাপতি এবং সেক্রেটারী জেনারেলের অফিস। সাংগঠনিক সভাপতির সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম গত বইতে। সবমিলে নয়তলা নিয়ে রহস্যের কোন শেষ ছিলনা!!
সেদিন ছিল প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রধান উপদেষ্টার সাথে এপয়েন্টমেন্ট, উনাকে বই উপহার দেওয়ার জন্য। প্রধান উপদেষ্টার অফিসটি দলীয় চেয়ারম্যানের রুমের পাশেই। উনি আবার একজন একাডেমিশিয়ান এবং ইসলামী আন্দোলনগুলো উনার গবেষণার অন্যতম বিষয়। তাই উনার সাথে একাডেমিক কিছু আলোচনাও জমে ছিল। আমরা উনার সাথে দেখা করে বই তুলে দেওয়ার পর গল্প করছি এবং তুর্কি চায়ে চুমুক দিচ্ছি।
হঠাৎ প্রেসিডেন্ট উনাকে ডাকলেন। উনি দেখা করে ফিরে আসার পর আবারো আড্ডা শুরু হলো। বিদায় নিতে যাবো এমন সময় আবারো প্রেসিডেন্ট উনাকে ডাকলেন। এবার আমরা একটু সুযোগ নিতে চাইলাম। যদিও প্রথমে বলতে কিছুটা ইত:স্তত বোধ করছিলাম তারপরও বলেই ফেললাম, আমরা কি একটু সালাম দেওয়ার সুযোগ পাবো?
বলার পর নিজের কাছে আরো লজ্জিত হলাম। কারণ কোন প্রস্তুতি এমনকি চিন্তাও ছিলনা। ড্রেসআপও অফিসিয়াল না। উনি বললেন: "দেখি, উনাকে বলবো তোমাদের কথা। যদিও সিডিউল খুব ব্যস্ত।"
উনি গিয়ে আর ফিরছেন না। আমাদের আরেকটি এপয়েন্টমেন্ট ছিল, তাই উনার পিএসকে (প্রধান উপদেষ্টার) বলে বের হয়ে গেলাম। ষষ্ট তলায় আসার পর পিএস ফোন দিলো, আপনাদের ডাকছে। দৌড়িয়ে গেলাম, প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্টের দরজায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
উনি আমাদের নিয়ে উনার রুমে নিয়ে গেলেন। প্রেসিডেন্ট দরজার কাছে এসে আমাদের স্বাগতম জানালেন। তুরস্কের সংস্কৃতিতে স্বাগতম জানানো ও বিদায় দিতে দরজা পর্যন্ত আসার এই বিষয়টি আমাকে খুব অবাক করে। আপনি যেই হোন না কেন, আপনার পজিশন যাই হোক না কেন... তাদের মেহমান হিসেবে গেলে তারা আপনাকে দরজায় এসে স্বাগতম জানাবে এবং বিদায় দিবে।
আমরা সালাম দিলাম, প্রেসিডেন্টের হাতে চুমু খেতে গেলাম। উল্লেখ্য, তুরস্কে বয়োজেষ্ট ও সম্মানিত ব্যক্তিদের হাতে চুমু খাওয়া হয়। উনি হাত সরিয়ে নিলেন এবং আমাদেরকে বুকে জড়িয়ে কপালে চুমু খেলেন।
আমি পরিচয় দিলাম; হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশী, গাজী ইউনির্ভিসিটিতে পিএইচডি করছি আর আপনার জীবনী গ্রন্থের লেখক।
উনি হেসে বললেন: Yes, I Know (আমার মনে পড়েছে/ আমি জানি)।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সাধারণত ইংরেজী খুবই কমই বলেন। উনার মুখ থেকে ইংরেজী শুনে বেশ অবাকই হলাম।
এরপর আমাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলেন। পরিবারে কে কে আছে, কোথায় থাকি, ওয়াইফ কি করে, বাচ্চা কয়জন, কতবড় হইছে, একাডেমিক কি অবস্থা ইত্যাদি ইত্যাদি। বাচ্চা একটা শুনেই বললেন; "নো নো, হবে না। কমপক্ষে পাঁচটা নিতে হতে হবে।" আমি হেসে ইনশাআল্লাহ বললাম। উনি খুব সিরিয়াসভাবে বললেন: "শুধু ইনশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ বললেই হবে না। পদক্ষেপ নিতে হবে"। এভাবে সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন। উল্লেখ্য, আমাদের সাথে আরো কয়েকটি দেশের আন্তর্জাতিক ছাত্ররা ছিল। অবশেষে কিছুক্ষণ খোসগল্প করে বিদায় নেওয়ার পালা। উনি সবাইকে আবারো বুকে জড়িয়ে আদর করে বিদায় দিলেন।
সত্যিই স্বরণীয় মুহুর্তু। অনেকটা মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!! মাশাআল্লাহ। উনার মুখ থেকে বইয়ের ব্যাপারে "Yes I know" বাক্যটি আমার চিরকাল মনে থাকবে এবং আজীবন লেখালেখীর উৎসাহ হবে।
শেষ করছি লেখালেখি নিয়ে দুটি ঘোষণার মাধ্যমে;
১. আলহামদুলিল্লাহ, আমার দ্বিতীয় বই "আমার দেখা তুরস্ক (বিশ্ব ব্যবস্থার নতুন শক্তি তুর্কি জাতির ভেতর-বাহির)" বইমেলাতে আসছে ইনশাআল্লাহ। (পরবর্তী পোস্টে বইয়ের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখবো)।
২. এরদোয়ান : দ্যা চেঞ্জ মেকার বইয়ের পঞ্চম সংস্করণ বই মেলায় আসবে। লেখার পর প্রথমবারের মতো বর্ধিতরুপে আসছে এই সংস্করণটি। যাতে ২০১৮ সালের নির্বাচনসহ সমসাময়িক তুরস্কের আলোচিত কয়েকটি ঘটনা যোগ হবে।

Thursday, September 13, 2018

ইসলামী আন্দোলনে কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা এবং তার পরিণতি

- মুহা: আল আমিন ওমর
ইসলামী আন্দোলন
সাধারনত আন্দোলন বলতে যা বুঝায় তা হচ্ছে নড়া-চড়া করা, দোল খাওয়া বা অবস্থান পরিবর্তন করা ইত্যাদি। এ শব্দটির আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে আল-হারকাত এবং ইংরেজিতে এর প্রতিশব্দ হচ্ছে গড়াবসবহঃ। আল কুরআনের নিজস্ব পরিভাষায় এ শব্দটি হচ্ছে আল-জিহাদু ফি সাবিলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর জমিনে তার দীনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ইসলাম বিরোধী সকল প্রকার প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে নিজের জান, মাল, বুদ্ধি, জ্ঞান, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং শক্তি সামর্থ্য উৎসর্গ করে সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত সংগ্রাম করার নামই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ বা ইসলামী আন্দোলন।

ইসলামী আন্দোলন ঈমানের অপরিহার্য দাবি
মহান আল্লাহ আল কুরআনের সূরা আস-সফের ১০ ও ১১ নম্বর আয়াতে ঈমানদারদের লক্ষ্য করে বলেন, “হে ঈমানদারগ! আমি কি তোমাদের এমন একটি ব্যবসার কথা বলব না, যা তোমাদেরকে (আখিরাতের) ভয়াবহ শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারে? আর তা হচ্ছে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের জান-মাল কুরবান করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে পার।”
সূরা আলে ইমরানের ১৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন, “তোমরা কি মনে করেছো যে, এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবে? অথচ আল্লাহ কি দেখে নিবেন না কে আল্লাহর দীন বিজয়ের জন্য চূড়ান্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং বিপদ মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করেছে?”
রাসূলে কারীম (সা) ইসলামী আন্দোলনের কাজকে সর্বোত্তম কাজ হিসেবে অবিহিত করেছেন। হযরত আবু যার গিফারী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, কোন্ কাজটি সবচেয়ে উত্তম? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে জিহাদ করা। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম]
হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সা)-কে জিজ্ঞেস করা হল, সর্বোত্তম আমল কোন্টি? তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (সা), তারপর কোন্টি সর্বোত্তম আমল? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (সা), তারপর কোন্টি সর্বোত্তম (কাজ) আমল? তিনি বললেন, মকবুল হজ বা গৃহীত হজ। [সহীহ বুখারী ১ম খণ্ড]

ইসলামী আন্দোলনের সিপাহসালার
পৃথিবীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম মানব হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) পর্যন্ত যত নবী-রাসূল এসেছেন তাঁরা সবাই ছিলেন এ আন্দোলনের প্রধান সিপাহসালার। আর এ সমস্ত নবী-রাসূলদের পাশাপাশি যাঁরা তাঁদের তাওহীদের সুমহান দাওয়াত কবুল করেছিলেন তাঁরাও এ আন্দোলনের অন্যতম শরিকদার। তাওরাত, যাবুর, ইনজিল এবং সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কুরআনে যার সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা আল কুরআনের সূরা আন-নাহলের ৩৬ নম্বর আয়াতে বলেন, “প্রত্যেক জাতির কাছে আমি রাসূল পাঠিয়েছি। যিনি এই বলে তাদের আহব্বান জানিয়েছিলেন- তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর এবং তাগুতের আনুগত্য পরিহার কর। এরপর তাদের মধ্য হতে কাউকে হেদায়াত দান করা হয়েছে আর কারোর ওপর গোমরাহী চেপে বসেছে। সুতরাং তোমরা জমিনে পরিভ্রমণ কর আর দেখ মিথ্যাবাদীদের পরিণাম কী হয়েছিল।”
সূরা মায়িদার ৫৭ নম্ব আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন, “হে রাসূল, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা (মানুষের কাছে) পৌঁছে দিন। আর যদি তা না করেন, তবে তো আপনি তাঁর পয়গামের কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদের সৎপথে পরিচালিত করেন না।”
যেহেতু, সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবী মুহাম্মদ (সা)-এর ওফাতের পর কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আর কোনো নবী বা রাসূল আসবেন না, সেহেতু যারা প্রকৃত মুমিন তারাই কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে একটি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য অদ্যাবধি লড়াই করে আসছেন এবং এ লড়াই কিয়ামত সংঘঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলতেই থাকবে ইনশাআল্লাহ।

ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয়তার ফলাফল
ইসলামী আন্দোলনে সর্বসময়ে সক্রিয় থাকা আন্দোলনের কর্মীদের একটি প্রধান গুণ বা বৈশিষ্ট্য। বিপদ মুসিবত যত বড়ই হোক না কেন তাদের থাকতে হবে দৃঢ় ঈমান, অনঢ় ও অটল মনোবল।
এক্ষেত্রে রাসূল (সা) ও সাহাবায়ে কেরামগণসহ যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনে ইতিহাস সৃষ্টিকারী মহৎ ব্যক্তিরাই হচ্ছেন আমাদের প্রধান মাইল ফলক। ইসলামবিরোধী শক্তির নির্যাতন নিপীড়নে তারা ছিলেন সীসাঢালা প্রচীরের ন্যায় অবিচল। নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রা যতই বেড়েছে তাদের ঈমান ততোই বৃদ্ধি পেয়েছে। নিস্ক্রিয়তার লেশ মাত্র তাদের আঁচ করতে পারেনি। প্রয়োজনে তারা দেশান্তরিত হয়েছেন কিন্তু তাগুতি শক্তির কাছে বিন্দুমাত্র আপস করেননি। বিপদ-মুসিবতে সর্বসময়ে যারা ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় থাকেন আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন বলে কুরআনে উল্লেখ করেছেন।
আল কুরআনে সূরা আস-সফের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আল্লাহ তা’য়ালা ঐ সমস্ত লোকদের ভালোবাসেন যারা সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে।”
সূরা বাকারার ২১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা কি মনে করে নিয়েছ যে, তোমরা অতি সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখন পর্যন্ত তোমাদের ওপর তোমাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় বিপদ-আপদ অবতীর্ণ হয়নি। তাঁদের ওপর বহু কষ্ট ও কঠোরতা এবং কঠিন বিপদ মুসিবত অবতীর্ণ হয়েছিল। এমনকি তাঁদেরকে অত্যাচার নির্যাতনে জর্জরিত করে দেয়া হয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত তদানীন্তন রাসূল এবং তাঁর সঙ্গীগণ আর্তনাদ করে বলেছিলেন, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? তখন তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছিল, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।”
রাসূলে করীম (সা) বলেছেন, “হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল করীম (সা) বলেছেন, আল্লাহর পথে একটা সকাল ও একটা বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া ও এর সমস্ত সম্পদ থেকে উত্তম।” [সহীহ বুখারী]
হযরত মু’য়াজ ইবনে জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা) বলেছেন, যে মুসলিম ব্যক্তি উটের দুধ দোহনের সম-পরিমাণ সময় আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। (তিরমিযী)

ইসলামী আন্দোলনে যারা নিস্ক্রিয়
সুযোগবাদী স্বার্থান্বেষী ও মুনাফিকরাই ইসলামী আন্দোলনে এসে নিস্ক্রিয় থাকে। সুযোগ বুঝে এ আন্দোলন থেকে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করে এবং অনেক সময়ে এ আন্দোলনের ক্ষতি করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। বিশ্বনবী (সা)-এর সময়ে আব্দুল্লাহ বিন উবাইসহ কিছু সুযোগবাদী, স্বার্থান্বেষী মুনাফিক ছিল, লোক দেখানো এবং স্বার্থ হাসিল করার জন্যই তারা মূলত এ আন্দোলনে শরিক হয়েছিল।
এইসব মুনাফিকদের সম্পর্কে সূরা নিসার ১৪২-১৪৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোকাবাজি করেছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাদেরকে ধোকার প্রতিফলন প্রদান করবেন। তারা যখন নামাজের জন্য দাঁড়ায় তখন অনিচ্ছা ও শৈথিল্য সহকারে শুধু লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে। তারা কুফরি ও ঈমানের মাঝখানে দোদুল্যমান হয়ে রয়েছে, না পূর্ণভাবে এদিকে না পূর্ণভাবে ওদিকে। বস্তুত আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার মুক্তির জন্য আপনি কোনো পথ পাবেন না।”

ইসলামী আন্দোলনে নিস্ক্রয়তার পরিণতি
যেহেতু নামাজ-রোজার মত ইসলামী আন্দোলনও ফরজ, সেহেতু মুমিন জীবনে ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অসীম। এ আন্দোলনে যারা নিস্ক্রিয় থাকে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা সূরা বাকারার ২১৭-২১৮ নম্বর আয়াতে বলেন, “তোমদের মধ্যে যারা নিজেদের দীন থেকে এড়িয়ে চলবে এবং অস্বীকারকারী (কাফির) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। এ সমস্ত লোকেরাই হবে জাহান্নামী, এতে তারা চিরকাল থাকবে। এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে ও আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে, তারাই তো মহান রবের রহমতের প্রত্যাশী, যিনি ক্ষমাকারী ও পরম করুণাময়।”
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ১৩৭-১৩৮ নম্বর আয়াতে আরো বলেন, “যারা একবার পরিপূর্ণ মুসলমান হয়ে পুনরায় কুফরির পথ অবলম্বন করে এবং দিন দিন এ কুফরিতেই তারা উন্নতি লাভ করে আল্লাহ এ সমস্ত লোকদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং পথও দেখাবেন না। আর যারা প্রতারনা করে তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দিন যে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ বেদনাদায়ক আজাব এবং যারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারীদের পরিত্যাগ করে যারা কুফরি করে তাদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয়। আর তাদের কাছেই সম্মান প্রত্যাশা করে অথচ যাবতীয় সম্মান তো শুধু আল্লাহরই জন্য।”
আল্লাহ তায়ালা সূরা তাওবার ৩৮-৩৯ নম্বর আয়াত আরো বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হলো? যখন তোমাদেরকে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে বলা হয়, তখন তোমরা বিভিন্ন ধরনের বাহানাবাজি তালাশ করার মাধ্যমে (আমাদের দ্বারা সম্ভব নয় বলে) জমিনকে আকড়ে ধরো। তাহলে তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনেই সন্তুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের বিভিন্ন উপকরণ তো খুবই নগন্য। যদি তোমরা (আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার কাজে) বের না হও তাহলে তিনি তোমাদেরকে বেদনাদায়ক কঠিন আজাব দিবেন। আর তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।”
রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, হযরত হারেসুল আশয়ারী (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলো আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেনÑ ১. সংঘবদ্ধ হবে; ২. নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে; ৩. তার আদেশ মেনে চলবে; ৪. হিজরত করবে অথবা আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে; ৫. আর আল্লাহর দীন কায়েমের জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাবে।
আর যে ব্যক্তি (আল্লাহর দ্বীন কায়েমের) সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘৎ পরিমাণ দূরে সরে গেল সে যেন ইসলামের রশি তার গলা থেকে খুলে ফেলল, যতক্ষণ না সে (আল্লাহর দীন কায়েমের) সংগঠনে ফিরে আসে।
আর যে ব্যক্তি লোকদেরকে জাহেলিয়াতের দিকে আহ্Ÿান করে নিশ্চয়ই সে জাহান্নামী, যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে। (তিরমিযী)

নিস্ক্রিয় থাকা মুমিনের কাম্য নয়
যেহেতু (১) দাওয়াত ইলাল্লাহ, (২) শাহাদাতে আ’লান্নাস, (৩) কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ, (৪) ইক্বামতে দীন, (৫) আমর বিল মা’রুফ ওয়া নাহি আ’নিল মুনকার- এই পাঁচটি কাজের  সমন্বয়ের নামই ইসলামী আন্দোলন। সেহেতু আল্লাহ তা’য়ালার প্রকৃত কোনো মুমিন এই পাঁচটি কাজের কোনো একটি কাজ থেকে নিজেকে গাফিল রাখতে চায় না।
সূরা হজের ৭৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর (প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাও) যেমন জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে নিজের কাজের জন্যই বাছাই করে রেখেছেন। আর দীনের ব্যাপারে কোনো সঙ্কীর্ণতা চাপিয়ে দেননি। আর তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম।”
সূরা নিসার ৭৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, “তোমাদের কী হলো যে তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করবে না, অথচ অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলছে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে এ জনপদের জালিম অধিবাসীদের নিকট হতে বের করে নাও। আর আমাদের জন্য তোমার নিকট হতে একজন পৃষ্ঠপোষক অধিপতি নিয়োগ কর এবং তোমার নিকট হতে একজন সাহায্যকারী পাঠাও।”

Popular Posts