Saturday, July 6, 2019

বাংলাদেশ পীর আওলিয়ার দেশ


এইচ এম আব্দুর রহিম : বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশস্ত রাজপথ নিমার্ণে ইসলামের প্রভাব যে প্রকটভাবে কাজ করেছে তা সবারই জানা। ৫৯৫ খিস্টাব্দে কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজা শশাংক সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েই এ দেশের অধিবাসী বৌদ্ধদের যে কঠোর অত্যাচার চালান, বহু বৌদ্ধ ধর্মালন্বীদের নির্মমভাবে হত্যা করে নিজের ব্রাহ্মণ্যবাদী চরিত্রের মুখোশ যে খুলে দেন,তাও ইতিহাসে লেখা আছে। এমনকি এই রাজা শশাংক নিজের গাত্রদাহ মিটানোর জন্য অহিংসবাদী বৌদ্ধদের পূত বৃক্ষ বুদ্ধ গয়ার বোধি দ্রুম শেকড়শুদ্ধ উৎপাটন করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে ও কুষ্ঠাবোধ করেননি। হিন্দু রাজার এই অকথ্য অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অনেক বৌদ্ধ পরিবার পাহাড়-জঙ্গলে দেশান্তরে পালিয়ে যান। জানা যায়, মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মর্দে মুজাহিদদের চেতনায় সমৃদ্ধ মাহাথির মুহাম্মদের পূর্ব পুরুষ এই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মালয়েশিয়ায় চলে যান।
 বাংলাদেশ এক সময় মাৎস্যন্যায় অবস্থায় দিন অতিবাহিত করেছে, তারপর এখানকার জনগণের মিলিত চেষ্টায় গোপাল নামে এক রাজা শাসন ক্ষমতায় এসেছেন। এখানে কিছুকাল বৌদ্ধ রাজত্বকাল প্রবহমান হলে ও আবার তা কট্টর ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজত্বে পরিণত হয় সেন রাজ বংশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। আর এই সেন রাজ বংশের অবসান ঘটে মুসলিমবীর সিপাসালার ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর দ্বারা। এখানে ইসলামের পতাকা বিজয় পতাকা উড্ডীনের মাধ্যমে। মুসলিম শাসন কায়েমের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার ঔজ্জ্বল্যে আলোকিত হওয়ার দিশা খোঁজে পেল। সত্যিকার অর্থে পরাধীনতার নির্যাতনের নিগড় থেকে মুক্ত হলো, সে রাজাদের জারি করা বর্ণবাদ ও কৌলন্য প্রথার জাঁতাকল থেকে রেহাই পেল। যে পুরোহিতদের দ্বারা ব্যাক্যাত যে শ্রেণি বিভাজন তাতে বলা হয়ে ছিল : ব্রাহ্মণ মস্তক হচ্ছে ব্রাহ্মণ, বাহু হল ক্ষত্রিয়, ঊরু হচ্ছে বৈশ্য আর পা হচ্ছে শুদ্র। এছাড়া আর ও অনুন্নত নি¤œশ্রেণির মহিন্দু ছিল। যারা হচ্ছে হাড়ি, ডোম, চান্ডাল বা চাঁড়াল। এসব নি¤œশ্রেণির হিন্দুকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো ও মানবতার অপমানে গুমরে মরছিল, মূল্যবোধ নানাভাবে নিগৃহিত হচ্ছিল। স্বাধীনতার চিন্তাটা উধাও হয়ে গিয়েছিল, স্বাধীনতা বলতে কোথাও কিছু ছিল না, ইসলাম এখানে মানবতার বিজয় বার্তা ঘোষণা করল। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ইসলাম আগমনের সূচনা হয় ৬২৮ খৃস্টাব্দে সম্পাদিত হুদায়বিয়ার সন্ধির পর থেকেই, তবে আরব বণিকদের দ্বারা এ অঞ্চলে ইসলামের খবর এসে যায় । সেসব বণিকের বাণিজ্যে নৌজাহাজ সুদূর চীন-সুমাত্রা অঞ্চল পর্যন্ত যাতায়াত করতো বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ছুয়ে সেসব জাহাজ চীন-সুমাত্রা পর্যন্ত যাতায়াত করতো বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর সেসব জাহাজ দূরপ্রাচ্যে ইসলাম প্রচার করতে যেসব সাহাবে কেরাম যেতেন তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর এলাকায় সফর বিরতি দিয়ে এখানকার মানুষের সামনে ইসলামের বাণী এবং এর সৌন্দর্য তুলে ধরতেন। তারা বোধকরি বাংলাদেশের উপকূলীয় বন্দর ছাড়া ভেতরে প্রবেশের মওকা পাননি সময়ের অভাবে। কারণ তাদের গন্তব্যস্থল ছিল দূরপ্রাচ্য। তখন চীন দেশের শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের গন্তব্য স্থল ছিল দূরপ্রাচ্য। তখন চীন দেশের শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের জন্য জগৎ জোড়া খ্যাতি ছিল। সেসব সাহাবায়ে কেরামের মাযার শরীফ আজও চীনের ক্যান্টন নগরীর ম্যাসেঞ্জার মসজিদ প্রাঙ্গণে যতেœর সাথে সংরক্ষিত আছে। বাংলার স্বাধীন সুলতান গ্যাস উদ্দীন আযম শাহের ইন্তিকালের পরে সুলতানের অমাত্য দিনাজপুরের ভাতুড়ির জমিদার বংশনারায়ণ গনেশ বাঙলার মসনদ দখল করলে পীরে কামিল হযরত নুর কুতবুল আলম রহমাতুল্লাহি আলায়হি এই অত্যাচারী গনেশকে উৎখাত করার জন্য জৌনপুরের শাসনকর্তা ইব্রাহিম শরকীকে লেখেন : প্রায় তিনশ’ বছর হয়েছে বাঙ্গালার ইসলামের শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি এখানে ঈমানকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, সত্য-সুন্দরের কালো থাবা এ দেশটাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। দেশ জুড়ে আঁধার নেমে এসেছে। মুসলিমদের জানমাল, ইজ্জত আব্রুর উপর আঘাত এসেছে। ইসলামের আলোক প্রতীক এখানকার মানুষের যেভাবে সত্য পথের দিশা দিয়ে আসছিল আজ তা হুমকির মুখে। এই মহা দুর্দিনে আপনি কেমন করে নিবিঘেœ মসনদে আসিন থাকতে পারেন? আপনি আপনার সুখের মসনদ থেকে উঠে আসুন। দ্বীনকে সংরক্ষণের জন্য অতিসত্বর এগিয়ে আসুন। আপনার তরবারী কোষবদ্ধ না রেখে কুফরের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখা নির্বাপণে আপনি জোর কদমে অগ্রসর হন। আপনি তো জানেন বাঙ্গালা হচ্ছে পৃথিবীতে বেহেশত। কিন্তু সেই বেহেশতে দুনিয়ার কালো ছায়ায় ঢেকে ফেলেছে। এখানে অত্যাচার-জুলুম-নিপীড়ন আর হত্যাকা-ের যে কারখানা চলছে তা দমন করতে আপনি আসুন আরামের মসনদে আর এক পলক ও বসে থাকবেন না। সেই দীর্ঘ ও জ্বালাময়ী পত্র পেয়ে ইবরাহিম শরীকী কোনরূপ কালক্ষেপন না করে বিরাট বাহিনী নিয়ে বাঙ্গালার বিপন্ন স্বাধীনতািেক বিপন্ন অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে এলেন। এখবর শুনে সমুহ বিপদের আশঙ্কা করে জানে মরার ভয়ে কংশনারায়ন গনেশ হযরত নুরকুতবুর আলম (রা:) এর দরবারে এসে ক্ষমা চাইল এবং তার পুত্র যদুকে মুসলিম করার জন্য অনুরোধ করল। হযরত নুর কুরতুব আলম যদুকে ইসলামের রায়’আত করলেন এবং তার নাম রাখরেন জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ। এ খবর পেয়ে ইবরাহিম শাহ জৌনপুরে ফিরে গেলেন বাঙ্গালার ৫৫৬ বছরের মুসলিম সুশাসনের মাঝখানে মাত্র ৩-৪ বছর বর্ণ হিন্দু শাসন একটি দু:স্বপ্নের মত কিংবা একটি ছন্দ বদ্ধ সুন্দর দীর্ঘ কবিতার একটি মাত্র পংক্তিতে একটি মাত্রার হেরফের হওয়ার মতো সামান্য ছন্দপতনের মত। ইতিহাসে রাজা গনেশ ঘৃনিত ব্যক্তি চি‎ি‎‎হ্নত ব্যক্তি হিসেবে রয়েছে ।স্বাধীন বাংলার দিকে নজর পড়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির । তারা হিন্দু কয়েকজন প্রভাবশালী অমাত্য ও জগৎশেঠদের সাথে আতাত করে এবং মসনদের লোভ দেখিয়ে মীর জাফর কে দলে ভিড়িয়ে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুন পলাশির প্রান্তরে এক মহা প্রহসন মুলক যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজুদৌল্লার কাছ থেকে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য হরন করে নেয়। স্বাধীন বাঙ্গালা,শাহে বাঙ্গালা,সুলতানে বাঙ্গালা পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয়। নানা প্রকার দমন নীতি প্রয়োগ করে মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালাতে থাকে । কিন্তু মুসলমানদের তারা দমাতে পারেনি। ইসলামী শিক্ষায় উজ্জীবিত মীর কাসিম,সুফী দরবেশ কফীর মজনুশাহ বিজ্ঞ আলিম হাজী শরীয়তউল্লাহ মর্দে মুজাহিদ সৈয়দ সিনার আলী তিতুমীরের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। জিহাদের ডাক দিয়েছেন,স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ নির্মাণ করতে অগ্রসার হয়েছেন। ১৮৫৭ খিস্টাব্দে সিপাহী জনতার মহা বিপ্লবের নেতৃত্বে সুফী দরবেশ আলেম ওলামা থাকার কথা সর্বজন বিদিত। পীর মহসিন উদ্দীন দুদু মিয়া বন্ধী হয়েছেন। তার পরের ইতিহাস নতুন কৌশল সংগ্রামের ইতিহাস। হাজী শরিয়ত উল্লাহ এ দেশ কে হাজী হারুল হরব ঘোষণা করে জিহাদের যে ডাক দিয়ে ছিলেন । এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে পড়ার স্পৃহা জাগিয়ে ছিল ঠিক একই মাত্রায় কৌশল ভিন্নতা এনে মাওলানা কেরামত আরী (রহ:)এ দেশকে হারুল আমান বা নিরাপদ ভুমি ঘোষণা করে মুসলিমদের স্বার্থ উদ্ধারের পথ ঘোষণা করে দিলেন। নবাব আব্দুল লতিফ তার দোয়া গ্রহন করে যে শিক্ষা আন্দোলনের সুচনা করলেন তাই পথ পরিক্রমে ১৯০৬ খিস্টাব্দের ডিসেন্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে মুসলিমদের প্রথম রাজনৈতিক দল গঠিত হল। এই সম্মেলনের আহবায়ক ছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ বাহাদুর ভারতের বিভিন্ন এলাকার এজেন্ডার ভঙ্গভঙ্গ বিষয় রাখার প্রস্তাব দিয়ে পত্র পাঠালেন যাতে বললেন, মুসলিমদের কোন রাজনৈতিক সংগঠন না থাকায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে অক্টোবর মাসে যে বঙ্গভঙ্গ হয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পুর্ববাংলা প্রদেশ গঠিত হয়েছে । ঢাকা তার রাজধানী হয়েছে ।তার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দল কংগ্রেস আন্দোলন করেছে। কিন্ত আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না।মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর এজেন্ডায় এ বিষয়টি লিখে পত্র দিলেন। আমরা লক্ষ্য করি সব আন্দোলনে ইসলামের প্রভাব সক্রীয় ছিল।মাওলানা ভাসানি ১৯৫৭ খ্রীস্টাব্দে ৭ই ফেব্রƒয়ারি কাকমারী সম্মেলনে পাকিস্থান কে বিদায় জানিয়ে আচ্ছালামু আলাইকুম বলা ১৯৭১ সালের শেখ মুজিবের ভাষনে ইনসাল্লাহ বলা,৯ইমার্চ পল্টন ময়দানে ভাষানীর লাকুম দিনুকুম ওলিয়াদীন বলা,মেজর জিয়ার সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা ’৭১এর মহান মুক্তি যুদ্ধকালে প্রবাস থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ইশতেহার ও নিদের্শাবলীতে আল্লাহ আমাদের সহায়,নাসরুম মিনাল্লাহী ফাতহুন কারীব প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করণের মাধ্যমে ইসলামের বৈপ্লবিক চেতনার বিকাশ ঘটতে দেখা যায়।১৯৭১ সালের ১৪ই এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের এব নির্দেশনামুলক ইশতিহারের শীর্ষে লেখা ছিল আল্লাহ আকবার এবং শেষ করা হয়ে ছিল আল্লাহর সাহায্য বিজয় নিকটবর্তী। এসব প্রেক্ষিতে বলা যায় চার লাখ মসজিদের এই দেশ, শত শত আল্লাহর ওলির স্মৃতি ধন্য এই দেশ তার স্বাধীন সত্তা মুখ্যত লাভ করেছে ইসলামের প্রভাবে । মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতারে গাওয়া হত :ওলি আল্লাহর বাংলাদেশ শহীদ গাজীর বাংলাদেশ, রহম করো রহম করো আল্লাহ, রহম করো আল্লাহ ।
লেখক :সাংবাদিক ।

Saturday, June 29, 2019

ইতিহাস মুছে ফেল্লেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সর্বোচ্চ অবদান ছিলো মুসলমানদের!

                          
                                    রণবীর ভট্টাচার্য, লেখেছেন ভারত থেকে।।


 ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নাকি মুসলিমদের কোনো অবদান নেই। সেদেশের যেকোনো শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পড়লে সেটাই বোঝা যায়। আর এই মিথ্যাচারমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বহু উগ্রপন্থী হিন্দুই প্রশ্ন তোলেন যে মুসলমানদের এই দেশে থাকা উচিত নয়। কারণ তারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি। মূলত এই বিষয়কে সামনে রেখেই আমার আজকের এই লেখা। সত্য ইতিহাস বলছে, মুসলিমদের তাজা রক্তে ভারত মুক্তি পেয়েছে। জেল খাটা ১ কোটি মুসলমানের আত্ম বলিদান ও ফাঁসি হওয়া ৫ লাখ মুসলমানের প্রাণের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন। সেই চেপে যাওয়া ইতিহাসের মুছে যাওয়া কিছু নাম আমি শেয়ার করলাম।
মাওলানা কাসেম সাহেব, উত্তর প্রদেশর দেওবন্ধ মাদ্রাসাকে ব্রিটিশবিরোধী এক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। সেই দেওবন্দ মাদ্রাসায় আজও কুরয়ানের তালিম দেওয়া হয়। ভারতের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে যাদের নাম অবশ্যই পাওয়া যায় তারা হলো– গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র, অরবিন্দ, জোহরলাল, মতিলাল, প্রমুখ…। কিন্তু এদের চেয়েও বেশী বা সমতুল্য নেতা আতাউল্লাহ বুখারী, মাওলানা হুসেন আহমাদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা গোলাম হোসেন প্রমুখ..(এনারা বহু বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন) তাদের নাম ভারতের ইতিহাসে নাই। ইংরেজ বিরোধী কর্যকলাপের জন্য যার নামে সর্বদা ওয়ারেন্ট থাকতো। সেই তাবারক হোসেনের নামও ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না।

তৎকালিন সময়ে সারা হিন্দুস্থানের কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যার সংস্পর্শে আসলে হিন্দু-মুসলিম নব প্রান খুজে পেতেন, সেই হাকিম আজমল খাঁ কে লেখক বোধ হয় ভূলে গিয়েছেন। মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল যার সাহায্য ছাড়া চলতে পারতেন ই না। যিনি না থাকলে গান্ধী উপাধিটুকু পেতেন না। সেই মাওলানা আজাদকে পর্যন্ত ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ দেওয়া হল। মাওলানা মুহম্মদ আলি ও শওকত আলি। ৫ বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন। ‘কমরেড’ ও ‘হামদর্দ’ নামক দুটি ইংরেজ বিরোধী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাদের নাম ভারতের ইতিহাসের ছেড়া পাতায় জায়গা পায় না । খাজা আব্দুল মজীদ ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টার হন। জহরলালের সমসাময়িক কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন। প্রচন্ড সংগ্রাম করার ফলে তার এবং তার স্ত্রী উভয়ের জেল হয়। ১৯৬২ সালে তার মৃত্যু হয়। ইতিহাসের পাতায়ও তাঁদের নামের মৃত্যু ঘটেছে। ডবল অ.গ এবং চ.ঐ.উ ডিগ্রিধারী প্রভাবশালী জেল খাটা সংগ্রামী সাইফুদ্দিন কিচলু। বিপ্লবী মীর কাশেম, টিপু সুলতান, মজনু শা, ইউসুফÑ তারা ব্রিটিশদের বুলেটের আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হলো কীভাবে? সর্ব ভারতীয় নেতা আহমাদুল্লাহ।

তৎকালীন সময়ে ৫০ হাজার রুপি যার মাথার ধার্য করেছিল ব্রিটিশরা। জমিদার জগন্নাথ বাবু প্রতারণা করে, বিষ মাখানো পান খাওয়ালেন নিজের ঘরে বসিয়ে। আর পূর্ব ঘোষিত ৫০ হাজার রুপি পুরস্কার জিতে নিলেন। মাওলানা রশিদ আহমদ। যাকে নির্মম ভাবে ফাঁসি দিয়ে পৃথিবী থেকে মুছে দিলো ইংরেজরা। ইতিহাসলেখক কেন তার নাম মুছে দিলেন ইতিহাস থেকে। জেল খাটা নেতা ইউসুফ, নাসিম খান, গাজি বাবা ইয়াসিন ওমর খান তাদের নাম আজ ইতিহাসে নেই কেন? ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পরে, কুদরতুল্লাহ খানে মৃত্যু হলো কারাগারে। ইতিহাসের পাতায় নেই তার মৃত্যু ঘটলো কীভাবে? সুভাষ চন্দ্র বসুর ডান হাত আর বাম হাত যারা ছিলেন..। ইতিহাসে তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা হলেন আবিদ হাসান শাহনাওয়াজ খান, আজিজ আহমাদ, ডিএম খান, আব্দুল করিম গনি, লেফট্যানেন্ট কর্নেল, জেট কিলানি, কর্নেল জ্বিলানী প্রমুখ..। এদের অবদান কী করে ভুলে গেলেন? বিদ্রোহী গোলাম রব্বানী, সর্দার ও হয়দার, মাওলানা আক্রম খাঁ, সৈয়দ গিয়াসুদ্দিন আনসার। এদের খুন আর নির্মম মৃত্যু কি ভারতের স্বাধীনতায় কাজে লাগেনি? বিখ্যাত নেতা জহুরুল হাসানকে হত্যা করলে মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করে ইংরেজ সরকার। মাওলানা হজরত মুহানী এমন এক নেতা, তিনি তোলেন সর্ব প্রথম ব্রিটিশ বিহীন চাই স্বাধীনতা।
জেলে মরে-পচে গেলেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, তার নাম কি ইতিহাসে ওঠার মতো নয়!? হাফেজ নিশার আলি যিনি তিতুমীর নামে খ্যাত ব্রিটিশরা তার বাঁশেরকেল্লাসহ তাকে ধংব্বস করে দেয়। তার সেনাপতি গোলাম মাসুমকে কেল্লার সামনে ফাঁসি দেওয়া হয়। কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে ব্যার্থ ক্ষুদিরামের নাম আমরা সবাই জানি, কিংসফোর্ড হত্যাকরী সফল শের আলী বিপ্লবীকে আমরা কেউ জানি না। কলকাতার হিংস্র বিচারপতি জর্জ নরম্যান হত্যাকরী আব্দুল্লাহর নামও শের আলীর মতো বিলীন হয়ে আছে..। বিখ্যাত নেতা আসফাকুল্লাহ। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বীর আব্দুস সুকুর ও আব্দুল্লা মীর এদের অবদান কি ঐতিহাসিকরা ভুলে গেছেন? সূত্র : স্বদেশ বার্তা।

Popular Posts