ইঞ্জিনিয়ার ফিরোজ আহমাদ : [দুই]
কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তার নিজের ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্টে শোক জানিয়ে বলেন,‘মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির হঠাৎ মৃত্যুর খবর পেয়ে মর্মাহত হয়েছি। তার পরিবার ও মিশরবাসীর জন্য সমবেদনা জানাই।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মকবুল আহমাদ ও সেক্রেটারি ড: শফিকুর রহমান গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন,মিশরের ইতিহাসে প্রথমবার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিশরের সাবেক জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি দেশের একটি আদালতের এজলাসে রহস্যজনকভাবে ইন্তিকাল করার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। তার রহস্যজনকভাবে ইন্তিকালে আমরা একজন স্বজন হারানোর গভীর বেদনা অনুভব করছি। ড. মুরসির রহস্যজনকভাবে ইন্তিকালে গোটা মুসলিম উম্মাহ গভীরভাবে শোকাভিভুত ও মর্মাহত। মিশরের অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ড: মুরসিকে ২০১৩ সালে জে: আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি অবৈধভাবে সামরিক অভ্যুথান ঘটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করেন। অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে প্রায় ৬ টি বছর অবৈধভাবে কারাগারে আটক রেখে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়। সেই থেকেই মিশরের জনগণ ও মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা কর্মীদের উপর চলছে হত্যা,জুলুম, নির্যাতন । এছাড়া মুসলিম ব্রাদারহুডের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে । জে: সিসি মিশর থেকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও ন্যায় বিচার নির্বাসনে পাঠিয়ে গোটা দেশকে একটি কারাগারে পরিণত করেছে । সেখানে কারোর জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই । জে: সিসি সরকারের চরম জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ড: মুরসি আদালতের এজলাসে রহস্যজনকভাবে ইন্তিকাল করেছেন । এ ঘটনা মিশর সরকারের জুলুম নির্যাতনের জ্বলন্ত উদাহরণ । তারা বলেন, ইসলামী আদর্শ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তার এ আত্মত্যাগ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ ও সকল মুক্তিকামী জনতা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে । তারা আরো বলেন,আল্লাহ তায়ালা ড: মুরসির জীবনের সকল নেক আমল কবুল করে তাঁকে শাহাদাতের মর্যাদা দিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দান করুন । আমরা তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবার পরিজন,দলীয় সহকর্মী ও মিশরের শোক সন্তপ্ত জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে দোয়া করছি । আল্লাহ তাদের এ শোক সহ্য করার তৌফিক দান করুন ।
ড: মোহাম্মদ মুরসির ইন্তিকালে ছাত্রশিবিরের শোক: মিশরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একমাত্র প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ড. মোহাম্মদ মুরসির ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ও তাঁর শাহাদাতের কবুলিয়াতের জন্য সবাইকে আল্লাহর দরবারে দোয়া করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির । যৌথ শোক বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন ও সেক্রেটারী জেনারেল মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন,সারা বিশ্বের ইসলামপ্রিয় কোটি জনতার প্রিয় নেতা মিশরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বচিত একমাত্র প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি স্বৈরাচার জালিম শাসক আব্দুল ফাত্তাহ সিসির আদালতে থাকাবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন ) । ইসলামবিরোধী বর্বর শাসকের সাজানো মামলায় আটক থাকাবস্থায় জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি পরিবারের সান্নিধ্য, উন্নত চিকিৎসা - বঞ্চিত অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন । তাঁর এই বেদনাদায়ক ইন্তিকালে ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল,কর্মী ও বাংলাদেশের জনগণসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্ব গভীরভাবে শোকাহত ।
বিশ্ব বরেণ্য এই ইসলামী আন্দোলনের মহান নেতার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে শোকবাণী জ্ঞাপণ করেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন,জনসেবা আন্দোলন,ফিলিস্তিনের হামাস, ব্রিটিশ সরকার প্রধান এবং বিশ্বের আরো অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ।
ড. মুরসির সোনালী জীবনমালা : মোহাম্মদ মুরসি ১৯৫১সালের ৮ই আগস্ট মিশরের আল শারক্বিয়্যাহর আল আদওয়াহ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করে। তার আব্বা ছিলেন একজন কৃষক । আম্মা ছিলেন সাধারণ গৃহিণী। মুরসিরা তিন ভাই ও দুই বোন । মেধাবী মুরসির প্রাথমিক ও সেকেন্ডারী স্কুলের লেখাপড়া সাফল্যের সাথে শেষ হয়েছে নিজ গ্রামে এর পর কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন । এর পর ১৯৭৫ - ৭৬ এ তিনি মিশর সেনাবাহিনীতে কাজ করেন । ১৯৭৮ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংএ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হন এবং অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে ১৯৮২ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন । তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে অধ্যাপনা শুরু করেন । পরে আমেরিকার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত । নাসার মত প্রতিষ্ঠানেও তিনি খুব সুনামের সাথে স্পেস শ্যাটল ইঞ্জিন উন্নয়নে অনেক বড় ভ’মিকা রেখেছেন । এর পরে তিনি নিজ প্রদেশের জাগাজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে শিক্ষকতা করেন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১০ সাল পর্যন্ত এভাবে সেখানে শিক্ষকতা করেন ।
তিনি ১৯৯২ সালে তিনি ইখওয়ানের সদস্য হন কিন্তু ১৯৭৯ সাল থেকেই তিনি ইসলামী আন্দোলনে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েন । ১৯৯৫ ও ২০০০ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ গ্রহণ করেন এবং এমপি হিসেবে ইখওয়ানের পার্লামেন্টারিয়ান দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত এমপি হন অথচ তার পরিবর্তে তার বিরোধীকে জয়ী ঘোষণা দেয়া হয় । মিশরীয় পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তিনি ছিলেন খুবই নামকরা । ২০১১ সালের আরব বসন্তের ধাক্কায় মিশর যখন ভেংগে পড়ে, তিনি তখন বড় ভূমিকা পালন করেন । তিনিই সেই নেতা যিনি একদিকে ইখওয়ানের শুরা সদস্য আবার সমমনাদের নিয়ে গঠিত ‘ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস’গঠন করে উহাকে বিজয়ের মুখ দেখান । ২০১২ সালের নির্বাচনের আগে ইখওয়ান তাদের নেতা খায়রাত আশশাতেরকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা করে। পরে সাংগঠনিকভাবে মুরসিকেও প্রার্থী হৗয়ার জন্য নির্দেশ দেয় যেন খায়রাতকে বাতিল করা হলে তাকে ইখওয়ান সমর্থন দিতে পারে। তাই হল । খায়রাতকে বাতিল করা হল। পরে ইখওয়ান মুরসিকে সমর্থন জানায়। ২০১২ সালে ৫১.৭% ভোট পেয়ে তিনি বিজয়ী ঘোষিত হন। ২৪ শে জুন তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষিত হন। শপথ নেন ৩ শে জুন ২০১২ তে। নতুনভাবে মিশরকে গড়ার সংগ্রাম শুরু করেন কেবল। কিন্তু পশ্চিমাদের চক্রান্তে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং দলের সহকর্মীদেরসহ কারারুদ্ধ হন । [সমাপ্ত]
Source: http://www.dailysangram.com