Sunday, July 7, 2019

মিসরের শহীদ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি প্রসঙ্গে



আশিকুল হামিদ : প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটে। নানাভাবে মানুষের মৃত্যু ঘটতেও থাকবে। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু সমগ্র পৃথিবীকে আন্দোলিত করে। বিশ্ববাসীর মনে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়। গত ১৭ জুন মিসরের রাজধানী কায়রোর একটি আদালতে মৃত দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি ছিলেন তেমন একজন মানুষ। প্রকৃতপক্ষে এ যুগের একজন মহামানব। অভিযোগ উঠেছে, মিসরে এ পর্যন্ত জনগণের ভোটে নির্বাচিত একমাত্র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে আসলে সুকৌশলে হত্যা করা হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েফ এরদোয়ান জনাব মুরসিকে ‘শহীদ’ বলে ঘোষণা করেছেন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বহু দেশ ও সংগঠনের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুর ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। এর কারণ, তার মৃত্যু সাধারণ অসুস্থতার কারণে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ঘটেনি। তিনি মারা গেছেন আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য রাখার এক পর্যায়ে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে। জনাব মুরসি অজ্ঞান হয়ে মাটিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন কিন্তু দীর্ঘ ২০ মিনিট পর্যন্ত সরকার কোনো চিকিৎসককে আনার ব্যবস্থা করেনি। অনেক পরে হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সরকারিভাবেও প্রচার করে জানানো হয়, মোহাম্মদ মুরসি ইন্তিকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। পরদিন, ১৮ জুন তুরস্কসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে একই সময়ে জনাব মুরসির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানসহ মুসলিম বিশ্বের অনেক নেতাই গায়েবানা জানাজায় শরিক হয়ে জনাব মুরসির মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেছেন। তার নিজের দেশ মিসরে অবশ্য ব্যতিক্রম ঘটেছে। সেখানে প্রকাশ্যে কারো পক্ষে গায়েবানা জানাজা পড়া সম্ভব হয়নি। যারা পড়েছেন তারা গোপনীয়তা বজায় রাখতে বাধ্য হয়েছেন।
এমন অবস্থার কারণ সম্পর্কে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, মিসরে এখন অবৈধ প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির স্বৈরশাসন চলছে। দেশের সংবিধান সংশোধন করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে থাকার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০১৩ সালের ৪ জুলাই এই জেনারেল আল-সিসিই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর মিথ্যা মামলায় কারাগারে ঢুকিয়েছিলেন। প্রথম কিছুদিন পর্যন্ত তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীকালে জেনারেল সিসির সরকার জানিয়েছিল, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও কর্মকান্ডের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জনাব মুরসিকে বন্দী করা হয়েছে। সে সময় থেকেই জনাব মুরসিকে করাগারে রেখেছে আল-সিসির সরকার।
অন্যদিকে ২০১৩ সাল থেকে বন্দী সাবেক প্রেসিডেন্ট বহুবার আদালতে অভিযোগ করেছেন, তার ওপর প্রচ- নির্যাতন চালানো হয় এবং তাকে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সাধারণ কয়েদীদের সঙ্গে বাস করতেও বাধ্য করা হয়। তিনি দুর্গন্ধযুক্ত পচা ও বাসী খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছিলেন। তাকে কোনো ওষুধ ও চিকিৎসার সুযোগও দেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে অন্য একটি তথ্যও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। বন্দী অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে জনাব মুরসি একবারের জন্য পবিত্র কোরআন শরীফ ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নামে মুসলিম হলেও আল-সিসির সরকার তাকে কোরআন শরীফও দেয়নি। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে জনাব মুরসি বলে গেছেন, তারা হয়তো জানেই না যে তিনি অর্থাৎ মোহাম্মদ মুরসি ৪০ বছর আগেই পবিত্র কোরআন শরীফ মুখস্থ করেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি শুধু কোরআন শরীফকে একটু ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সুযোগটুকুও তাকে দেয়নি মুসলিম নামের আল-সিসির সরকার। এভাবে সব মিলিয়ে তাকে এত বেশি নির্যাতিত অবস্থায় রাখা হয়েছিল যে, সাবেক নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি তার জীবন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছিলেন। প্রকাশ্য আদালতে বিচারপতিদের তিনি জানিয়েছিলেন, তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সবশেষে গত ১৭ জুন জনাব মোহাম্মদ মুরসির সে আশংকাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তাকে আসলেও হত্যা করেছে আল-সিসির সরকার। না হলে একজন জনপ্রিয় ও নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ২০ মিনিট পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় মাটিতে ফেলে রাখা হতো না। একই কারণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জনাব মুরসিকে ‘শহীদ’ বলে ঘোষণা করেছেন। বিশ্বের মুসলিমরাও তাকে ‘শহীদ’ এর মর্যাদা দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেছেন।
প্রসঙ্গক্রমে এখানে মোহাম্মদ মুরসির এবং সেই সাথে মিসরের ইতিহাস স্মরণ করা দরকার। সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য তথ্যটি হলো, প্রায় ৮৪ বছর ধরে নিষিদ্ধ অবস্থায় থাকা মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রার্থী হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসিকে মেয়াদের এক বছরও পূর্ণ করতে দেয়া হয়নি। এর আগে প্রায় তিন দশকের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি। প্রচন্ড গণআন্দোলনের মুখে তার পতন ঘটে ১০ ফেব্রুয়ারি। হোসনি মোবারক ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৮১ সালের ১৪ অক্টোবর, প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত নিহত হওয়ার আট দিন পর। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা হিসেবে মোবারক চারবার প্রেসিডেন্ট পদে ‘নির্বাচিত’ হয়েছিলেন। সেগুলো এমন নির্বাচন ছিল যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা পাত্তাই পেতেন না। শেষবার ২০০৫ সালে নির্বাচনে মোবারক কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে দাঁড়াতে পর্যন্ত দেননি।
এভাবে সময়ে সময়ে লোক দেখানো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও মিসর আসলে ছিল অঘোষিত সামরিক শাসনের অধীনে। এরও শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালে রাজা ফারুককে উৎখাত করার পর থেকে। প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন রাজা ফারুক বিরোধী অভ্যুত্থানের নেতা কর্নেল গামাল আবদেল নাসের। নাসেরের আমলে ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরাইলের সঙ্গে মিসরের যুদ্ধ হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সংঘটিত সে যুদ্ধে গোটা বিশ্ব দাঁড়িয়েছিল মিসরের পক্ষে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্ট নাসের সে সময় সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু এবং যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল যোসেফ টিটোর সঙ্গে নাসের ছিলেন জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
অমন ভূমিকা ও অবস্থান সম্মানজনক হলেও মিসরকে প্রেসিডেন্ট নাসের গণতন্ত্রের পথে এগোতে দেননি, তিনি বরং সেনাবাহিনীকে সামনে রেখে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা বর্তমান রাশিয়ার সমর্থন পাওয়ার কৌশল হিসেবে তিনি এমনকি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি অনুসরণের অভিনয়ও করতেন। ১৯৭০ সালে নাসেরের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় এসেছিলেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আরেক জেনারেল আনোয়ার সাদাত। ইসরাইলের সঙ্গে ক’টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে আনোয়ার সাদাত জনসমর্থন খুইয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর এক সদস্য তাকে প্রকাশ্য এক সামরিক অনুষ্ঠানে গুলী করে হত্যা করেছিলেন। আনোয়ার সাদাত মারা যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক। তিনি ছিলেন বিমান বাহিনীর প্রধান। এভাবেই মিসরে বছরের পর বছর ধরে চলেছে সামরিক শাসন। মুখে গণতন্ত্রের আড়াল নেয়া হলেও হোসনি মোবারকের ৩০ বছরই মিসর ছিল জরুরি অবস্থার অধীনে। মিসরে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল হোসনি মোবারকের পতনের পর, ২০১২ সালের ৩০ জুন। প্রথম সে নির্বাচনে ৫১.২ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ড. মোহাম্মদ মুরসি। তিনি ছিলেন আল-ইখওয়ান আল-মুসলিমুন বা মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রার্থী। ১৯২৮ সালে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাববিদ ও রাজনীতিক হাসান আল বান্না। ১৯৪৮ সালে তাকে হত্যা করা হয়। একযোগে মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর নেমে আসে সরকারের প্রচন্ড দমন-নির্যাতন। ১৯৫৪ সালে নাসেরকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর নেতা-কর্মি ও সমর্থকদের ওপর চলতে থাকে প্রচন্ড নির্যাতন। সুদীর্ঘ এ সময়কালে মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েকজন নেতাকে এমনকি ফাঁসিতেও প্রাণ হারাতে হয়েছে। কিন্তু এত প্রতিক’লতার পরও মুসলিম ব্রাদারহুড শুধু টিকেই থাকেনি, গোপন তৎপরতার মাধ্যমে মিসরের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের অবস্থানেও পৌঁছে গিয়েছিল। এজন্যই মোহাম্মদ মুরসি ৫১ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন।
কিন্তু নির্বাচিত হলেও এবং দেশের জন্য একটি সংবিধান রচনা ও গণভোটের মাধ্যমে সে সংবিধানকে পাস করিয়ে নিলেও রাষ্ট্রীয় কোনো একটি ক্ষেত্রেই মোহাম্মদ মুরসিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে বা পদক্ষেপ নিতে দেয়া হয়নি। ড. মুরসি ও তার সমর্থকরা প্রকাশ্যেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। বাজেট ও ব্যয়সহ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না বলে ২০১২ সালের আগস্টে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট মুরসি সেনাবাহিনীর কোনো সহযোগিতা পাননি। পাশাপাশি ছিল স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের সাজিয়ে যাওয়া বিচার বিভাগ, পুলিশ ও প্রশাসন। অর্থাৎ সবদিক থেকেই প্রেসিডেন্ট মুরসি প্রচন্ড প্রতিক’ল এক অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলেন, যার কারণে সদিচ্ছা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও তার পক্ষে জনকল্যাণমূলক কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনাপ্রবাহে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন মোহাম্মদ এল বারাদেইয়ের মতো পাশ্চাত্যের ক্রীড়নক রাজনীতিকরা। উল্লেখ্য, এই এল বারাদেই-ই প্রধান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক পরিদর্শক হিসেবে সাদ্দাম হোসেনের ইরাকে ব্যাপক মানববিধ্বংসী সমরাস্ত্র রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার সে মিথ্যাচারকে অবলম্বন করেই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালিয়েছিল। সেই থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে একের পর এক রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটেছে। এই প্রক্রিয়ায় মিসরেও এল বারাদেইকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মোহাম্মদ মুরসি ও মুসলিম ব্রাদারহুডের জনপ্রিয়তার কাছে এল বারাদেই চুপসে গিয়েছিলেন। তিনি এবং তার ইসলামবিরোধী বিদেশি সমর্থকরা যে নীরবে বসে থাকেনি তারই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল আল-সিসির নেতৃত্বে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানে। ২০১৩ সালের ৪ জুলাইয়ের সামরিক অভ্যুত্থানে প্রমাণিত হয়েছে, মুরসি তথা মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধাচরণের মধ্য দিয়ে মিসরে প্রকৃতপক্ষে ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধেই অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে জানাজানি হতেও সময় লাগেনি। প্রমাণিত হয়েছে, এল বারাদেই এবং তার ইসলামবিরোধী বিদেশি সমর্থকরা এতদিন নীরবে বসে থাকেনি। তারাই ঘটিয়েছিল মুরসি বিরোধী অভ্যুত্থান।
তারও আগে মূলত সেনাবাহিনীর অসহযোগিতাজনিত অক্ষমতাকে মোহাম্মদ মুরসি ও মুসলিম ব্রাদারহুডের অযোগ্যতা হিসেবে প্রচার করেছে ক্ষমতালোভী চক্র। এই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন মোহাম্মদ এল রারাদেইয়ের মতো পাশ্চাত্যের ক্রীড়নক রাজনীতিকরা। তারা সম্মিলিতভাবে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুরসি বিরোধী বিক্ষোভ উস্কে দিয়েছে। হোসনি মোবারকের পতনের পর রাতারাতি কোনো সুফল ভোগ করতে না পারায় তরুণরাও নতুন করে রাজপথে নেমে এসেছে। তারা লক্ষ্যই করেনি যে, প্রেসিডেন্ট মুরসির কথিত ব্যর্থতা বা অযোগ্যতার পেছনে দায়ী আসলে ছিল সেনাবাহিনী। বিরামহীন উস্কানিতে বিক্ষুব্ধ তরুণদের পাশাপাশি মুসলিম ব্রাদারহুড বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও রাজপথে আন্দোলন করেছে। সে অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনী প্রসিডেন্ট মুরসিকে হঠাৎ ২০১৩ সালের ৩ জুলাই পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন এবং সংবিধান সংশোধন করাসহ বেশ কিছু শর্ত পূরণের দাবি জানিয়েছিল সেনাবাহিনী। ওদিকে মুরসির পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ারে শুরু হয়েছিল গণসমাবেশ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সেনাবাহিনীর দাবি ও আল্টিমেটাম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে মুরসি ঘোষণা করেছিলেন, জীবন দিতে হলেও অবৈধ কোনো শক্তির অশুভ ইচ্ছার কাছে তিনি নতি স্বীকার করবেন না। তিনি বরং জনগণের ইচ্ছা ও আশা-আকাংক্ষা এবং দেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখবেন। প্রেসিডেন্ট মুরসির এই অস্বীকৃতি ও বলিষ্ঠ অবস্থান সেনাবাহিনীকে ক্ষুব্ধ করেছিল। ইসলামবিরোধী পাশ্চাত্যের ক্রীড়নক হিসেবে চিহ্নিত সাবেক ক’টনীতিক মোহাম্মদ এল বারাদেইসহ কিছু রাজনৈতিক নেতা ও দলের সমর্থন নিয়ে সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে ২০১৩ সালের ৪ জুলাই। সেদিন থেকেই কায়রোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে অবস্থান নিয়েছিলেন মুরসির সমর্থক লাখ লাখ নারী-পুরুষ। এসব স্থানে দিনের পর দিন অবস্থান করেছেন তারা। বন্দি প্রেসিডেন্ট মুরসির মুক্তি ও পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। তাদের ওপরই দিনের পর দিন ধরে সশস্ত্র অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। তুরস্ক একে গণহত্যা বলেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি অস্ত্রের মুখে সমাবেশ পন্ড করতে এবং মুরসি সমর্থকদের রাজধানী কায়রো থেকে তাড়িয়ে দিতে পারলেও সেনাবাহিনীর পক্ষে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি। কারণ, মোহাম্মদ মুরসি শুধু গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্টই ছিলেন না, ছিলেন এমন একদল মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধিওÑ যে দলটি নিষেধাজ্ঞা এবং নিষ্ঠুর দমন-নির্যাতনের মধ্যেও দীর্ঘ ৮৪ বছর ধরে বিকশিত হয়েছে। জনপ্রিয়তারও শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল দলটি। অমন একটি দলকে কেবলই বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে রাখা কিংবা নির্মূল করা সম্ভব হতে পারে না। এরই মধ্যে পরিবর্তনের হাওয়াও বইতে শুরু করেছিল বলেই মোহাম্মদ মুরসিকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, ৬৭ বছরের বেশি সময় ধরে সেনা শাসনে অতীষ্ঠ ও পিছিয়ে পড়া মিসরের সাধারণ মানুষও নতুন করে সেনাবাহিনীর অধীনস্থ হতে সহজে সম্মত হবে না। প্রেসিডেন্ট পদে মোহাম্মদ মুরসির পুনর্বহাল আর সম্ভব নয় সত্য, কিন্তু সংবিধান, গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠবে মিসরের জনগণ। সে ইঙ্গিত এর মধ্যে পাওয়াও যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, আল-সিসির সেনাবাহিনী নতুন করে এক গভীর সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা মোটেও সহজ হবে না। সেনাবাহিনীকে বরং জনগণের ইচ্ছার কাছে নতিস্বীকার করতে হবে।
ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জীবন হারাতে হলেও প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার পাশাপাশি রয়েছে এমন এক রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড, ২০১১ সালে হোসনি মোবারকের পতন পর্যন্ত নিষিদ্ধ অবস্থায় কাটানোর পরও যে দলটির প্রার্থী হিসেবেই প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ মুরসি। সুবিধাবাদী ও পাশ্চাত্যের ক্রীড়নক রাজনীতিকদের সহযোগিতা নিয়ে সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত এবং শেষ পর্যন্ত হত্যা করলেও তার দলই আবারও ক্ষমতায় আসতে পারেÑ এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পর্যবেক্ষকরা। সব মিলিয়ে বলা যায়, মিসর আসলে নতুন করে এক গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি মিসরকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে চাইলে সেনাবাহিনীকে অবশ্যই ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে। আবারও সুযোগ দিতে হবে গণতন্ত্রকে, যার সূচনা করতে হলে আয়োজন করতে হবে নতুন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের। গণতন্ত্রসম্মত এই পথে যাওয়ার পরিবর্তে জেনারেল আল-সিসি যদি সামরিক শাসনের ভিত্তিকেই দৃঢ়মূল করার চেষ্টা চালান তাহলে সভ্য ও ঐতিহ্যের মুসলিম দেশটি এমনকি গৃহযুদ্ধেরও শিকার হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বলা দরকার, যা কিছুই ঘটুক না কেন মিসরের ভবিষ্যৎ সকল পরিবর্তনের পেছনে থাকবেন ‘শহীদ’ মোহাম্মদ মুরসি।

মুরসি সাহেবকে শহিদ বলা যাবে কি? দলিল সহ প্রমান দেখুন, কথা বললেন #মুফতি_আবুল_কালাম_আজাদ।

Saturday, July 6, 2019

বাংলাদেশ পীর আওলিয়ার দেশ


এইচ এম আব্দুর রহিম : বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশস্ত রাজপথ নিমার্ণে ইসলামের প্রভাব যে প্রকটভাবে কাজ করেছে তা সবারই জানা। ৫৯৫ খিস্টাব্দে কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজা শশাংক সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েই এ দেশের অধিবাসী বৌদ্ধদের যে কঠোর অত্যাচার চালান, বহু বৌদ্ধ ধর্মালন্বীদের নির্মমভাবে হত্যা করে নিজের ব্রাহ্মণ্যবাদী চরিত্রের মুখোশ যে খুলে দেন,তাও ইতিহাসে লেখা আছে। এমনকি এই রাজা শশাংক নিজের গাত্রদাহ মিটানোর জন্য অহিংসবাদী বৌদ্ধদের পূত বৃক্ষ বুদ্ধ গয়ার বোধি দ্রুম শেকড়শুদ্ধ উৎপাটন করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে ও কুষ্ঠাবোধ করেননি। হিন্দু রাজার এই অকথ্য অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অনেক বৌদ্ধ পরিবার পাহাড়-জঙ্গলে দেশান্তরে পালিয়ে যান। জানা যায়, মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মর্দে মুজাহিদদের চেতনায় সমৃদ্ধ মাহাথির মুহাম্মদের পূর্ব পুরুষ এই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মালয়েশিয়ায় চলে যান।
 বাংলাদেশ এক সময় মাৎস্যন্যায় অবস্থায় দিন অতিবাহিত করেছে, তারপর এখানকার জনগণের মিলিত চেষ্টায় গোপাল নামে এক রাজা শাসন ক্ষমতায় এসেছেন। এখানে কিছুকাল বৌদ্ধ রাজত্বকাল প্রবহমান হলে ও আবার তা কট্টর ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজত্বে পরিণত হয় সেন রাজ বংশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। আর এই সেন রাজ বংশের অবসান ঘটে মুসলিমবীর সিপাসালার ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর দ্বারা। এখানে ইসলামের পতাকা বিজয় পতাকা উড্ডীনের মাধ্যমে। মুসলিম শাসন কায়েমের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার ঔজ্জ্বল্যে আলোকিত হওয়ার দিশা খোঁজে পেল। সত্যিকার অর্থে পরাধীনতার নির্যাতনের নিগড় থেকে মুক্ত হলো, সে রাজাদের জারি করা বর্ণবাদ ও কৌলন্য প্রথার জাঁতাকল থেকে রেহাই পেল। যে পুরোহিতদের দ্বারা ব্যাক্যাত যে শ্রেণি বিভাজন তাতে বলা হয়ে ছিল : ব্রাহ্মণ মস্তক হচ্ছে ব্রাহ্মণ, বাহু হল ক্ষত্রিয়, ঊরু হচ্ছে বৈশ্য আর পা হচ্ছে শুদ্র। এছাড়া আর ও অনুন্নত নি¤œশ্রেণির মহিন্দু ছিল। যারা হচ্ছে হাড়ি, ডোম, চান্ডাল বা চাঁড়াল। এসব নি¤œশ্রেণির হিন্দুকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো ও মানবতার অপমানে গুমরে মরছিল, মূল্যবোধ নানাভাবে নিগৃহিত হচ্ছিল। স্বাধীনতার চিন্তাটা উধাও হয়ে গিয়েছিল, স্বাধীনতা বলতে কোথাও কিছু ছিল না, ইসলাম এখানে মানবতার বিজয় বার্তা ঘোষণা করল। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ইসলাম আগমনের সূচনা হয় ৬২৮ খৃস্টাব্দে সম্পাদিত হুদায়বিয়ার সন্ধির পর থেকেই, তবে আরব বণিকদের দ্বারা এ অঞ্চলে ইসলামের খবর এসে যায় । সেসব বণিকের বাণিজ্যে নৌজাহাজ সুদূর চীন-সুমাত্রা অঞ্চল পর্যন্ত যাতায়াত করতো বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ছুয়ে সেসব জাহাজ চীন-সুমাত্রা পর্যন্ত যাতায়াত করতো বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর সেসব জাহাজ দূরপ্রাচ্যে ইসলাম প্রচার করতে যেসব সাহাবে কেরাম যেতেন তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর এলাকায় সফর বিরতি দিয়ে এখানকার মানুষের সামনে ইসলামের বাণী এবং এর সৌন্দর্য তুলে ধরতেন। তারা বোধকরি বাংলাদেশের উপকূলীয় বন্দর ছাড়া ভেতরে প্রবেশের মওকা পাননি সময়ের অভাবে। কারণ তাদের গন্তব্যস্থল ছিল দূরপ্রাচ্য। তখন চীন দেশের শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের গন্তব্য স্থল ছিল দূরপ্রাচ্য। তখন চীন দেশের শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের জন্য জগৎ জোড়া খ্যাতি ছিল। সেসব সাহাবায়ে কেরামের মাযার শরীফ আজও চীনের ক্যান্টন নগরীর ম্যাসেঞ্জার মসজিদ প্রাঙ্গণে যতেœর সাথে সংরক্ষিত আছে। বাংলার স্বাধীন সুলতান গ্যাস উদ্দীন আযম শাহের ইন্তিকালের পরে সুলতানের অমাত্য দিনাজপুরের ভাতুড়ির জমিদার বংশনারায়ণ গনেশ বাঙলার মসনদ দখল করলে পীরে কামিল হযরত নুর কুতবুল আলম রহমাতুল্লাহি আলায়হি এই অত্যাচারী গনেশকে উৎখাত করার জন্য জৌনপুরের শাসনকর্তা ইব্রাহিম শরকীকে লেখেন : প্রায় তিনশ’ বছর হয়েছে বাঙ্গালার ইসলামের শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি এখানে ঈমানকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, সত্য-সুন্দরের কালো থাবা এ দেশটাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। দেশ জুড়ে আঁধার নেমে এসেছে। মুসলিমদের জানমাল, ইজ্জত আব্রুর উপর আঘাত এসেছে। ইসলামের আলোক প্রতীক এখানকার মানুষের যেভাবে সত্য পথের দিশা দিয়ে আসছিল আজ তা হুমকির মুখে। এই মহা দুর্দিনে আপনি কেমন করে নিবিঘেœ মসনদে আসিন থাকতে পারেন? আপনি আপনার সুখের মসনদ থেকে উঠে আসুন। দ্বীনকে সংরক্ষণের জন্য অতিসত্বর এগিয়ে আসুন। আপনার তরবারী কোষবদ্ধ না রেখে কুফরের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখা নির্বাপণে আপনি জোর কদমে অগ্রসর হন। আপনি তো জানেন বাঙ্গালা হচ্ছে পৃথিবীতে বেহেশত। কিন্তু সেই বেহেশতে দুনিয়ার কালো ছায়ায় ঢেকে ফেলেছে। এখানে অত্যাচার-জুলুম-নিপীড়ন আর হত্যাকা-ের যে কারখানা চলছে তা দমন করতে আপনি আসুন আরামের মসনদে আর এক পলক ও বসে থাকবেন না। সেই দীর্ঘ ও জ্বালাময়ী পত্র পেয়ে ইবরাহিম শরীকী কোনরূপ কালক্ষেপন না করে বিরাট বাহিনী নিয়ে বাঙ্গালার বিপন্ন স্বাধীনতািেক বিপন্ন অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে এলেন। এখবর শুনে সমুহ বিপদের আশঙ্কা করে জানে মরার ভয়ে কংশনারায়ন গনেশ হযরত নুরকুতবুর আলম (রা:) এর দরবারে এসে ক্ষমা চাইল এবং তার পুত্র যদুকে মুসলিম করার জন্য অনুরোধ করল। হযরত নুর কুরতুব আলম যদুকে ইসলামের রায়’আত করলেন এবং তার নাম রাখরেন জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ। এ খবর পেয়ে ইবরাহিম শাহ জৌনপুরে ফিরে গেলেন বাঙ্গালার ৫৫৬ বছরের মুসলিম সুশাসনের মাঝখানে মাত্র ৩-৪ বছর বর্ণ হিন্দু শাসন একটি দু:স্বপ্নের মত কিংবা একটি ছন্দ বদ্ধ সুন্দর দীর্ঘ কবিতার একটি মাত্র পংক্তিতে একটি মাত্রার হেরফের হওয়ার মতো সামান্য ছন্দপতনের মত। ইতিহাসে রাজা গনেশ ঘৃনিত ব্যক্তি চি‎ি‎‎হ্নত ব্যক্তি হিসেবে রয়েছে ।স্বাধীন বাংলার দিকে নজর পড়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির । তারা হিন্দু কয়েকজন প্রভাবশালী অমাত্য ও জগৎশেঠদের সাথে আতাত করে এবং মসনদের লোভ দেখিয়ে মীর জাফর কে দলে ভিড়িয়ে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুন পলাশির প্রান্তরে এক মহা প্রহসন মুলক যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজুদৌল্লার কাছ থেকে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য হরন করে নেয়। স্বাধীন বাঙ্গালা,শাহে বাঙ্গালা,সুলতানে বাঙ্গালা পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয়। নানা প্রকার দমন নীতি প্রয়োগ করে মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালাতে থাকে । কিন্তু মুসলমানদের তারা দমাতে পারেনি। ইসলামী শিক্ষায় উজ্জীবিত মীর কাসিম,সুফী দরবেশ কফীর মজনুশাহ বিজ্ঞ আলিম হাজী শরীয়তউল্লাহ মর্দে মুজাহিদ সৈয়দ সিনার আলী তিতুমীরের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। জিহাদের ডাক দিয়েছেন,স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ নির্মাণ করতে অগ্রসার হয়েছেন। ১৮৫৭ খিস্টাব্দে সিপাহী জনতার মহা বিপ্লবের নেতৃত্বে সুফী দরবেশ আলেম ওলামা থাকার কথা সর্বজন বিদিত। পীর মহসিন উদ্দীন দুদু মিয়া বন্ধী হয়েছেন। তার পরের ইতিহাস নতুন কৌশল সংগ্রামের ইতিহাস। হাজী শরিয়ত উল্লাহ এ দেশ কে হাজী হারুল হরব ঘোষণা করে জিহাদের যে ডাক দিয়ে ছিলেন । এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে পড়ার স্পৃহা জাগিয়ে ছিল ঠিক একই মাত্রায় কৌশল ভিন্নতা এনে মাওলানা কেরামত আরী (রহ:)এ দেশকে হারুল আমান বা নিরাপদ ভুমি ঘোষণা করে মুসলিমদের স্বার্থ উদ্ধারের পথ ঘোষণা করে দিলেন। নবাব আব্দুল লতিফ তার দোয়া গ্রহন করে যে শিক্ষা আন্দোলনের সুচনা করলেন তাই পথ পরিক্রমে ১৯০৬ খিস্টাব্দের ডিসেন্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে মুসলিমদের প্রথম রাজনৈতিক দল গঠিত হল। এই সম্মেলনের আহবায়ক ছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ বাহাদুর ভারতের বিভিন্ন এলাকার এজেন্ডার ভঙ্গভঙ্গ বিষয় রাখার প্রস্তাব দিয়ে পত্র পাঠালেন যাতে বললেন, মুসলিমদের কোন রাজনৈতিক সংগঠন না থাকায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে অক্টোবর মাসে যে বঙ্গভঙ্গ হয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পুর্ববাংলা প্রদেশ গঠিত হয়েছে । ঢাকা তার রাজধানী হয়েছে ।তার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দল কংগ্রেস আন্দোলন করেছে। কিন্ত আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না।মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর এজেন্ডায় এ বিষয়টি লিখে পত্র দিলেন। আমরা লক্ষ্য করি সব আন্দোলনে ইসলামের প্রভাব সক্রীয় ছিল।মাওলানা ভাসানি ১৯৫৭ খ্রীস্টাব্দে ৭ই ফেব্রƒয়ারি কাকমারী সম্মেলনে পাকিস্থান কে বিদায় জানিয়ে আচ্ছালামু আলাইকুম বলা ১৯৭১ সালের শেখ মুজিবের ভাষনে ইনসাল্লাহ বলা,৯ইমার্চ পল্টন ময়দানে ভাষানীর লাকুম দিনুকুম ওলিয়াদীন বলা,মেজর জিয়ার সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা ’৭১এর মহান মুক্তি যুদ্ধকালে প্রবাস থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ইশতেহার ও নিদের্শাবলীতে আল্লাহ আমাদের সহায়,নাসরুম মিনাল্লাহী ফাতহুন কারীব প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করণের মাধ্যমে ইসলামের বৈপ্লবিক চেতনার বিকাশ ঘটতে দেখা যায়।১৯৭১ সালের ১৪ই এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের এব নির্দেশনামুলক ইশতিহারের শীর্ষে লেখা ছিল আল্লাহ আকবার এবং শেষ করা হয়ে ছিল আল্লাহর সাহায্য বিজয় নিকটবর্তী। এসব প্রেক্ষিতে বলা যায় চার লাখ মসজিদের এই দেশ, শত শত আল্লাহর ওলির স্মৃতি ধন্য এই দেশ তার স্বাধীন সত্তা মুখ্যত লাভ করেছে ইসলামের প্রভাবে । মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতারে গাওয়া হত :ওলি আল্লাহর বাংলাদেশ শহীদ গাজীর বাংলাদেশ, রহম করো রহম করো আল্লাহ, রহম করো আল্লাহ ।
লেখক :সাংবাদিক ।

Saturday, June 29, 2019

ইতিহাস মুছে ফেল্লেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সর্বোচ্চ অবদান ছিলো মুসলমানদের!

                          
                                    রণবীর ভট্টাচার্য, লেখেছেন ভারত থেকে।।


 ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নাকি মুসলিমদের কোনো অবদান নেই। সেদেশের যেকোনো শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পড়লে সেটাই বোঝা যায়। আর এই মিথ্যাচারমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বহু উগ্রপন্থী হিন্দুই প্রশ্ন তোলেন যে মুসলমানদের এই দেশে থাকা উচিত নয়। কারণ তারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি। মূলত এই বিষয়কে সামনে রেখেই আমার আজকের এই লেখা। সত্য ইতিহাস বলছে, মুসলিমদের তাজা রক্তে ভারত মুক্তি পেয়েছে। জেল খাটা ১ কোটি মুসলমানের আত্ম বলিদান ও ফাঁসি হওয়া ৫ লাখ মুসলমানের প্রাণের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন। সেই চেপে যাওয়া ইতিহাসের মুছে যাওয়া কিছু নাম আমি শেয়ার করলাম।
মাওলানা কাসেম সাহেব, উত্তর প্রদেশর দেওবন্ধ মাদ্রাসাকে ব্রিটিশবিরোধী এক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। সেই দেওবন্দ মাদ্রাসায় আজও কুরয়ানের তালিম দেওয়া হয়। ভারতের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে যাদের নাম অবশ্যই পাওয়া যায় তারা হলো– গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র, অরবিন্দ, জোহরলাল, মতিলাল, প্রমুখ…। কিন্তু এদের চেয়েও বেশী বা সমতুল্য নেতা আতাউল্লাহ বুখারী, মাওলানা হুসেন আহমাদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা গোলাম হোসেন প্রমুখ..(এনারা বহু বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন) তাদের নাম ভারতের ইতিহাসে নাই। ইংরেজ বিরোধী কর্যকলাপের জন্য যার নামে সর্বদা ওয়ারেন্ট থাকতো। সেই তাবারক হোসেনের নামও ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না।

তৎকালিন সময়ে সারা হিন্দুস্থানের কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যার সংস্পর্শে আসলে হিন্দু-মুসলিম নব প্রান খুজে পেতেন, সেই হাকিম আজমল খাঁ কে লেখক বোধ হয় ভূলে গিয়েছেন। মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল যার সাহায্য ছাড়া চলতে পারতেন ই না। যিনি না থাকলে গান্ধী উপাধিটুকু পেতেন না। সেই মাওলানা আজাদকে পর্যন্ত ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ দেওয়া হল। মাওলানা মুহম্মদ আলি ও শওকত আলি। ৫ বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন। ‘কমরেড’ ও ‘হামদর্দ’ নামক দুটি ইংরেজ বিরোধী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাদের নাম ভারতের ইতিহাসের ছেড়া পাতায় জায়গা পায় না । খাজা আব্দুল মজীদ ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টার হন। জহরলালের সমসাময়িক কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন। প্রচন্ড সংগ্রাম করার ফলে তার এবং তার স্ত্রী উভয়ের জেল হয়। ১৯৬২ সালে তার মৃত্যু হয়। ইতিহাসের পাতায়ও তাঁদের নামের মৃত্যু ঘটেছে। ডবল অ.গ এবং চ.ঐ.উ ডিগ্রিধারী প্রভাবশালী জেল খাটা সংগ্রামী সাইফুদ্দিন কিচলু। বিপ্লবী মীর কাশেম, টিপু সুলতান, মজনু শা, ইউসুফÑ তারা ব্রিটিশদের বুলেটের আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হলো কীভাবে? সর্ব ভারতীয় নেতা আহমাদুল্লাহ।

তৎকালীন সময়ে ৫০ হাজার রুপি যার মাথার ধার্য করেছিল ব্রিটিশরা। জমিদার জগন্নাথ বাবু প্রতারণা করে, বিষ মাখানো পান খাওয়ালেন নিজের ঘরে বসিয়ে। আর পূর্ব ঘোষিত ৫০ হাজার রুপি পুরস্কার জিতে নিলেন। মাওলানা রশিদ আহমদ। যাকে নির্মম ভাবে ফাঁসি দিয়ে পৃথিবী থেকে মুছে দিলো ইংরেজরা। ইতিহাসলেখক কেন তার নাম মুছে দিলেন ইতিহাস থেকে। জেল খাটা নেতা ইউসুফ, নাসিম খান, গাজি বাবা ইয়াসিন ওমর খান তাদের নাম আজ ইতিহাসে নেই কেন? ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পরে, কুদরতুল্লাহ খানে মৃত্যু হলো কারাগারে। ইতিহাসের পাতায় নেই তার মৃত্যু ঘটলো কীভাবে? সুভাষ চন্দ্র বসুর ডান হাত আর বাম হাত যারা ছিলেন..। ইতিহাসে তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা হলেন আবিদ হাসান শাহনাওয়াজ খান, আজিজ আহমাদ, ডিএম খান, আব্দুল করিম গনি, লেফট্যানেন্ট কর্নেল, জেট কিলানি, কর্নেল জ্বিলানী প্রমুখ..। এদের অবদান কী করে ভুলে গেলেন? বিদ্রোহী গোলাম রব্বানী, সর্দার ও হয়দার, মাওলানা আক্রম খাঁ, সৈয়দ গিয়াসুদ্দিন আনসার। এদের খুন আর নির্মম মৃত্যু কি ভারতের স্বাধীনতায় কাজে লাগেনি? বিখ্যাত নেতা জহুরুল হাসানকে হত্যা করলে মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করে ইংরেজ সরকার। মাওলানা হজরত মুহানী এমন এক নেতা, তিনি তোলেন সর্ব প্রথম ব্রিটিশ বিহীন চাই স্বাধীনতা।
জেলে মরে-পচে গেলেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, তার নাম কি ইতিহাসে ওঠার মতো নয়!? হাফেজ নিশার আলি যিনি তিতুমীর নামে খ্যাত ব্রিটিশরা তার বাঁশেরকেল্লাসহ তাকে ধংব্বস করে দেয়। তার সেনাপতি গোলাম মাসুমকে কেল্লার সামনে ফাঁসি দেওয়া হয়। কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে ব্যার্থ ক্ষুদিরামের নাম আমরা সবাই জানি, কিংসফোর্ড হত্যাকরী সফল শের আলী বিপ্লবীকে আমরা কেউ জানি না। কলকাতার হিংস্র বিচারপতি জর্জ নরম্যান হত্যাকরী আব্দুল্লাহর নামও শের আলীর মতো বিলীন হয়ে আছে..। বিখ্যাত নেতা আসফাকুল্লাহ। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বীর আব্দুস সুকুর ও আব্দুল্লা মীর এদের অবদান কি ঐতিহাসিকরা ভুলে গেছেন? সূত্র : স্বদেশ বার্তা।

Popular Posts