ড. মো. নূরুল আমিন : গত মাসের ১৫ তারিখে স্থানীয় একটি সংগঠনের আমন্ত্রণে উত্তরায় একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কর্তৃক কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার নয়ারহাট এবং খানারচর গ্রামের দারিদ্র্য বিমোচনে সমবায় সমিতি, মহাজনী সংস্থা ও এনজিওসমূহের ক্ষুদ্র ঋণের সম্ভাব্যতার উপর সম্পাদিত একটি সমীক্ষার ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে এই সেমিনারটির আয়োজন করা হয়েছিল। সমীক্ষায় প্রত্যেকটি গ্রামের ১০০টি করে মোট ২০০টি পরিবারকে একটি পূর্বপ্রস্তুতকৃত প্রশ্নমালা সরবরাহ করা হয়। নির্বাচিত পরিবারসমূহের সকলেই ছিলেন মুসলিম। প্রশ্নমালার মাধ্যমে এই মুসলিম পরিবার ও ঋণগ্রহিতাদের কাছ থেকে তাদের ধর্মীয় অঙ্গীকারের বিষয়টিও ক্ষুদ্র ঋণের সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে ঋণ তাদের আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য নিরসনে কতটুকু ভূমিকা রেখেছে এবং ধনী দরিদ্রের ব্যবধান কতটুকু কমিয়েছে তার প্রায়োগিক যথার্থতাও পরীক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ধরনের সমীক্ষায় বাংলাদেশে সম্ভবতঃ এই প্রথম। সমীক্ষাটির জন্য আমি Bangladesh Institute of Islamic Thoughts (BIIT) কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
সমীক্ষার ফলাফল ব্যাপক ও বহুমুখী। এই নিবন্ধের ক্ষুদ্র পরিসরে তার সবকিছু আলোচনা করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না। তথাপিও এই সমীক্ষার মাধ্যমে বেরিয়ে আসা কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমি কিছুটা আলোচনা করা জরুরি বলে মনে করছি।
সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে গ্রামের অনেক সদস্যই তাদের দারিদ্র্যকে যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়েছেন। পাশাপাশি উৎপাদনমূলক বা আয়বর্ধক কাজের জন্য নয়, বরং অপেক্ষাকৃত ধনীদের জীবনযাত্রা প্রণালী অনুকরণের জন্য ও বেশী বেশী ঋণের জন্য তারা এনজিওদের দ্বারস্থ হয়েছেন। ঋণ পরিশোধের সাপ্তাহিক কিস্তি প্রদানের বাধ্যবাধকতা, উচ্চ সুদের সমস্যা এবং ঋণের অন্যান্য কঠোর শর্তাবলী তাদের ঋণমুখী হওয়া থেকে নিবৃত করতে পারেনি। ফলে বহুমুখী ঋণের জালে তারা আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ শোধ করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকসহ সরকারি বেসরকারি সংস্থাসমূহ কর্তৃক ভোগ্য ও বিলাসপণ্যের জন্য ঋণ চালু করার ফলে গ্রামের মানুষের Multiple indebtedness বেড়েছে। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, গ্রামে এখন এমন লোক খুব কম আছে যারা ঋণগ্রস্ত নয়। ঋণ নিয়ে তারা স্বচ্ছন্দে টিভি, ফ্রিজ কিনছে, খাট পালঙ্ক ও ঘরের আসবাবপত্র কিনছে। এমনকি ঘরও তৈরি করছে। মেয়ের বিয়ের যৌতুক দিচ্ছে। এর সবই সুদভিত্তিক ঋণ।
সমীক্ষার প্রশ্নপত্রের একটি আইটেম ছিল ঋণগ্রহিতা পরিবারের লোকদের ধর্মানুশীলনের ব্যাপারে। দেখা গেছে যে, তারা নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, কুরআন তেলাওয়াত করেন এমনকি হজ্বও করেন। সুদ আল্লাহতায়ালা হারাম করেছেন। পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে পরিষ্কার নির্দেশনা আছে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন ঈমানদার মুসলমান যিনি নামাজ রোজা করেন, যাকাত দেন তিনি কি সুদী ঋণ নিতে পারেন? যদি না পারেন, নিচ্ছেন কিভাবে?
এক এজেন্সি থেকে কর্জ নিয়ে অন্য এজেন্সির কর্জ পরিশোধ করার কথা আমি আগেই বলেছি। কৃষি এবং শিল্প ঋণের ক্ষেত্রে আগে পেপার ট্রানজেকশনের বিষয়টি বহুল আলোচিত ছিল। এখন ক্ষুদ্র ঋণও এই রোগ থেকে মুক্ত নয়। গ্রামীণ ব্যাংকসহ এনজিওগুলো থেকে ঋণ নিয়ে লগ্নি ব্যবসা করেন এই প্রমাণও ইতিপূর্বে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও সুইডিশ সিডাসহ একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষায় ধরা পড়েছে। এই ঋণ এবং সুদের জাল যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। একজন মুসলমান ঋণ পরিশোধ না করে মারা গেলে তার জানাযা হয় না। এ কথাটিও আমরা এখন মনে করি না। আমাদের আলেম উলেমারাও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ।
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের সমাজে বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে অনেকগুলো মূল্যবোধ ছিল। সুদখোর, ঘুষখোর এদেরকে সকলেই ঘৃণা করতো। তখন এখনকার মত গ্রামে-গঞ্জে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ছিল না। তফসিলি বা বাণিজ্যিক ব্যাংক তো কেউ নামই শুনেনি। মহকুমা পর্যায়ে সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ ব্যাংক এবং জেলা পর্যায়ে ল্যান্ডমর্গেজ ব্যাংক ছিল। তারা গ্রামীণ সমবায় সমিতি এবং সমবায়ী সদস্যদের বিভিন্ন মেয়াদী কর্জ দিতো। এই কর্জ ছিল সুদভিত্তিক, এই সুদভিত্তিক সমবায় সমিতি অথবা কর্জের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক ছিল কম। ১৭৯৩ সালের সূর্যাস্ত আইনের পর বৃটিশ শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দুরা রাতারাতিভাবে এই দেশের জমিদারী প্রথার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে; ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা পর্যন্ত এখানকার জমিদারদের শতকরা ৯৮ ভাগই ছিল হিন্দু। হিন্দু জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ববাংলার মহাজনী প্রথা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। সমবায় সমিতি, সমবায় ব্যাংক ও মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে হিন্দুরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যথেষ্ট এগিয়ে যায়। সুদী লেনদেনের ক্ষেত্রে মুসলমানদের সংখ্যা খুবই কম ছিল। তাদের মধ্যে শরিয়া প্রতিপালনের প্রবণতা ছিল। যেহেতু ইসলামে সুদ হারাম সেহেতু তারা সুদী লেনদেনকে এড়িয়ে চলতেন। সুদখোরদের সাথে তারা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন না। একইভাবে ঘুষখোরদেরও তারা ঘৃণা করতেন। একজন মুসলমান নামাজ পড়বে, রোজা রাখবে, হজ্জ করবে আবার সুদ নেবে এবং দেবে এটা কল্পনা করা অসম্ভব ছিল। আমি আমার বাবা, চাচা, আত্মীয়-স্বজন ও মুসলমান পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে কর্জে হাসানার ব্যাপক প্রচলন দেখেছি। ওশর ব্যবস্থাও ঐ সময় সক্রিয় ছিল। আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন গরীব হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের কর্মসংস্থান ছিল না এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে অন্যের কাছে হাতপাতা ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু আমরা তাদের তা করতে দিতাম না। আমরা প্রত্যেক গৃহস্থ পরিবার থেকে ওশরের ধান তুলে তাদের বাড়ীতে পৌঁছিয়ে দিতাম এবং তাদের সারাবছরের খোরাকির জন্য তা যথেষ্ট ছিল। মাদ্রাসা/এতিমখানাও ওশরের ফসলে চলতো। আমাদের গ্রামে কদবানু নামে একজন মহিলা ছিলেন, পাশের গ্রামে তার বিয়ে হয়েছিল। তার কোনও সন্তান ছিল না, তার স্বামী ছিলেন উদ্ভ্রান্ত দরবেশ; সংসারের কোন খবর নিতেন না। খড়ম পায়ে গ্রামে গ্রামে হাঁটতেন। কদবানু খুবই বিপদগ্রস্ত ছিলেন। কদবানু যেহেতু আমাদের গ্রামের মেয়ে গ্রামের মুরুব্বীরা ঠিক করলেন কদবানুর সহযোগিতার দায়িত্ব গ্রামই নেবে, গ্রামের বাইরে কারুর কাছে তিনি হাত পাততে পারবেন না। আমৃত্যু তিনি এ সেবা পেয়েছেন। এখন দিন বদলেছে। আমরা আমাদের মূল্যবোধগুলোকে হারিয়ে ফেলছি। আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের মতো শিক্ষিত ছিলেন না। তাদের ঈমানী চেতনা ছিল। তারা কোরআনের একাংশকে বিশ্বাস ও অপরাংশকে অবিশ্বাস করতেন না। আমরা যারা ঈমানদার বলে নিজেদের দাবী করি তারা কি সুদ হারামের কুরআনী নির্দেশ পালন করতে পারেনা?
আমার অগ্রজ প্রতীম ও মুরুব্বী সাবেক সচিব ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আব্দুল হান্নান সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক নিবন্ধে কর্জে হাসানার একটি বিস্মিত ইস্যু তুলে এনেছেন। কর্জে হাসানা ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম ইন্সট্রুমেন্ট। তার প্রবন্ধ থেকে আমি এখানে কিছুটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি :
কোরআনের কয়েকটি আয়াতে ‘করজে হাসানা’র কথা বলা হয়েছে। করজে হাসানার অর্থ হচ্ছে এমন ঋণ বা করজ দেয়া যেটা সময়মতো পরিশোধ করা হবে; কিন্তু দাতা কোনো অতিরিক্তি অর্থ বা বেনিফিট নিতে পারবেন না। এর উদ্দেশ্য ছিল, সমাজের একটি প্রয়োজন পূর্ণ করা। সেটি হচ্ছে- ব্যবসা-বাণিজ্যের বাইরেও নানা কারণে মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের করজে হাসানার দরকার হতে পারে। সবসময় ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকে না। কিন্তু সম্ভাবনা থাকে যে, পরে তা থাকবে। এবং সেই অর্থ দিয়ে করজ পরিশোধ করা সম্ভব হবে। সুদকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। ফলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে সুদের ভিত্তিতে অর্থ নেয়া সম্ভব ছিল না বা উচিত নয়। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা করজে হাসানার নিয়ম করে দিয়েছেন; যেন মানুষ সাময়িকভাবে করজে হাসানা নিতে পারে সুদ ছাড়া এবং পরে তা দিয়ে দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে করজে হাসানার বিষয়ে কুরআনের আয়াতগুলো দিচ্ছি : “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, আল্লাহকে ‘করজে হাসানা’ দিতে প্রস্তুত, তাহা হইলে আল্লাহ তাহাকে কয়েক গুণ বেশি ফিরাইয়া দিবেন। হ্রাস-বৃদ্ধি উভয়ই আল্লাহর হাতে নিহিত। আর তাহাদের নিকট তোমাদের ফিরিয়া যাইতে হইবে (বাকারা-২৪৫)।
আল্লাহ বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্য থেকে বারোজন সর্দার নিযুক্ত করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠিত কর, জাকাত দিতে থাক, আমার পয়গম্বরদের প্রতি বিশ্বাস রাখ, তাদের সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম পন্থায় করজে হাসানা দিতে থাক, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের গোনাহ দূর করে দেব এবং অবশ্যই তোমাদেরকে উদ্যানসমূহে প্রবিষ্ট করব, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। অতঃপর, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এরপরও কাফের হয়, সে নিশ্চিতভাবেই সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে (আল মায়িদাহ-১২)।
কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম করজে হাসানা দেবে, এরপর তিনি তার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার। (আল-হাদীদ-১১)। নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীল নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে করজে হাসানা দেয়, তাদের দেয়া হবে বহু গুণ এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার (আল-হাদীদ-১৮)। যদি তোমরা আল্লাহকে করজে হাসানা দান কর, তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুণ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, সহনশীল (আত-তাগাবুন-১৭)।
“আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি ইবাদতের জন্য দ-ায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দ-ায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব, তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হয়েছেন। কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তিনি জানেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জিহাদে নিয়োজিত হবে। কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু আবৃত্তি করো। তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু (আল মুযযামমিল-২০)।”
কর্জে হাসানার ব্যবস্থাটি দুর্ভাগ্যবশত: বাংলাদেশে গৌণ হয়ে পড়েছে। তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রফেসার ড. নাজমুদ্দিন আরবাকানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম দেশসমূহের ফোরাম ‘ডিএইট’-এর সাথে আমি দীর্ঘকাল সম্পৃক্ত ছিলাম এবং বাংলাদেশ সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে সদস্য দেশগুলোর মাইক্রোক্রেডিট এবং দারিদ্র্য বিমোচন সংক্রান্ত বিষয়গুলো অধ্যয়ন করার আমার সুযোগ হয়েছিল। তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইরান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিশরসহ প্রত্যেকটি দেশেই কর্জে হাসানা প্রথা ব্যাপকভাবে চালু রয়েছে। সুদের কারণে এসব দেশে মাইক্রো ক্রেডিট ব্যাপকতা পায়নি। শ্রীলংকায় শরণদ্বীপ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মুসলমানরা আমানা নামে একটি ব্যাংক স্থাপন করেছে। ব্যাংকটি বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের RDS Program ও কর্জে হাসানার নীতিমালা অনুসরণ করে বিনিয়োগ ব্যবস্থা চালু করেছে। চীনের মুসলমানরাও বহু বছর কর্জে হাসানা পরিচালনা করে আসছেন। বেইজিং শহরে কূটনেতিক জোনের সাথেই নভোটেল থেকে পায়ে হেঁটে ম্যাক ডোনাল্ডের দিকে পাঁচ মিনিট গেলেই তাদের একটি বিরাট ইসলামিক কমপ্লেক্স পাওয়া যাবে। সেখানে মসজিদ, মাদ্রাসা, শপিং সেন্টারের পাশাপাশি একটি ব্যাংকও আছে যেখানে সদস্যদের শুধু কর্জে হাসানা দেয়া হয়। ফিলিপাইনের ম্যানিলা, লসবেনস, মিন্দানাও এবং কালাম্বা শহরেও মুসলমানদের বেশ কিছু সমিতি আছে যেখানে সদস্যরা কর্জে হাসানার লেনদেন করেন।
ইসলাম সুদকে হারাম করেছে। সাথে সাথে তার বিকল্পও বাতলে দিয়েছে। আমাদের উচিত ঈমানকে রক্ষা করা এবং এই সুযোগ গ্রহণ করা।
Source: www.dailysangram.com