(জবাবদানকারী একজন ক্বওমী আলেম:) বন্ধুরা, ফেসবুক খুললেই দেখা যায়, মওদুদী ছাহাবা বিদ্বেষী, জামায়াত শিবির সাহাবা বিদ্বেষী, বিশেষ করে লা মাযহাবী মানেই বিনোদন পেইজে। যদি ও এ পর্যন্ত কেউ তার দালিলিক তথ্য প্রমাণ পেশ করতে পারেননি।
বন্ধুরা, এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী ওলামা হযরত রয়েছেন, যারা আল্লামা মওদুদীকে ছাহাবা বিদ্বেষী বানাবার হরখামাশা কসরত করে থাকেন। আলহামদুলিল্লাহ তাদের এই মওদুদী বিরোধী প্রচারণার তাবিজ বাজারে অচল হয়ে পড়েছে। কারণ ঈমানদার জনগণ আসল হক্ব দল কারা, চিহ্নিত করতে পেরেছেন। আসল কথা হলো, আল্লামা মওদুদী সাহাবায়ে কেরামের নকশায়ে কদম অর্থাৎ তাদের আদর্শ পুরোপুরি কি ভাবে অনুসরণ করা যায়, প্রায় দীর্ঘ ষাট বছর গবেষণা করে সেই ফর্মুলাই তিনি আমাদের সামনে পেশ করেছেন।
বন্ধুরা, আপনারা যাদের জামায়াত নেতা কর্মীদের সঙ্গে উঠাবসা আছে, আপনারা সাক্ষী প্রদান করুন! কোন জামায়াত নেতা কর্মীদের সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করতে দেখেছেন? বরং জামায়াতের নেতা কর্মীরা সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ একজেক্ট বা অবিকল অনুসরণ করতে গিয়ে, শতো শতো নেতা কর্মী দ্বীনের জন্য জীবন দিয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন, জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, হাজার হাজার মিথ্যা ও সাজানোর মামলার হুলিয়া নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আল্লাহ পাক সূরা আল ফাতাহর-২৯ নং আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, তারা হবে কুফফার শক্তির উপর কঠোর। তারা কখনোই জালিম শক্তির সাথে আপোস করবে না। আলহামদুলিল্লাহ জামায়াত ছাহাবায়ে কেরামের আদর্শ অনুসরণে সমস্ত বাতিল মতাদর্শের মোকাবেলায় শক্ত ভাবে দাড়িয়ে রয়েছেন।
বন্ধুরা, আপনারাই বলুন সমালোচনাকারীদের দ্বীনি ক্ষেত্রে এ উপমহাদেশে কি অবদান রয়েছে? সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ কি মানছুর হাল্লাজের আকিদা বিশ্বাস প্রচার করা? সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ কি সরলপ্রান মুসলমানদের পীর মুর্শিদ ও মাজার পুজারী বানানো? সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ কি তাবিজ কবজ বিক্রি করা? সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ কি মুরীদ দিয়ে হাত পা টিপানো? সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ কি খানকায় বসে বসে ইল্লাল্লাহ যিকির করা?
বন্ধুরা, আমি জোর দিয়ে বলতে পারি আল্লামা মওদুদী কখনোই কোন ছাহাবীর সমালোচনা করেননি বরং তার অনবদ্য লেখনিতে সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ পুরোপুরি ফুটে উঠেছে। আল্লামা মানজুরে নূমানী যিনি মওদুদীকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন, তিনি তার মওদুদী চে মেরা রেফাকাত বইয়ে মওদুদী ছাহাবা বিদ্বেষী ছিলেন, উল্লেখ করতে পারেননি।
তার পর ও আমরা বলতে চাই, মওদুদী কোন নবী ছাহাবা নন যে তার ভুল হবে না। জামায়াত তার ভুল গ্রহণ করেননি আর করবে ও না।
সমালোচকদের হেদায়েত হোক দোয়া রইল।
আল্লাহ কবুল করুন আমীন।
জামায়াতে ইসলামী দ্ব্যর্থহীনভাবে বিশ্বাস করে যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা:) নবী করিম (সা: )-এর আনুগত্যের শ্রেষ্ঠ আদর্শ নমুনা (দেখুন- ইকামাতে দ্বীন, অধ্যাপক গোলাম আজম: পৃষ্ঠা-৫১, ) এবং ইজমায়ে সাহাবা শরীয়তের অকাট্য দলিল। আল্লামা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহঃ) বলেন: “কোরআন ও হাদীসের মাপকাঠিতে পরখ করে আমরা এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, সাহাবাদের জামায়াত একটি সত্যপন্থি জামায়াত। তাদের (সাহাবায়ে কেরামদের) ঐকমত্য আমরা শরীয়তের প্রামাণ্য দলিলরূপে এজন্য মেনে থাকি যে, কোরআন ও হাদীসের সামান্যতম বিরোধমূলক বিষয়ে সকল সাহাবাদের একমত হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব” (দেখুন: তরজুমানুল কোরআন, জিলদ-৫৬, সংখ্যা-৫)। জামায়তে ইসলামীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে সাহাবায়ে কেরামের সত্যনিষ্ঠ ও সংগ্রামী জীবনধারা দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরে তার আলোকে কর্মীদের গড়ে তোলা হয়। সাহাবায়ে কেরামের জীবনী জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের অবশ্য পাঠ্য, যেমন-আবদুল মাবুদের লিখিত কয়েক খন্ডে বিভক্ত ‘আসহাবে রাছুলের জীবনকথা' গ্রন্থ। এভাবে জামায়াতে ইসলামীর সামগ্রিক কর্মকান্ডে সাহাবায়ে কেরামের জীবনাদর্শের ব্যাপকচর্চা ও অনুশীলন রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ইসলামী সংগঠনে সাহাবায়ে কেরামের জীবনাদর্শের এ ধরণের ব্যাপক চর্চা নাই। অনেক ইসলামী সংগঠনে পরবর্তী কালের কোন কোন ইসলামী ব্যক্তিত্ব বা পীর-অলির জীবনীচর্চাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। সাহাবাদের অতিভক্তি শুধু তাদের মুখে মুখেই, এই ভক্তি বাস্তবে খুঁজে পাওয়া দুরূহ। সাহাবাদের মত ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করার আকীদা ও আমল জামায়াতে ইসলামী ও এর সহযোগী সকল সংগঠনেই ব্যাপক দেখা যায়।
মুসলমানদের মধ্যে অসংখ্য দলের মধ্যে থেকে নাজাতপাপ্ত জামায়াতের পরিচয় প্রসঙ্গে একটি হাদীসে বর্ণিত রয়েছে: হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমার উম্মত তা’ই করবে যা করেছে বনী ইসরাঈলের লোকেরা। এক জুতা অপর জুতার সমান হওয়ার মত। এমনকি যদি ওদের মাঝে কেউ মায়ের সাথে প্রকাশ্যে জিনা করে থাকে, তাহলে এই উম্মতের মাঝেও এরকম ব্যক্তি হবে যে একাজটি করবে। আর নিশ্চয় বনী ইসরাঈল ছিল ৭২ দলে বিভক্ত। আর আমার উম্মত হবে ৭৩ দলে বিভক্ত। এইসব দলই হবে জাহান্নামী একটি দল ছাড়া। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন-সেই দলটি কারা? নবীজী (সাঃ) বললেন-যারা আমার ও আমার সাহাবাদের মত ও পথ অনুসরণ করবে। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৪১, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৭৬৫৯, আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৮৮৯, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০৬০}
অতএব এ ভাষ্য থেকে বুঝা যায় যে, যে দল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং তার সাহাবাদের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে কেবল তারা সত্যপন্থী নাজাতপাপ্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত। এ সম্পর্কে হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম (ফাজেলে দেওবন্দ) বলেন: “সাহাবীগণ মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগে ইসলামী বিধানকে বাস্তবায়িত করার জন্য অবিরাম চেষ্টা সাধনা এবং আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়েছেন। আর আজ জামায়াতে ইসলামী কর্মীগণও নিষ্ঠার সাথে ইসলামকে বিজয়ী আদর্শরূপে বাস্তবায়িত করার জন্য দুর্নিবার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলা চলে যে, হাদীসের আলোকে জামায়াতে ইসলামী অবশ্যই আহলে সুন্নাভূক্ত সত্যপন্থী দল” (জামায়াতে ইসলামীর বিরোধীতা কেন? পৃষ্ঠা নং ৩২)।
পবিত্র কুরআনের সুরা ফাতহতে বলা হয়েছে: “মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল৷ আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিজেরা পরস্পর দয়া পরবশ৷ তোমরা যখনই
দেখবে তখন তাদেরকে চেহারায় সিজদার চিহ্ন বর্তমান যা দিয়ে তাদেরকে আলাদা চিনে নেয়া
যায়৷ তাদের এ পরিচয় তাওরাতে দেয়া হয়েছে৷ আর ইনযীলে তাদের উপমা পেশ করা হয়েছে এই বলে যে, একটি শস্যক্ষেত যা প্রথমে অঙ্কুরোদগম ঘটালো৷
পরে তাকে শক্তি যোগালো তারপর তা শক্ত ও মজবুত হয়ে স্বীয় কাণ্ডে ভর করে দাঁড়ালো৷ যা
কৃষককে খুশী করে কিন্তু কাফের তার পরিপুষ্টি লাভ দেখে মনোকষ্ট পায়৷ এ শ্রেণীর লোক
যারা ঈমান আনয়ন করছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও বড় পুরস্কারের
প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷”
এই আয়াতের শেষাংশের তাফসীরে আল্লামা মওদূদী (রহঃ) সমস্ত সাহাবাই যে নাজাতপ্রাপ্ত তা প্রমাণ করেছেন । তাফহীমুল কুরআনে তাফসীর দেখুন।
নীচের ই-বুক দুইটি ডাউনলোড করে পড়ুন প্লীজ:
আক্বীদা বিষয়ক অভিযোগের জবাবে আল্লামা সাঈদী (হাফিঃ)
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)
Please browse and share these links: