আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যখনই রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা শুরু করলেন, তখনই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলো তিনি নাকি স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। অথচ তাঁর নিজ এলাকার সকল ধর্মের সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি রাজাকার, আল বদর, আল-শাসসের সদস্য ছিলেন না।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) জিয়াউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আল বদর, আল শাম্স, শান্তি কমিটির সদস্য বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এসবের তালিকায় কোথাও তার নাম নেই।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম তালুকদার বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত যুদ্ধাপরাধ তত্ত্ব-উপাত্ত ও সাক্ষী সবই মিথ্যার ওপরে প্রতিষ্ঠিত। কারণ আমরা নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পিরোজপুরে হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি ও পিরোজপুরকে শত্রুমুক্ত করি। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতাবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ভূমিকা থাকলে তা আমাদের আগে বা আমাদের চেয়ে বেশি অন্য কারো জানার কথা নয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই তাকে যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে।’
পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, যুদ্ধকালীন কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী নুরুজ্জামান বাবুল বলেন, ‘৭১ সালে আমি সুন্দরবনে মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা করেছি। আমরাই পিরোজপুর শত্রুমুক্ত করেছি। ’৭১ সালে পাড়েরহাট-জিয়ানগরের সব রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীদের ধরে নিয়ে সুন্দরবনে হত্যা করা হয়েছে। আল্লামা সাঈদী যদি রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী হতেন তাহলে তার জীবিত থাকার কথা নয়।’
যুদ্ধকালীন ইয়ং অফিসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এমডি লিয়াকত আলী শেখ বাদশাহ বলেন, আল্লামা সাঈদী রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এসবের তালিকাতেও তার নাম নেই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আল্লামা সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকাণ্ড করেছেন বলে আমি শুনিনি, দেখিওনি।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বাহাদুর বলেন, ‘আল্লামা সাঈদীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বাম ঘরানার নেতারা এবং পিরোজপুরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে নাটক প্রচার করেছে তা গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছে। সাঈদীর বিরুদ্ধে করা যুদ্ধাপরাধ মামলা সাজানো এবং ষড়যন্ত্রমূলক তা জনগণের সামনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’
এভাবে মুক্তিযুদ্ধে পিরোজপুর জেলার সাবেক কমান্ডার গৌতম রায় চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধে পিরোজপুর জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মুনান, পিরোজপুর পৌরসভার কমিশনার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বাতেন, মুক্তিযুদ্ধে পাড়েরহাটের ক্যাম্প কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: খসরুল আলম, নাজিরপুরের যুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধকালীন ইয়ং কমান্ডার খন্দকার রেজাউল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ: সালাম তালুকদারসহ পিরোজপুরের স্বনামধন্য প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আল্লামা সাঈদীর সামান্যতমও বিতর্কিত ভূমিকা ছিলো না।
(তথ্যসূত্র : যুদ্ধাপরাধ নয় জনপ্রিয়তাই আল্লামা সাঈদীর অপরাধ। লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকাররম হোসেন কবির, মুক্তিযোদ্ধা নং ম ১৬৩৯)
সাঈদীর মুক্তি দাবি : প্রধানমন্ত্রীকে ৫১ মুক্তিযোদ্ধার স্মারকলিপি
স্টাফ রিপোর্টার
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, সাবেক সংসদ সদস্য এবং প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিবসহ বৃহত্তর বরিশালের ৫১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। গতকাল বাংলাদেশ ডাক বিভাগের গ্যারান্টিড এক্সপ্রেস পোস্টের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে সব মামলা প্রত্যাহার করে মাওলানা সাঈদীর মুক্তি দাবি করে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মাওলানা সাঈদীর কোনো বিতর্কিত ভূমিকা ছিল না। দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক, তা আমাদের প্রাণের দাবি; কিন্তু এ বিচারের নামে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন দণ্ডিত না হন, কেউ যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার না হন। তারা আরও বলেন, মাওলানা সাঈদীর মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমকে যে অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নিতান্তই হাস্যকর, কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন।
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, কারা স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষে ছিলেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরকাল লেখা থাকবে এবং এ ইতিহাস কেউ কখনও মুছে ফেলতে পারবে না। তারা বলেন, তদানীন্তন পিরোজপুর মহকুমাসহ বৃহত্তর বরিশালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে চান, মহান মুক্তিযুদ্ধে মাওলানা সাঈদীর বিতর্কিত কোনো ভূমিকা ছিল না। তিনি রাজাকার, আল বদর, আল শামস, শান্তি কমিটির সদস্য, যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ১৯৭১ সালে প্রণীত এ সম্পর্কিত কোনো তালিকাতেও তার নাম নেই। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাস মাওলানা সাঈদী পাড়েরহাট বন্দরে আমাদের চোখের সামনেই ছিলেন। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতাবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ভূমিকা থাকলে তা আমাদের আগে বা আমাদের চেয়ে বেশি অন্য কারও জানার কথা নয়। মাওলানা সাঈদী মুক্তিযুদ্ধে সামান্য বিতর্কিত ভূমিকাও পালন করেননি উল্লেখ করে তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সরকারি দলিলপত্রও তার নির্দোষ প্রমাণ করে।
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন—পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শামছুল আলম তালুকদার, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী শেখ বাদশা, পৌরসভা কাউন্সিলর আবদুস সালাম বাতেন, সাবেক কমিশনার আবদুর রাজ্জাক মুনান, খসুল আলম, খন্দকার রেজাউল আলম শানু, অ্যাডভোকেট শেখ আবদুর রহমান, হাবিবুর রহমান বাহাদুর, আবদুস সালাম হাওলাদার, মোশাররফ হোসেন, আবু তালেব সেপাই, ডা. আলতাফ উদ্দিন আহমেদ, আবুল হোসেন তালুকদার, মোকাররম হোসেন কবীর, প্রকৌশলী মতিউর রহমান, অধ্যাপক ফরহাদ মুন্সি প্রমুখ।
Source: http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/10/29/51150