Thursday, September 6, 2018

ঈমানী দুর্বলতা কাটানোর ১০ উপায়

- মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা! ঈমানী দুর্বলতার একটি লক্ষণ হলো গুনাহ ও হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া। এর প্রতিকার হিসেবে আমরা আপনাকে দশটি পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করি, আমাদের পরামর্শ গুরুত্বসহ গ্রহণ করবেন এবং এক্ষেত্রে গড়িমসি ও অলসতা পরিহার করবেন। মনে রাখবেন, ঈমান হলো বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার ব্যাপার। তাই ঈমানী দুর্বলতা কাটাতে নিজ গরজেই এগোতে হবে। অন্য কেউ মুখে তুলে খাইয়ে দিবে না।
এক. আমরা আপনাকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا
আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)
দুই. অনুরূপভাবে আমরা আপনাকে বুঝে বুঝে নবীদের কাহিনী, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, নবী  ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের অন্তরকে প্রশান্ত করার জন্য আল্লাহ তাআলা কোরআনে নবীদের কাহিনীগুলো উল্লেখ করেছেন। আর তিনি সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে আমাদের ঈমানের জন্য আদর্শ বানিয়েছেন। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ
অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন…। (সূরা বাকারা ১৩)
এর তাফসিরে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. বলেন,  صدِّقوا كما صدَّق أصحاب محمد   মুহাম্মদ ﷺ -এর সাহাবারা যেভাবে ঈমান এনেছে, তোমরাও সেভাবে ঈমান আন…। (তাফসিরে তাবারী, সংশ্লিষ্ট আয়াত)
তিন. অধিকহারে আল্লাহর যিকির করুন। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)
চারইসলামের সৌন্দর্য সৌহার্দ্য ও সম্প্র্রীতি সম্পর্কে জানুন। কেননা, সলামের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য যুগে যুগে মানুষকে মুগ্ধ করেছে এবং ঈমানের প্রতি ধাবিত করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ
আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী। (সূরা হুজুরাত ৭)
পাঁচ. প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। আকাশে মেঘ দেখলে আরবরা খুশি হতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহﷺ -এর চেহারা মলিন হয়ে যেতো আযাবের ভয়ে। কারণ সামূদ জাতি আযাব বহনকারী মেঘ দেখে রহমতের বৃষ্টি ভেবে ফূর্তিতে মেতে ছিলো। (মুসলিম, ৮৯৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। (সূরা আলি ইমরান ১৯০)
ছয়আল্লাহ ও তাঁর রাসুল -কে সবচেয়ে বেশি মহব্বত করুন এবং তাঁদের হুকুমগুলোকে সব কিছুর চাইতে বেশি প্রাধান্য দিন। আনাস ইবন মালিক রাযি. বলেন, রাসূল্লাহ ﷺ বলেছেন, 
ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ مَنْ أَحَبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَمَنْ كَانَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَمَنْ كَانَ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ
যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা পাবে; ১. যে কাউকে ভালবাসলে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তাকে ভালবাসবে; ২. আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসূল তার কাছে অন্য সবকিছুর চাইতে বেশি প্রিয় হবে এবং ৩. আল্লাহ্ তাকে কুফর হতে পরিত্রাণ করার পর পুনঃ কুফরীতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার নিকট পছন্দনীয় হবে। (বুখারী ৪৯৮৭)
সাতআখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সামান্যতার কথা চিন্তা করুন। এর দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
 إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّىٰ إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَن لَّمْ تَغْنَ بِالْأَمْسِ ۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
পার্থিব জীবনের উদাহরণ তেমনি, যেমনি আমি আসমান থেকে পানি বর্ষন করলাম, পরে তা মিলিত সংমিশ্রিত হয়ে তা থেকে যমীনের শ্যামল উদ্ভিদ বেরিয়ে এল যা মানুষ ও জীব-জন্তুরা খেয়ে থাকে। এমনকি যমীন যখন সৌন্দর্য সুষমায় ভরে উঠলো আর যমীনের অধিকর্তারা ভাবতে লাগল, এগুলো আমাদের হাতে আসবে, হঠাৎ করে তার উপর আমার নির্দেশ এল রাত্রে কিংবা দিনে, তখন সেগুলোকে কেটে স্তুপাকার করে দিল যেন কাল ও এখানে কোন আবাদ ছিল না। এমনিভাবে আমি খোলাখুলি বর্ণনা করে থাকি নিদর্শণসমূহ সে সমস্ত লোকদের জন্য যারা লক্ষ্য করে। (সূরা ইউনুস ২৪)
আটআল-ওয়ালা ওয়াল-বারা ঠিক রাখুন। অর্থাৎ বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয়টিই আল্লাহর জন্য। সুতরাং মুমিনদের সাথে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রাখুন। আর কাফিরদের সাথে শত্রুতা রাখুন ও সম্পর্কচ্ছেদ করুন। কেননা, দ্বীনের শত্রুদের সাথে সম্পর্ক রাখলে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
নিঃসন্দেহ তোমাদের বন্ধু হচ্ছেন কেবলমাত্র আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল, আর যারা ঈমান এনেছে, আর যারা নামায কায়েম করে, আর যাকাত আদায় করে, আর তারা রুকুকারী। (সূরা মায়িদা ৫৫)
রাসূল্লাহ ﷺ বলেছেন, 
مَن أحبَّ للَّهِ وأبغضَ للَّهِ ، وأعطى للَّهِ ومنعَ للَّهِ فقدِ استَكْملَ الإيمانَ
যে আল্লাহর জন্য ভালবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে। (আবু দাউদ ৪৬৮১)
নয়ঈমানী দুর্বলতার চিকিৎসায় বিনয় ও লজ্জাশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ এটি আল্লাহভীতির সূচক। লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। সাধ্য থাকার পরও অহংকার ও নির্লজ্জতার পোশাক না পরলে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে ঈমানের পোশাক পরাবেন বলে তিরমিযির একটি হাদীসে এসেছে। 
দশ. সর্বোপরি আপনাকে বিভিন্ন রকমের নেক আমল করা এবং গুনাহ বর্জনের পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, যেকোনো নেক আমল ঈমানকে বৃদ্ধি করে। এজন্য কোরআন মজিদে যত জায়গায় ঈমানের কথা এসেছে তত জায়গায় পাশাপাশি নেক আমল করার কথাও এসেছে।
পরিশেষে দোয়া করি, হে আল্লাহ! আপনি ঈমানকে আমাদের নিকট প্রিয় করে দিন এবং ঈমানকে আমাদের অন্তরে সুশোভিত করে দিন। কুফর, পাপাচার ও আপনার অবাধ্যতাকে আমাদের নিকট অপছন্দনীয় করে দিন এবং আমাদেরকে সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন।

Wednesday, September 5, 2018

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির: লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী



#লক্ষ্য_উদ্দেশ্য:

আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সাঃ) প্রদর্শিত বিদান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধারণ করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন|

☆১ম-দফা------দাওয়াত:
"তরুন ছাত্রসমাজের কাছে ইসলামের আহ্বান পৌছিয়ে তাদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানার্জন এবং বাস্তব জীবনে ইসলামের পূর্ণ অনুশীলনের
দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা|"

☆২য়-দফা------সংগঠন:
"যেসব ছাত্র ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে প্রস্তুত, তাদের কে সংগঠনের  অধীনে সংঘবদ্ধ করা|"

☆৩য়-দফা------প্রশিক্ষণ:
"এই সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ ছাত্রদেরকে ইসলামী জ্ঞান প্রদান এবং আদর্শ চরিত্রবান রূপ  গড়ে তুলে জাহেলিয়াতের সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ার কার্যকরী  ব্যবস্থা করা|"

☆৪র্থ-দফা------ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র সমস্যা সমাধান: "আদর্শ নাগরিক তৈরির উদ্দেশ্যে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন  সাধরণে দাবিতে সংগ্রাম এবং ছাত্রসমাজের  প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান|"

Tuesday, September 4, 2018

অহঙ্কারমুক্ত জীবনে জান্নাতের হাতছানি -ড. মো: আকতার হোসেন

রাবির পরিচয়

সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী ও নবী করিম (সা)-এর নৈকট্য লাভকারী প্রাণপ্রিয় সাহাবী ছিলেন আবু হুরায়রা (রা)। তিনি ছিলেন আহলে সুফফার অন্যতম সাহাবী। আবু হুরায়রা তার উপনাম, প্রকৃত নাম আবদুল্লাহ বা আবদুর রহমান। তিনি ইয়েমেনের দাওসি গোত্রের লোক ছিলেন। ত্রিশ বছর বয়সে খয়বরে আগমন করে প্রিয় নবীর (সা) হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি যাবতীয় দুনিয়াবি ভোগবিলাস ত্যাগ করে প্রিয় নবীর (সা) সাহচর্যে থেকে ইলম অর্জন করাকেই প্রাধান্য দেন। রাসূল (সা)-এর দোয়ার বরকতে তার মেধা ও স্মরণশক্তি ছিল প্রখর। হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতেন। রাসূল (সা) থেকে তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ছিল ৫৩৭৪টি। হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর শাসনামলে তিনি দুইবার মদিনার গভর্নর নিযুক্ত হন। ৫৮-৫৯ হিজরিতে মদিনাতেই ইনতেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮০ বছর।
হাদীসের ব্যাখ্যা:

আলোচ্য হাদীসে অহঙ্কারের চরম পরিণতি ও শাস্তির কথা বলা হয়েছে। মানুষ যখন নিজকে অন্য কোনো মানুষ থেকে উন্নত, উত্তম, ক্ষমতাধর বা বড় মনে করে অথবা কাউকে কোনোভাবে নিজের চেয়ে হেয় মনে করে তখন তার এই মানসিকতাকে অহঙ্কার বা গর্ব বলে। এটি একটি মানসিক অনুভূতি, তবে কর্মের মধ্যে কিছু প্রকাশ ঘটে থাকে। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী অহঙ্কার একমাত্র আল্লাহর অধিকার। কোনো মানুষ যখন গর্ব অহঙ্কার করে তখন মূলত সে আল্লাহর অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। কারণ মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত নিয়েই অহঙ্কারে লিপ্ত হয়।
আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীতে সবাইকে তার নিয়ামত ধন সম্পদ, ক্ষমতা, মেধা ও যোগ্যতা সমানভাবে প্রদান করেন না। তার এই নিয়ামত কাউকে দেন আবার কাউকে দেন না। আবার কমবেশি করেও দেন। মানুষের কর্তব্য বা উচিত হলো আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। মানুষ যখন আল্লাহর নিয়ামত বা দানের কথা ভুলে এটাকে নিজের সম্পদ বা উপার্জন মনে করে, তখনই অহঙ্কারের সূত্রপাত হয়। আর এই অহঙ্কারের কারণেই আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।
আল-কুরআন ও হাদীসে অহঙ্কারী ব্যক্তির পরিণতি ও শাস্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আল্লাহ অহঙ্কারী ব্যক্তিকে ভালোবাসেন না ও পছন্দ করেন না। আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর ঘোষণা :
“নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন লোককে পছন্দ করেন না, যে বড় হওয়ার গৌরব করে ও অহঙ্কার করে।” (সূরা নিসা : ৩৬)
“মানুষের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে কথা বল না এবং পৃথিবীতে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো বড়াইকারী ও অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান : ১৮)
“যাতে তোমাদের যতটুকুই ক্ষতি হয়ে গেছে সে জন্য তোমরা হতাশ না হও এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তাতে তোমরা খুশিতে আত্মহারা না হও। আল্লাহ এমন লোকদেরকে পছন্দ করেন না, যারা নিজেদেরকে বড় মনে করে এবং অহঙ্কার করে।” (সূরা হাদীদ : ২৩)
অহঙ্কারী ব্যক্তির সর্বশেষ পরিণতি হলো জাহান্নাম। কেননা সে অহঙ্কারের মাধ্যমে আল্লাহর গোলামি হতে নিজেকে মুক্ত করে বেপরোয়া হয়ে যায়। নিজকে অনেক বড় ও ক্ষমতাবান এবং শক্তিশালী মনে করে এবং মানুষকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মনে করে । রাসূলের বর্ণিত অপর একটি হাদীস থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

রাসূল (সা) বলেন : যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি বললেন, কোন ব্যক্তি পছন্দ করে তার কাপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক (তাও কি অহঙ্কার?) রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। প্রকৃত পক্ষে অহঙ্কার হলো আল্লাহর গোলামি থেকে বেপরোয়া হওয়া এবং মানুষকে অবজ্ঞা করা।’ (মুসলিম)
আল্লাহর বাণী- “এখন যাও জাহান্নামের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়। সেখানেই তোমাদের চিরকাল থাকতে হবে। অহঙ্কারীদের জন্য তা বড়ই মন্দ ঠিকানা।” (সূরা নাহল : ২৯)

রাসূল (সা) এ প্রসঙ্গে বলেন, “অহঙ্কারী ও অহঙ্কারের মিথ্যা ভানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (আবু দাউদ)
রাসূল (সা) আরো বলেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো জান্নাতের অধিবাসী কারা? প্রত্যেক দুর্বল ও যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। তারা হলো এমন যে, যদি তারা আল্লাহর নামে কসম করে, অবশ্যই আল্লাহ তাহা পূর্ণ করেন। আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, জাহান্নামের অধিবাসী কারা? প্রত্যেক অহঙ্কারী, সীমালঙ্ঘনকারী, উদ্ধত লোক। (বুখারী)
আল্লাহ তাআলা অহঙ্কারের শাস্তি শুধুমাত্র আখিরাতে নয় দুনিয়াতেও প্রদান করে থাকেন। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পূর্বের অনেক জাতি ধন-সম্পদ ও শাসনক্ষমতা নিয়ে অহঙ্কার ও বাড়াবাড়ি করার কারণে আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করেছেন। আল্লাহ বলেন-
“এমন কত জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, সেখানকার লোকেরা ধন-সম্পদের অহঙ্কার করত। এই যে তাদের বাড়িঘর পড়ে আছে, যেখানে তাদের পর কম লোকই বসবাস করেছে। শেষ পর্যন্ত আমি (এ সবেরই) ওয়ারিশ হয়েছি।” (সূরা কাসাস : ৫৮)
আদ, সামুদ, মাদিয়ান ও লুত (আ)-এর কওমের ধ্বংসের ইতিহাস কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ববর্তী শাসক ও ক্ষমতাধররাও তাদের ক্ষমতার দাপট ও অহঙ্কার প্রদর্শন করায় আল্লাহ তা’আলা তাদের সমুচিত শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাদের করুণ পরিণতির ইতিহাস বিশ্ববাসীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ফেরাউন, হামান, নমরুদের মতো শাসকদের ইতিহাস আজো মানুষ ঘৃণাভরে স্মরণ করে। যেমন, আল কুরআনে ফেরাউনের অহঙ্কারের করুণ পরিণতি সম্পর্কে বলা হয়েছে,
“আর ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহঙ্কার করেছিল এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদেরকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে না। অতঃপর আমি তাকে ও তার সেনাবাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তারপর তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। দেখ জালিমদের পরিণাম কী হয়ে থাকে।” (সূরা আল-কাসাস : ৩৯-৪০)
প্রকৃত মু’মিন আল্লাহর দ্বীনের পথের দায়ীরা যে কোন অবস্থায় গর্ব ও অহঙ্কার পরিত্যাগ করবে। তাদের কথা, কাজ ও আচরণে অহঙ্কার নয় বিনয় প্রকাশ পাবে। কেননা মু’মিনের ভূষণ আর অহঙ্কার খোদাদ্রোহী ও আখিরাতে অবিশ্বাসীদের ভূষণ। মু’মিনদের উদ্দেশে আল্লাহ বলেন-
“মাটির বুকে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয়ই তুমি কখনো পদচাপে জমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না, আর পাহাড়ের সমান উঁচু হতেও পারবে না।” (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৭)

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন-

“আখিরাতের সেই ঘর আমি তৈরি করে রেখেছি তাদের জন্য, যারা পৃথিবীতে বড়ত্ব চায় না এবং ফাসাদও সৃষ্টি করতে চায় না। আর ভালো পরিণাম তো মুত্তাকিদের জন্যই।” (সূরা আল-কাসাস : ৮৩)
রাসূল (সা) বলেন, আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে এই মর্মে অহি প্রেরণ করেছেন, তোমরা সকলে বিনয়ী হও, যাতে কেউ কারোর সাথে বাড়াবাড়ি করতে না পারে এবং কেউ কারোর সাথে গর্ব করতে না পারে। (আবু দাউদ)
এর বিপরীতে খোদাদ্রোহী ও অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে আল্লাহর বাণী, “তোমাদের ইলাহ এক ও একক ইলাহ। সুতরাং যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে না, তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা দাম্ভিক ও অহঙ্কারী। নিঃসন্দেহে আল্লাহ জানেন, তারা যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে। অবশ্যই তিনি অহঙ্কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আন নাহল : ২২-২৩)
অনেক মানুষ আছে যারা নিজেদের দামি ও মূল্যবান পোশাক পরিধান করে নিজেদের অহঙ্কার প্রকাশ করে থাকে। তাদের ব্যাপারে রাসূল (সা) বলেন, যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত স্বীয় বস্ত্র মাটির ওপর দিয়ে টেনে চলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার দিকে তাকাবেন না। তখন হযরত আবু বকর (রা:) বলেন, আমার লুঙ্গি অসতর্ক অবস্থায় ঢিলা হয়ে পায়ের গিরার নিচে চলে যায়, যদি না আমি তা ভালোভাবে বেঁধে রাখি। অতঃপর রাসূল (সা) বলেন, তুমি তা অহঙ্কারবশত কর না। (বুখারী)
অহঙ্কার আমাদের নেক আমলকে নষ্ট করে দেয়। অহঙ্কার থেকে বাঁচতে আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদ, জ্ঞান যোগ্যতাকে আল্লাহ প্রদত্ত দয়া, রহমত ও নিয়ামত ভেবে তার শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আর যে ব্যক্তি এসব নিয়ামত পাননি তার জন্য মহান রবের দরবারে দু’আ করতে হবে যাতে আল্লাহ তাকেও এ সকল নিয়ামত দান করেন। আর এই মানসিকতা পোষণ করতে হবে, আমি যে ইবাদত বন্দেগি করছি তা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের তুলনায় অতি নগণ্য। কাজেই আমার তৃপ্ত হওয়া বা গর্ব করার কিছুই নেই। আল্লাহ প্রদত্ত এ নিয়ামত যে কোন মুহূর্তে ছিনিয়ে নিতে পারেন, তিনি একজন বাদশাকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ফকিরে পরিণত করতে পারেন। আমাদের সকল নিয়ামত আল্লাহর দান। আর এ নিয়ে গর্ব করার অর্থদানকারীর দানের অবজ্ঞা করা। অতএব আমাদের সর্বদা সাবধান থাকতে হবে যাতে কখনোই সম্পদ, শক্তি, ক্ষমতা, শিক্ষা, সৌন্দর্য, পেশা বা অন্য কোন নিয়ামতের কারণে অহঙ্কার না করি এবং হেয়প্রতিপন্ন না করি।
আল্লাহর পথের দায়ীদের সর্বোত্তম গুণ হলো বিনয় নম্রতা। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। দায়ীর এমন গুণে ইসলামে সৌন্দর্য প্রকাশ হয়। বিপরীতে অহঙ্কার মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয় ,আল্লাহর দ্বীন প্রচারে নিয়োজিত কারো থেকে এটি কাম্য নয়।
লেখক : অধ্যাপক, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

Friday, August 17, 2018

আল্লামা মওদুদী (রহঃ) সম্পর্কে পাকিস্তান তবলীগের মুরব্বী #আল্লামা তারীক জামীল (হাফিঃ)


আল্লামা মওদুদী রহ. আলাদা কোন ফিরকা বানান নাই। পৃ‌থিবীতে মওদুদী আকিদা বল‌তে কিছুই নেই।
পাকিস্তান তাবলীগের শীর্ষ মুরুব্বি ও বিশ্ব বিখ্যাত দ্বীনের দাঈী মাওলানা তারিক জামিল আল্লামা মওদুদী রহ. এর ভূয়সি প্রশংসা করেছেন। তি‌নি ব‌লেন : আল্লামা মওদুদী রহ. আলাদা কোন ফিরকা বানান নাই। তিনি অনেক বড় হানাফী আলেম ছিলেন। তিনি আলাদা কোন ফিকাহ লিখেন নাই। তিনি সেকুলারিজমের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লিখনি চালিয়েছেন ও এভাবে মিল্লাতকে অনেক খেদমত করেছেন।

তিনি বলেন উপমহাদেশের দেওবন্দি আকাবীরদের কিতাব গুলি কঠিন এলমী পরিভাষায় ভরপুর ছিলো। কঠিন মানের উর্দু ছিল ওনাদের লেখাতে। সাধারন মানুষের বোধগম্যের বাইরে ছিল ওনাদের লেখা। তাই দ্বীনি বি‌ভিন্ন গুরত্বপূর্ণ বিষয় সহজ সাবলীল ভাষায় সর্ব সাধারনের বুঝার মত কিতাব লিখে খেদমত করেছেন আল্লামা মওদুদী রহ.।

তিনি হাদীস অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে অনেক দামী খেদমত করেছেন। তাদের কথাসমূহ দলীল দিয়ে খন্ডন করেছেন। তিনি সোশেলিজম ও কমিউনিজম এর বিরুদ্ধে শক্ত হাতে কলম ধরেন যা ইতোপূর্বে তেমন জোড়ালো দেখা যায় নি!

- দেওবন্দী মানহাজের আলেম #আল্লামা_তারীক_জামীল_হাফিঃ
পাকিস্তান দাওয়াত ও তাবলিগের মুরব্বী।।।।।
তাঁর উর্দু বক্তব্য শুনতে নীচে ক্লিক করুন: 

Popular Posts